বগুড়ায় রাত নামলেই গ্যাস সিন্ডিকেটের রাজত্ব, অবৈধ সিলিন্ডার ভরায় ঝুঁকির মুখে হাজারো প্রাণ।

- আপডেট সময়ঃ ০৬:১১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৮ বার পড়া হয়েছে
আব্দুল মোমিন, বগুড়া :
দিনশেষে যখন শহর ঘুমিয়ে পড়ে, তখন বগুড়ার কিছু সিএনজি ফিলিং স্টেশন যেন নতুন করে জেগে ওঠে। তবে এই জাগরণে নেই গ্যাস বিক্রির বৈধতা, নেই নিয়ম বা শৃঙ্খলা—আছে শুধু ‘সিন্ডিকেটের’ দাপট, আর হাজারো জীবনের অনিশ্চয়তা।
রাত ১২টা। বগুড়া শহরের কয়েকটি গ্যাস স্টেশনে তখন কর্মব্যস্ততা তুঙ্গে। খালি কার্গো ট্রাকে করে আসা শত শত সিলিন্ডার একে একে ভরছে চুরি করা গ্যাসে। ফিসফিস করে আদান-প্রদান হচ্ছে হিসাব, নজরদারির ভয়ে নেই সাইনবোর্ড বা লাইট। যেন চলতি পথে কেউ বুঝতেই না পারে—কী ভয়ংকর কিছু ঘটছে এই নীরব স্টেশনে।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, শহরের ‘বগুড়া সিএনজি’, ‘শরীফ সিএনজি লিমিটেড’ এবং শাজাহানপুরের ‘আকিজ গ্যাস স্টেশন’-এ এমন গোপন বাণিজ্য প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ট্রাকভর্তি এই সিলিন্ডারগুলো কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই চালান হয়ে যাচ্ছে শহরের ভেতর, বাজারে, এমনকি আবাসিক এলাকাতেও।
প্রশ্ন উঠছে, এই সিলিন্ডার যদি কোনো দুর্ঘটনায় বিস্ফোরিত হয়? যদি কোনো স্কুল, বাজার বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুন লাগে?
সিএনজি চালক সাইফুল ইসলাম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ভোরে লাইনে দাঁড়াই, ট্যাঙ্ক ফুল দেখায় কিন্তু ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই গ্যাস ফুরিয়ে যায়। কারা যে গ্যাস চুরি করছে, কেউ কিছু বলে না। প্রতিদিন এই চুরি হওয়া গ্যাসের খেসারত দিচ্ছেন হাজার হাজার সিএনজি চালক, যারা দিন শেষে হয়তো তিন-চারশো টাকা আয় করেই বাড়ি ফিরেন। এখন সেই আয়ের একটা বড় অংশ গ্যাসের লাইনে দাঁড়িয়ে নষ্ট হচ্ছে। অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস সিলিন্ডার অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বস্তুরূপে বিবেচিত। অবৈধভাবে ভরা এই সিলিন্ডারগুলো নিয়ম না মানায় এগুলোর মধ্যে উচ্চচাপ ও তাপমাত্রা ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, যা সরাসরি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এই সিন্ডিকেট শুধু গ্যাস চুরি করছে না, পুরো শহরের বুকে মৃত্যুফাঁদ পেতে রাখছে। বগুড়া অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে—তিনি বরাবরই এসব অভিযোগ ‘সাবধানতার’ মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে দায়িত্ব এড়াচ্ছেন। বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মঞ্জিল হক জানালেন,আমরা বিষয়টি শুনিনি। তবে এখন জানলাম, খুব দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, আমরা এই গোপন গ্যাস বাণিজ্যের বিষয়ে অবগত হয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
একদিকে যখন সরকার সিএনজি খাতে শৃঙ্খলা আনতে সচেষ্ট, তখন ভেতরে ভেতরে গড়ে ওঠা এমন ‘গ্যাস সিন্ডিকেট’ সেই প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রয়োজন এখনই কার্যকর পদক্ষেপ, না হলে ভবিষ্যতের চিত্র হতে পারে ভয়াবহ।