বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২০ লাখ টাকা দিলেন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা

- আপডেট সময়ঃ ০৮:৪৯:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ এপ্রিল ২০২৩
- / ১৪৬ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ লাখ টাকা সহায়তা দিলেন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। সারাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর কেউ ঈদুল ফিতরের মার্কেট না করে সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য দিলেন। গত রোববার দুপুর ১২টায় বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া মার্কেটে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার অর্থ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। আজ তাদের এই বিপদের সময়, আমরা আমাদের এবারের ঈদের যেসব কেনাকাটা রয়েছে সেই কেনাকাটা না করে ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সারাদেশ থেকে ২০ লাখ টাকা আমরা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো। গুরুমা রাখি শেখ বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে এক-দুই টাকা করে উঠিয়ে উঠিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমরা সেটা মানবতার কল্যাণেই দিয়ে দেবো। এই টাকা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে দেওয়া হবে না, পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেওয়া হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এই টাকা পৌঁছানো হবে। অনুদান হস্তান্তরকালে ঢাকাসহ আশপাশের প্রায় শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে তাদের সরদারনী আলেয়া হিজড়া হজের জন্য জমানো টাকা থেকে দুই লাখ টাকা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান হিসেবে দেন। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আজ হাতে পাওয়া টাকার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক হলো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ২০ লাখ টাকা দিয়েছে। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করবো তাদের যেনো কখনো অবহেলার চোখে না দেখে। এখন থেকে আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবো
অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এক দিনের বেতন দুই লাখ টাকা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত রোববার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনের হাতে চেক তুলে দেন। এ সময় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের অনুদান এবং অধিদপ্তর কর্তৃক ইফতার আয়োজন বাতিলপূর্বক এ অর্থ দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের।
এদিকে বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য গত রোববার দুপুর ৩টা পর্যন্ত মোট এক কোটি ৯০ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এরমধ্যে এক কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। পুড়ে যাওয়া লোহা ও টিন বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৪০ লাখ টাকা। বাকি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে এসেছে। গত রোববার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা এরইমধ্যে পোড়া লোহা ও টিন বিক্রির ৪০ লাখ টাকা ব্যবসায়ীদের জন্য রেখেছি। সকালে আলেয়া নামে তৃতীয় লিঙ্গের একজন দুই লাখ টাকা দিয়েছেন। কুমিল্লা- ৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার-এর নেতৃত্বে ২৬ লাখ টাকা জমা হয়েছে। নিজেদের একদিনের বেতন ও ইফতার খরচের ২ লাখ টাকার আমাদের হাতে তুলে দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ লাখ টাকা সহায়তা করেছে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। দুপুরে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে ১ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে বঙ্গ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট ও এনেক্সকো টাওয়ার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে এরইমধ্যে এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা।