ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জনের একসঙ্গে জানাজা শেষে দাফন

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:১৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২
  • / ১৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ছয়জনের বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকায় চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের আহাজারিতে কোনাবাড়ির জয়েরটেক এলাকায় এক শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো সান্ত¡নাতেই স্বজনদের আহাজারি থামছে না। আজ শুক্রবার সকালে নিহত রুহুল আমিনের (৪৭) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী আইরিন আক্তার স্বামীর শোকে ঘরের মধ্যে মাতম করছেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার। রুহুল আমিনই ছিলেন সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তনি পেশায় দলিল লেখক হলেও নিজ বাড়িতে গরু লালন-পালন করতেন। প্রতিবেশীদের কোনো সান্ত¡নাই মেনে নিতে পারছেন না আইরিন। পাশাপাশি নিহত হারুন অর রশিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় আরও এক আবেগঘন পরিবেশ। রুহুল আমিন ও হারুন অর রশীদ সম্পর্কে মামাতো-ফুপাতো ভাই। দুর্ঘটনায় তারা দুজনই মারা যান। হারুন অর রশিদের বৃদ্ধ মা প্রিয় সন্তানের জন্য আহাজারি করছেন। বাকরুদ্ধ স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তার দুটি ছেলে ফাহিম (১২) ও মাহিম (৫) ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। বাড়ির পাশে পাশাপাশি দুই ভাইয়ের কবর খোড়া হয়েছে। সেখানেই তাদের দাফন করা হয়। স্বজনরা জানান, মায়ের কাছে দোয়া চাওয়ার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হারুন অর রশীদ। মা হাসনা বেগম জানান, দুপুরে দুর্ঘটনার পর বিকেল ৪টার দিকে তার ছেলে হাসপাতাল থেকে ফোনে বলেন, ‘মা, আমি আগের চেয়ে ভালো আছি, আমার জন্য দোয়া করো। আমার ছোট ছোট সন্তান দুটিকে দেখে রেখো।’ এ সময় তার স্ত্রী শান্তা ইসলামকেও দোয়া করতে বলেন হারুন। এর কিছুক্ষণ পর তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান মা হাসনা বেগম। নিহত জালাল উদ্দিন ঠান্ডুর (৬০) বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, শতবর্ষী মা করদজান, স্ত্রী রোকেয়া বেগম, সন্তান ও বোনেরা বিলাপ করছেন। তাদের নানাভাবে সান্ত¡না দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। স্বামীহারা রোকেয়া বেগম জানান, তার স্বামীর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে কথা হয়। তখন তারা পদ্মা সেতুর কাছাকাছি ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পান তার মেয়ের মাধ্যমে। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত ছয়জনের জানাজা শেষে তাদের পরিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকায় একটি খোলা মাঠে নিহত ছয়জনের লাশ পাশাপাশি রেখে একই স্থানে দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্ল্যাহ মন্ডল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম, সরকারের সাবেক সচিব ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এমএম নিয়াজ উদ্দিন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক শওকত হোসেন সরকার, সুরুজ আহমেদ, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ শরিক হন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার নতুন শিকারপুর সংলগ্ন মহাসড়ক অতিক্রম করার সময় মাইক্রোবাসের একটি চাকা পাংচার হয়ে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢাকামুখী দ্রুতগামী মোল্লা পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। একই এলাকার ৯ জন পদ্মা সেতু দেখে কুয়াকাটা যাচ্ছিলেন। পরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাতেই নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে লাশ গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের একনজর দেখার জন্য এলাকার হাজার হাজার লোক ভিড় করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন জয়েরটেক এলাকার জালাল উদ্দিন ঠান্ডু (৬০), আহাকি গ্রামে তমিজ উদ্দিনের ছেলে মো. হাসান (৩৮), জয়েরটেক এলাকার আবদুর রহমান (৩৫), পূর্ব কলাপাড়া এলাকার রুহুল আমিন (৫৫), হারুন অর রশীদ (৪০) ও শহিদুল ইসলাম (৪০)।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জনের একসঙ্গে জানাজা শেষে দাফন

আপডেট সময়ঃ ০৮:১৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ছয়জনের বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকায় চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের আহাজারিতে কোনাবাড়ির জয়েরটেক এলাকায় এক শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো সান্ত¡নাতেই স্বজনদের আহাজারি থামছে না। আজ শুক্রবার সকালে নিহত রুহুল আমিনের (৪৭) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী আইরিন আক্তার স্বামীর শোকে ঘরের মধ্যে মাতম করছেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার। রুহুল আমিনই ছিলেন সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তনি পেশায় দলিল লেখক হলেও নিজ বাড়িতে গরু লালন-পালন করতেন। প্রতিবেশীদের কোনো সান্ত¡নাই মেনে নিতে পারছেন না আইরিন। পাশাপাশি নিহত হারুন অর রশিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় আরও এক আবেগঘন পরিবেশ। রুহুল আমিন ও হারুন অর রশীদ সম্পর্কে মামাতো-ফুপাতো ভাই। দুর্ঘটনায় তারা দুজনই মারা যান। হারুন অর রশিদের বৃদ্ধ মা প্রিয় সন্তানের জন্য আহাজারি করছেন। বাকরুদ্ধ স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তার দুটি ছেলে ফাহিম (১২) ও মাহিম (৫) ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। বাড়ির পাশে পাশাপাশি দুই ভাইয়ের কবর খোড়া হয়েছে। সেখানেই তাদের দাফন করা হয়। স্বজনরা জানান, মায়ের কাছে দোয়া চাওয়ার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হারুন অর রশীদ। মা হাসনা বেগম জানান, দুপুরে দুর্ঘটনার পর বিকেল ৪টার দিকে তার ছেলে হাসপাতাল থেকে ফোনে বলেন, ‘মা, আমি আগের চেয়ে ভালো আছি, আমার জন্য দোয়া করো। আমার ছোট ছোট সন্তান দুটিকে দেখে রেখো।’ এ সময় তার স্ত্রী শান্তা ইসলামকেও দোয়া করতে বলেন হারুন। এর কিছুক্ষণ পর তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান মা হাসনা বেগম। নিহত জালাল উদ্দিন ঠান্ডুর (৬০) বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, শতবর্ষী মা করদজান, স্ত্রী রোকেয়া বেগম, সন্তান ও বোনেরা বিলাপ করছেন। তাদের নানাভাবে সান্ত¡না দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। স্বামীহারা রোকেয়া বেগম জানান, তার স্বামীর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে কথা হয়। তখন তারা পদ্মা সেতুর কাছাকাছি ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পান তার মেয়ের মাধ্যমে। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত ছয়জনের জানাজা শেষে তাদের পরিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকায় একটি খোলা মাঠে নিহত ছয়জনের লাশ পাশাপাশি রেখে একই স্থানে দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্ল্যাহ মন্ডল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম, সরকারের সাবেক সচিব ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এমএম নিয়াজ উদ্দিন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক শওকত হোসেন সরকার, সুরুজ আহমেদ, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ শরিক হন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার নতুন শিকারপুর সংলগ্ন মহাসড়ক অতিক্রম করার সময় মাইক্রোবাসের একটি চাকা পাংচার হয়ে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢাকামুখী দ্রুতগামী মোল্লা পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। একই এলাকার ৯ জন পদ্মা সেতু দেখে কুয়াকাটা যাচ্ছিলেন। পরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাতেই নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে লাশ গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের একনজর দেখার জন্য এলাকার হাজার হাজার লোক ভিড় করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন জয়েরটেক এলাকার জালাল উদ্দিন ঠান্ডু (৬০), আহাকি গ্রামে তমিজ উদ্দিনের ছেলে মো. হাসান (৩৮), জয়েরটেক এলাকার আবদুর রহমান (৩৫), পূর্ব কলাপাড়া এলাকার রুহুল আমিন (৫৫), হারুন অর রশীদ (৪০) ও শহিদুল ইসলাম (৪০)।