০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

বাংলাদেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বকে বদলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ… বাংলাদেশ তা সম্ভব করেও তুলছে, আজ বুধবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন। এ শীর্ষ সম্মেলনের সার্বিক আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। স্পেন থেকে অস্কার গার্সিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রোজি উইন্টারটন এবং বাংলাদেশ থেকে নাসিম মঞ্জুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। ৭ এপ্রিল শুরু হওয়া চার দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, জুলাই বিপ্লবের পর সংঘটিত অর্থনৈতিক সংস্কারকে তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরির লক্ষ্যে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিনিয়োগকারী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকগণ। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের বিবরণ তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনি যে দেশেই বসবাস করেন না কেন, আপনার ভেতর ছোট একটি ১৯৭৪ বসবাস করে। আপনারা সেটা (অভাব) দেখতে চান না, লুকিয়ে রাখেন মানুষকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে। আমি সবসময় বলে আসছি, জনগণের অর্থ গরীব মানুষকে দেওয়ার মধ্যে কোনও সমাধান নেই। সমাধান আছে অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে, মানুষের শক্তিকে বের করে নিয়ে আসার মধ্যে। ক্ষুদ্র ঋণ একটি সামান্য উদ্যোগ। একটা উন্মত্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হলো সরকারের টেলিফোনের লাইসেন্স ইস্যু করার মাধ্যমে। আমাদের টেলিফোনের প্রয়োজন ছিল না। বেশিরভাগই কাজ করে না। টেলিফোন কোম্পানির জন্য লাইসেন্স লাগবে কেন তাহলে? সরকার জিজ্ঞেস করে টেলিফোন কোম্পানি দিয়ে কী করবেন। আমি বললাম যে গরীব নারীদেরকে দিবো। আমরা লাইসেন্স পেলাম। গ্রামীণ ব্যাংকের পর গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠিত হলো। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের জ্ঞান না থাকায় কেউ অংশীদার হতে চাইতো না। কারণ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের কোনও জায়গা ছিল না, কোনও বাজার ছিল না। তাই আমরা অনেক আন্তর্জাতিক দুয়ারে ঠকঠক করলাম। কেউ সাড়া দিল না। অবশেষে আমি ব্যক্তিগতভাবে নরওয়ের একজনকে চিনতাম যিনি টেলিনরের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি তাকে বোঝালাম এবং সাহায্য চাইলাম। আমি বোঝালাম যে কেন বাজারে মোবাইল ফোন আনতে চাই এবং নারীদের দিতে চাই। উনি গুরুত্ব সহকারে নিলেন কিন্তু তার কোম্পানির বোর্ড তার সঙ্গে রাজি হলো না। তারা বাংলাদেশকে কোনোভাবেই চিনতে পারলো না, নাম কখন শুনেনি নাকি। যতবারই টেলিনরের বোর্ড প্রত্যাখ্যান করে তিনি বারবার সেটা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেন। অবশেষে তিনি রাজি করাতে পারেন। তখনকার সমীক্ষা বলে, ২ লাখ মোবাইল গ্রাহক পাওয়া যাবে। আমি বললাম— কী বলেন! এর চেয়ে ১০ গুণ পাওয়া যাবে। এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি। শুরুর দিকে শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের গরীব নারীরা ফোন নিতে পারতো উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ফোন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তারা জানতো না। আমরা প্রশিক্ষণ দিলাম। শিগগিরই লাখ খানেক নারী সারা দেশে ফোন সেবা দেওয়া শুরু করলো। এটি এতটাই জনপ্রিয় হলো যে সবাই ফোন নেওয়া শুরু করলো। পুরো কোম্পানির সার্বিক চিত্র পাল্টে দিলো। ঠিক তখন অন্যান্য দেশে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করলো, তাদের ফোকাস ছিল শহরগুলো। সংবাদপত্রে আমাদের খবর তুলে ধরা হলো, তাদের না। তখন থেকেই বিশ্ব জানল গ্রামে কীভাবে মোবাইল ফোন গেলো। টেলিফোন শিল্প বৈশ্বিকভাবে পাল্টে গেলো। এগুলো বলার কারণ হচ্ছে- পৃথিবীকে বদলাতে উন্মত্ত বুদ্ধিতে বাংলাদেশ ভরপুর।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখায়ব পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা: ফারুকী

বাংলাদেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

আপডেট সময়ঃ ০৮:২৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বকে বদলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ… বাংলাদেশ তা সম্ভব করেও তুলছে, আজ বুধবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন। এ শীর্ষ সম্মেলনের সার্বিক আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। স্পেন থেকে অস্কার গার্সিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রোজি উইন্টারটন এবং বাংলাদেশ থেকে নাসিম মঞ্জুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। ৭ এপ্রিল শুরু হওয়া চার দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, জুলাই বিপ্লবের পর সংঘটিত অর্থনৈতিক সংস্কারকে তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরির লক্ষ্যে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিনিয়োগকারী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকগণ। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের বিবরণ তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনি যে দেশেই বসবাস করেন না কেন, আপনার ভেতর ছোট একটি ১৯৭৪ বসবাস করে। আপনারা সেটা (অভাব) দেখতে চান না, লুকিয়ে রাখেন মানুষকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে। আমি সবসময় বলে আসছি, জনগণের অর্থ গরীব মানুষকে দেওয়ার মধ্যে কোনও সমাধান নেই। সমাধান আছে অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে, মানুষের শক্তিকে বের করে নিয়ে আসার মধ্যে। ক্ষুদ্র ঋণ একটি সামান্য উদ্যোগ। একটা উন্মত্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হলো সরকারের টেলিফোনের লাইসেন্স ইস্যু করার মাধ্যমে। আমাদের টেলিফোনের প্রয়োজন ছিল না। বেশিরভাগই কাজ করে না। টেলিফোন কোম্পানির জন্য লাইসেন্স লাগবে কেন তাহলে? সরকার জিজ্ঞেস করে টেলিফোন কোম্পানি দিয়ে কী করবেন। আমি বললাম যে গরীব নারীদেরকে দিবো। আমরা লাইসেন্স পেলাম। গ্রামীণ ব্যাংকের পর গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠিত হলো। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের জ্ঞান না থাকায় কেউ অংশীদার হতে চাইতো না। কারণ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের কোনও জায়গা ছিল না, কোনও বাজার ছিল না। তাই আমরা অনেক আন্তর্জাতিক দুয়ারে ঠকঠক করলাম। কেউ সাড়া দিল না। অবশেষে আমি ব্যক্তিগতভাবে নরওয়ের একজনকে চিনতাম যিনি টেলিনরের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি তাকে বোঝালাম এবং সাহায্য চাইলাম। আমি বোঝালাম যে কেন বাজারে মোবাইল ফোন আনতে চাই এবং নারীদের দিতে চাই। উনি গুরুত্ব সহকারে নিলেন কিন্তু তার কোম্পানির বোর্ড তার সঙ্গে রাজি হলো না। তারা বাংলাদেশকে কোনোভাবেই চিনতে পারলো না, নাম কখন শুনেনি নাকি। যতবারই টেলিনরের বোর্ড প্রত্যাখ্যান করে তিনি বারবার সেটা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেন। অবশেষে তিনি রাজি করাতে পারেন। তখনকার সমীক্ষা বলে, ২ লাখ মোবাইল গ্রাহক পাওয়া যাবে। আমি বললাম— কী বলেন! এর চেয়ে ১০ গুণ পাওয়া যাবে। এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি। শুরুর দিকে শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের গরীব নারীরা ফোন নিতে পারতো উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ফোন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তারা জানতো না। আমরা প্রশিক্ষণ দিলাম। শিগগিরই লাখ খানেক নারী সারা দেশে ফোন সেবা দেওয়া শুরু করলো। এটি এতটাই জনপ্রিয় হলো যে সবাই ফোন নেওয়া শুরু করলো। পুরো কোম্পানির সার্বিক চিত্র পাল্টে দিলো। ঠিক তখন অন্যান্য দেশে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করলো, তাদের ফোকাস ছিল শহরগুলো। সংবাদপত্রে আমাদের খবর তুলে ধরা হলো, তাদের না। তখন থেকেই বিশ্ব জানল গ্রামে কীভাবে মোবাইল ফোন গেলো। টেলিফোন শিল্প বৈশ্বিকভাবে পাল্টে গেলো। এগুলো বলার কারণ হচ্ছে- পৃথিবীকে বদলাতে উন্মত্ত বুদ্ধিতে বাংলাদেশ ভরপুর।