হেডম্যান-কারবারী একসাথে চলি, প্রথা রীতিনীতি সংরক্ষণে এক থাকি”এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে বান্দরবানে অনুষ্ঠিত হলো হেডম্যান কারবারি সম্মেলন।
পার্বত্য অঞ্চলের ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতি স্বত্বার নিজেদের প্রথাগত রীতিনীতি, শিক্ষা সচেতনতা, স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ, আইন সহ বিভিন্ন জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও সংশোধনই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
১৩ই মে রোজ শনিবার সকালে সম্মেলন উপলক্ষে জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটরিয়াম রুমে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
হেডম্যান-কারবারী কল্যাণ পরিষদ, বোমাং সার্কেল ও সি,এইচ,টি হেডম্যান নেটওয়ার্ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম এর আয়োজনে এবং এ,এল,আর,ডি’ বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এম,পি।
সমাবেশের উদ্বোধন করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম, পিপিএম,সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর সভাপতি কংজরী চৌধুরী, এ.এল.আর.ডি এর নির্বাহী পরিচালক সামশুল হুদা, রাজ পরিবারের জৈষ্ঠ সদস্য রাজকুমার চহ্লা প্রু জিমি, চাকমা সার্কেল-হেডম্যান এসোসিয়েশন এর সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, মং সার্কেল-হেডম্যান এসোসিয়েশন সভাপতি উজ্জাব চাই থোয়াই চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হ্লা থোয়াই হ্রী।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ-আলম,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস, বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হক।
উদ্বোধকের বক্তব্যে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত নিয়ম ও জাতীয়ভাবে আইন সংশোধনের প্রয়োজন আছে।
আইন সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতির মধ্যে যে সকল কুসংস্কার প্রথা আমরা পালন করছি তা থেকে সরে আসতে হবে।
এর মাধ্যমে হেডম্যান-কারবারিরা সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর সভাপতি কংজরী চৌধুরী।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন পার্বত্য অঞ্চলের জনমানুষের উন্নয়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
শান্তিচুক্তির পর প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার কারনে পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় যেমন আধুনিকতার ছোয়ায় জনমানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে তেমনি পরিবর্তন এসেছে অর্থনীতিতে।
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১১টি সম্প্রদায়ের জনসাধারণে সামাজিক আইন ও রীতিনীতি মেনে পরিচালিত হয়ে আসছে।
পাহাড়ি এলাকায় সমাজে আইন প্রতিপালনে পার্বত্য অঞ্চলের মৌজা হেডম্যানদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জনসাধারণের নাগরিক সুবিধা সহ সামাজিক সম্প্রিতির জন্য কোন আইন যদি সংশোধনের প্রয়োজন হয় তাহলে তা হেডম্যান-কারবারিদের সমন্বয়ে কর্মশালার আয়োজন করে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
১১ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্ম, সাংস্কৃতি,ঐতিহ্য কে প্রাধান্য দিয়ে আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব রাখরো ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান প্রধান অতিথি।
এছাড়াও আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা,বান্দরবান জেলা ৭টি উপজেলার ৯৬টি মৌজার হেডম্যান ও ১৪৮২ পাড়ার পাড়া কারবারি প্রতিনিধি,প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।