ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

বান্দরবানে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে শুরু হল বিজু’র মূল উৎসব

মোঃ জুয়েল হোসাইন, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩
  • / ১৮৪ বার পড়া হয়েছে

পুরনো বছরের সমস্ত দুঃখ ভুলে গিয়ে নতুন বছরে সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনায় জলদেবতার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের বিজু’র মূল আনুষ্ঠানিকতা।

 

আজ সকাল ৭টায় বান্দরবান সাঙ্গু নদী ঘাটে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের প্রকৃতি চাকমা,তংচংগ্যাদের ফুল ভাসিয়ে এ উৎসবের সূচনা করেন। এসময় প্রকৃতি চাকমাও তংচংগ্যারা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে আমরা সাধারণত বাংলা নববর্ষ বরণ করা এবং পুরাতন বছরকে বিদায় দেয়া উপলক্ষে মূলত ফুল বিজু উদযাপন করে থাকি।

 

এ উপলক্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, সংগঠন তারা সমবেত হয়ে ছড়া বা নদীতে ফুল নিবেদন করেন। আমরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিহারে সংঘদান, পিন্ড দানসহ পঞ্চশীল গ্রহণ করে থাকি। ফুল ভাসানোর মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর সবার মঙ্গল বয়ে আনুক এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা,মারমা, তঞ্চঙ্গা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বিষু, বৈসুক। এ উৎসব প্রতিটি সম্প্রদায়ের কাছে আলাদা নামে পরিচিত।

 

ত্রিপুরাদের বৈসুক থেকে ‘বৈ’, মারমাদের সাংগ্রাই থেকে ‘সা’, আর চাকমাদের বিজু থেকে ‘বি’, এককথায় ‘বৈ-সা-বি’ নামে বেশি পরিচিত। চৈত্র মাসের শেষ দুদিন এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিনসহ মোট তিন দিন বিজু উৎসব উদযাপন করা হয়। ১২ এপ্রিল ফুল বিজু, ১৩ এপ্রিল মূল বিজু আর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখকে বলা হয় গোজ্যেপোজ্যে দিন।

 

ফুল বিজুর দিনে চাকমা, তঞ্চঙ্গারা নদীতে ফুল ভাসানোর পর হরেক রকম ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হয়। এরপর বৃদ্ধ ব্যক্তিদের স্নান করিয়ে দেয়া হয়।

 

মূল বিজুর দিনে কেউ কোনো কাজ করে না। ঐতিহ্যবাহী পাজনসহ বিভিন্ন খাবার রান্না করা হয়। একে-অপরের ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। গোজ্যেপোজ্যে দিন সবাই বিহারে গিয়ে সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন। ত্রিপুরারা গরিয়া দেবতার পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পাড়ায় পাড়ায় গরিয়াদের আগমনে ত্রিপুরা পল্লীগুলোতে চলে বৈসুর আমেজ।

 

পিনন-খাদি ও ধুতি পড়ে ঢোল আরবাঁশি বাজিয়ে নানা মুদ্রায় নৃত্য করে গরিয়া দেবতার প্রার্থনা করা হয়। ত্রিপুরাদের বিশ্বাস গরিয়া দেবতার পূজা করলে শহরের,গ্রামে শান্তি-সম্প্রীতি এবং আয় উন্নতি বৃদ্ধি পাবে।

 

মারমাদের জলকেলী উৎসবে তরুণ-তরুণীরা মৈত্রী পানি ছিটিয়ে একে অপরের মঙ্গল কামনা করে। এদিকে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার আয়োজনে বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১৬ এপ্রিল পানি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক পাহাড়ের মানুষগুলোর জীবন। বয়ে আনুক অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি এমনটাই প্রত্যাশা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বান্দরবানে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে শুরু হল বিজু’র মূল উৎসব

আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩

পুরনো বছরের সমস্ত দুঃখ ভুলে গিয়ে নতুন বছরে সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনায় জলদেবতার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের বিজু’র মূল আনুষ্ঠানিকতা।

 

আজ সকাল ৭টায় বান্দরবান সাঙ্গু নদী ঘাটে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের প্রকৃতি চাকমা,তংচংগ্যাদের ফুল ভাসিয়ে এ উৎসবের সূচনা করেন। এসময় প্রকৃতি চাকমাও তংচংগ্যারা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে আমরা সাধারণত বাংলা নববর্ষ বরণ করা এবং পুরাতন বছরকে বিদায় দেয়া উপলক্ষে মূলত ফুল বিজু উদযাপন করে থাকি।

 

এ উপলক্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, সংগঠন তারা সমবেত হয়ে ছড়া বা নদীতে ফুল নিবেদন করেন। আমরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিহারে সংঘদান, পিন্ড দানসহ পঞ্চশীল গ্রহণ করে থাকি। ফুল ভাসানোর মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর সবার মঙ্গল বয়ে আনুক এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা,মারমা, তঞ্চঙ্গা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বিষু, বৈসুক। এ উৎসব প্রতিটি সম্প্রদায়ের কাছে আলাদা নামে পরিচিত।

 

ত্রিপুরাদের বৈসুক থেকে ‘বৈ’, মারমাদের সাংগ্রাই থেকে ‘সা’, আর চাকমাদের বিজু থেকে ‘বি’, এককথায় ‘বৈ-সা-বি’ নামে বেশি পরিচিত। চৈত্র মাসের শেষ দুদিন এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিনসহ মোট তিন দিন বিজু উৎসব উদযাপন করা হয়। ১২ এপ্রিল ফুল বিজু, ১৩ এপ্রিল মূল বিজু আর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখকে বলা হয় গোজ্যেপোজ্যে দিন।

 

ফুল বিজুর দিনে চাকমা, তঞ্চঙ্গারা নদীতে ফুল ভাসানোর পর হরেক রকম ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হয়। এরপর বৃদ্ধ ব্যক্তিদের স্নান করিয়ে দেয়া হয়।

 

মূল বিজুর দিনে কেউ কোনো কাজ করে না। ঐতিহ্যবাহী পাজনসহ বিভিন্ন খাবার রান্না করা হয়। একে-অপরের ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। গোজ্যেপোজ্যে দিন সবাই বিহারে গিয়ে সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন। ত্রিপুরারা গরিয়া দেবতার পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পাড়ায় পাড়ায় গরিয়াদের আগমনে ত্রিপুরা পল্লীগুলোতে চলে বৈসুর আমেজ।

 

পিনন-খাদি ও ধুতি পড়ে ঢোল আরবাঁশি বাজিয়ে নানা মুদ্রায় নৃত্য করে গরিয়া দেবতার প্রার্থনা করা হয়। ত্রিপুরাদের বিশ্বাস গরিয়া দেবতার পূজা করলে শহরের,গ্রামে শান্তি-সম্প্রীতি এবং আয় উন্নতি বৃদ্ধি পাবে।

 

মারমাদের জলকেলী উৎসবে তরুণ-তরুণীরা মৈত্রী পানি ছিটিয়ে একে অপরের মঙ্গল কামনা করে। এদিকে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার আয়োজনে বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১৬ এপ্রিল পানি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক পাহাড়ের মানুষগুলোর জীবন। বয়ে আনুক অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি এমনটাই প্রত্যাশা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের।