০৭:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি টাকার প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। বিদেশে পাঠানোর কথা বলে সে মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার কাছ থেকে পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবুল কালাম (৪১) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া এলাকায়। সে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। মানুষকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা ও বিএমইটি কার্ড দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতো সে। তার কাছ থেকে মানুষের ১৪টি পাসপোর্ট, নকল বিএমইটি কার্ড ৬টি, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয় হয়েছে।’ র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য সে। তার জনশক্তি রফতানির কোনও লাইসেন্স নেই। কিন্তু সে দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রফতানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বিভিন্ন বয়সী মানুষ পাঠিয়ে আসছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক ও নারীদের কাছ থেকে ৫ হতে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতো। এরপর সে ভূয়া ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ড ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিতো। ভুক্তভোগীরা নকল ভিসা এবং নকল বিএমইটিকার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে আসামি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গত ৩ বছরে সে অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৫-৭ লাখ টাকা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। তিনি জানান, আবুল কালাম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করে। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসে। তারপর সে তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল হতে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ এবং প্রতারণা শুরু করে। সে প্রথমে ভিকটিমদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। তারপর ভিসা, টিকিট, মেডিক্যাল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, একপর্যায়ে ভিকটিমের আস্থা অর্জনের জন্য দুই-একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠায় এবং ভিকটিমদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। নিবন্ধন বিএমইটি কার্ড পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু ভিকটিমরা তাদের অজ্ঞতার কারণে ওই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করে। তারপর ভিকটিমদের ভূয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে। এভাবে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মৎস্য নিধন প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট অভিযান

বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি টাকার প্রতারণা

আপডেট সময়ঃ ০৮:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। বিদেশে পাঠানোর কথা বলে সে মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার কাছ থেকে পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবুল কালাম (৪১) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া এলাকায়। সে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। মানুষকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা ও বিএমইটি কার্ড দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতো সে। তার কাছ থেকে মানুষের ১৪টি পাসপোর্ট, নকল বিএমইটি কার্ড ৬টি, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয় হয়েছে।’ র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য সে। তার জনশক্তি রফতানির কোনও লাইসেন্স নেই। কিন্তু সে দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রফতানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বিভিন্ন বয়সী মানুষ পাঠিয়ে আসছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক ও নারীদের কাছ থেকে ৫ হতে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতো। এরপর সে ভূয়া ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ড ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিতো। ভুক্তভোগীরা নকল ভিসা এবং নকল বিএমইটিকার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে আসামি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গত ৩ বছরে সে অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৫-৭ লাখ টাকা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। তিনি জানান, আবুল কালাম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করে। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসে। তারপর সে তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল হতে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ এবং প্রতারণা শুরু করে। সে প্রথমে ভিকটিমদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। তারপর ভিসা, টিকিট, মেডিক্যাল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, একপর্যায়ে ভিকটিমের আস্থা অর্জনের জন্য দুই-একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠায় এবং ভিকটিমদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। নিবন্ধন বিএমইটি কার্ড পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু ভিকটিমরা তাদের অজ্ঞতার কারণে ওই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করে। তারপর ভিকটিমদের ভূয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে। এভাবে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে।