নওগাঁ প্রতিনিধি :
তিন বছর ধরে সমিতির অফিস নেই, কর্মকর্তারা নেউ কেউ, নেই কোন কার্যক্রম। তারপরেও অডিট হচ্ছে নিয়মিত। সরকারী ঘরে সমিতির কার্যক্রম চালু আছে স্বাভাবিক নিয়মে। গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ওরা। মামলাও হয়েছে কোর্টে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী অফিস বলছে তাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই। বিষয়টি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের ‘স্বপ্ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি’ নামে স্থানীয় এক হায় হায় কোম্পানীর। ৪০ জন সদস্য কষ্টে সঞ্চয় করা মোটা অংকের টাকা হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, উপজেলা সমবায় দপ্তর থেকে ২০১৫ সালে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে ওই সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সার্জেন্ট মো: আফতাব (অব:) ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগম চড়া সুদ দেয়ার লোভ দেখিয়ে এলাকার চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। তারা এফডিআর ও ইআইপি নামে দুটি মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পে প্রতি লক্ষ টাকা আমানতের বিপরীতে প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাত্র ৬ মাসে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এরপরই তাদের অফিস উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ডে সরিয়ে নেয়া হয়। গ্রাহকরা সেখানে যোগাযোগ করা শুরু করলে নানা অযুহাত দেখিয়ে মুনাফা দেয়া বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে গ্রাহকরা তাদের সঞ্চয় ফেরৎ নেয়া শুরু করেন। কিন্তু প্রায় ৪০ জনের কোটি টাকার বেশি আমানত আত্মসাৎ করে তারা অফিস বন্ধ রেখে পালিয়ে যায়। এনিয়ে উপজেলার বিভিন্ন প্রভাবশালীর কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। কয়েকজন গ্রহককে দেয়া হয় চেক। কিন্তু একাউন্টে টাকা না থাকায় সেসব চেক ডিসঅনার হয়। কেউ কেউ এনিয়ে আদালতে মামলাও দায়ের করেন। সঞ্চয় পাওনাদারদের মধ্যে সুহেল রানা নামে একজনেরই আছে ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বড় অংকের পাওনাদারদের মধ্যে কে, এম, হাবিবুর রহমানের ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বজলুর রশিদ রাজুর ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, রায়হান আলমের ৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা, শাহীনা বেগমের ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা, নুর নবী চৌধুরীর ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা, বাচ্চু মিঞার ৫ লাখ টাকা, দুলাল হোসেনের ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রেজাউন্নবী বিজনের ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সামসুল আলমের ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, রোখসানা পারভীনের ৩ লাখ টাকা, শফিউল আলমের ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা রয়েছে। গ্রাহক সুহেল রানা ও আবদুর রাজ্জাক জানান, ইতোমধ্যেই তারা যথাক্রমে ২০ লাখ ও ৩ লাখ টাকার চেক ডিসঅনারের মামলা দায়ের করেছেন। ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও চেক ইস্যু করায় রোখসানা বেগমের নামে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে।
জানতে চাইলে মোবাইলফোনে অভিযুক্ত সার্জেন্ট মো: আফতাব (অব:) জানান, সমিতির কাজে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা রয়েছেন। গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ধীরে ধীরে ফেরৎ দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হীরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, কাগজে কলমে ওই সমিতি এখনও চালু আছে। গত অর্থবছরেও তার অডিট সম্পন্ন হয়। তবে সমিতির শেয়ার হোল্ডার ছাড়া কারও কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা যাবে না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিলন জানান, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (দুলাল)
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ৫১/৫২ অতিশ দীপঙ্কর রোড, ২য় তলা, (মুগদা বিশ্ব রোড) ঢাকা - ১২১৪।
প্রাকাশিত কার্যালয়ঃ ৬০ নং দক্ষিন মুগদা পাড়া, ঢাকা - ১২১৪
মোবাইলঃ ০১৮১৯২৩১৪৮৮, ই-মেইলঃ ainbartabd@gmail.com
Copyright © 2024 দৈনিক আইন বার্তা. All rights reserved.