মাদক কারবারে বাধা, হত্যার পর চোখ উপড়ে ফেলা হয় ব্যবসায়ীর

- আপডেট সময়ঃ ০৮:০৩:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০২৩
- / ১৯২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মাদক কারবারিতে জড়িত থাকার দায়ে ২৮ জুন গ্রেপ্তার হন রাজন। এ গ্রেপ্তারের পেছনে ব্যবসায়ী সাইফুলের হাত রয়েছে ধারণা তার। এ কারণে জেল থেকে বেরিয়েই সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। এদিকে সাইফুল সম্প্রতি পাশ্চাত্যের একটি দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এজন্য তাড়াহুড়া করে রাজনের নেতৃত্বে জানে আলম, সুমন, লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীবসহ ১০ থেকে ১২ জন সাইফুলকে পিটিয়ে হত্যা করেন। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যাকা-ের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী রাজনসহ সাতজনকে গত সোমবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে আটকের পর এসব তথ্য জানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব জানায়, গত ৩০ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় খেজুরবাগ স্কুল রোডে পৌঁছালে সাইফুলের পথরোধ করে ভিকটিম সাইফুলকে ক্রিকেট ব্যাট, লোহার রড ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে গেলে রাজন পাশের একটি দোকান থেকে চামচ নিয়ে এসে সাইফুলের চোখ উপড়ে ফেলেন। সাইফুলের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা সাইফুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ৩০ জুলাই রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় সাইফুল নামে এক পোশাক ব্যবসায়ীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং চোখ উপড়ে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত সাইফুলের বড় বোন বাদী হয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকা-ে জড়িতদের আটক করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাইফুল হত্যাকা-ের মূলপরিকল্পনাকারী রাজনসহ সাতজনকে আটক করে। আটক অন্যরা হলেন- জানে আলম (৩৬), মো. সুমন ওরফে গর্দা সুমন (২৫), লিটন হোসেন (২৬), মো. দিপু (২৩), সরোয়ার আকন্দ (২৬), ও মো. সজীব (২৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত সূচালো লোহার রড, একটি ভাঙা ক্রিকেট ব্যাট, একটি ব্যাটন ও ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। আটকদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, সাইফুল দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন এবং সাতপাখি রোডে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। আটক আসামিরা রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন। সাইফুল ছিলেন এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সহায়তা করতেন। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও অন্যান্যরা সাইফুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজন গত ২৮ জুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি ধারণা করেন যে, তার এ গ্রেপ্তারের পেছনে সাইফুলের হাত রয়েছে। এছাড়াও আটক জানে আলম এবং সুমন ও তার মা ইতঃপূর্বে বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পেছনেও সাইফুলের হাত রয়েছে বলে তারা ধারণা করেন। আটক রাজন গত ১৯ জুলাই মুক্তি পেয়ে জানে আলম, সুমন ও অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে সাইফুলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে গত ৩০ জুলাই রাতে সাইফুলকে হত্যা করে পালিয়ে যান। র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আটকরা হত্যাকা-ের পর এলাকা থেকে পালিয়ে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। আটকরা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অর্থের বিনিময়ে সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- করতেন বলে জানা যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজন স্থানীয় একটি রিকশা গ্যারেজ পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত। রাজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ অধিক মামলা রয়েছে।