০৭:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

যাত্রীবেসে উঠে গাড়ির কাগজপত্র চুরি, চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক :
যাত্রীবেসে বাসে উঠে অভিনব কায়দায় ব্লু-বুক, রেজিস্ট্রেশন সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি করতো একটি চক্র। এরপর তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতো। টাকা না দিলে চালকদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হতো। এমনকি কাগজপত্র আটকে রেখে বাসের মালিকদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা নিতো তারা। গত শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এমন একটি চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তাররা হলেন- রাকিব মিয়া ওরফে তুফান (২৭), মো. শুকুর আলী (২৮), মো. হৃদয় হোসেন (২১) ও মো. শামিম (২৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি কাজে ব্যবহৃত সিমসহ দুটি মোবাইল সেট, বিভিন্ন বাসের চোরাই রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেনের মূল কপি জব্দ করা হয়। গত রোববার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে ঢাকা শহরে চলাচলরত মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন ও রবরব পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসে যাত্রীবেসে উঠে এবং অভিনব কায়দায় বাসের ব্লু-বুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে। পরে তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের নম্বর সংগ্রহ করে চোরাই করা প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। বাস মালিকরা প্রথমদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও চালকদের প্রাণনাশের হুমকি দিতেন চক্রের সদস্যরা। কাগজপত্রবিহীন অবস্থায় রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাস মালিকরা চক্রের দেওয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলে চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে চুরি করা প্রতি গাড়ির কাগজের জন্য ৫/৭ হাজার টাকা তাদের দেওয়া বিভিন্ন বিকাশের মাধ্যমে দিতে হতো। চক্রটি টাকা পেয়ে কিছু গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেয় এবং কিছু কাগজপত্র আটকে রাখে। অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, আটকে রাখা গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহন বাসের মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করা হতো। অন্যান্য মালিকরা মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চক্রের মূলহোতা তুফান নাম পরিচয় দিয়ে মালিকদের হুমকি দিত- ‘আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিকেরা মাসিক চাঁদা দেয়, কোনো পরিবহনের মালিক মাসিক চাঁদা না দিলে আমি ওইসব গাড়ির কাগজ চুরি করেই যাব, ঢাকা শহরের কোনো পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না।’ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ির মালিকরা রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফল না পাওয়ায় বাসের মালিকরা বিষয়টি সিআইডি পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর সিআইডি, ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি টিম তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে তুফান পরিচয়দানকারী মূলহোতা রাকিব মিয়া ওরফে তুফান ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করে তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের পরিচয় গোপন করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে এবং ওই মোবাইল দিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, গাড়ির কাগজপত্র হারানো কিংবা চুরির বিষয়টি বাস মালিকদের কাছে ছোটোখাটো বিষয় মনে হয়েছে। এ কারণে তারা প্রথমে মামলা কিংবা কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি। পরে যখন তারা মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিয়েছে তখন তারা সিআইডির কাছে শরণাপন্ন হয়েছেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মৎস্য নিধন প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট অভিযান

যাত্রীবেসে উঠে গাড়ির কাগজপত্র চুরি, চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

আপডেট সময়ঃ ০৮:৩২:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
যাত্রীবেসে বাসে উঠে অভিনব কায়দায় ব্লু-বুক, রেজিস্ট্রেশন সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি করতো একটি চক্র। এরপর তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতো। টাকা না দিলে চালকদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হতো। এমনকি কাগজপত্র আটকে রেখে বাসের মালিকদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা নিতো তারা। গত শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এমন একটি চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তাররা হলেন- রাকিব মিয়া ওরফে তুফান (২৭), মো. শুকুর আলী (২৮), মো. হৃদয় হোসেন (২১) ও মো. শামিম (২৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি কাজে ব্যবহৃত সিমসহ দুটি মোবাইল সেট, বিভিন্ন বাসের চোরাই রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেনের মূল কপি জব্দ করা হয়। গত রোববার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে ঢাকা শহরে চলাচলরত মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন ও রবরব পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসে যাত্রীবেসে উঠে এবং অভিনব কায়দায় বাসের ব্লু-বুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে। পরে তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের নম্বর সংগ্রহ করে চোরাই করা প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। বাস মালিকরা প্রথমদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও চালকদের প্রাণনাশের হুমকি দিতেন চক্রের সদস্যরা। কাগজপত্রবিহীন অবস্থায় রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাস মালিকরা চক্রের দেওয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলে চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে চুরি করা প্রতি গাড়ির কাগজের জন্য ৫/৭ হাজার টাকা তাদের দেওয়া বিভিন্ন বিকাশের মাধ্যমে দিতে হতো। চক্রটি টাকা পেয়ে কিছু গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেয় এবং কিছু কাগজপত্র আটকে রাখে। অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, আটকে রাখা গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহন বাসের মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করা হতো। অন্যান্য মালিকরা মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চক্রের মূলহোতা তুফান নাম পরিচয় দিয়ে মালিকদের হুমকি দিত- ‘আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিকেরা মাসিক চাঁদা দেয়, কোনো পরিবহনের মালিক মাসিক চাঁদা না দিলে আমি ওইসব গাড়ির কাগজ চুরি করেই যাব, ঢাকা শহরের কোনো পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না।’ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ির মালিকরা রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফল না পাওয়ায় বাসের মালিকরা বিষয়টি সিআইডি পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর সিআইডি, ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি টিম তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে তুফান পরিচয়দানকারী মূলহোতা রাকিব মিয়া ওরফে তুফান ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করে তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের পরিচয় গোপন করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে এবং ওই মোবাইল দিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, গাড়ির কাগজপত্র হারানো কিংবা চুরির বিষয়টি বাস মালিকদের কাছে ছোটোখাটো বিষয় মনে হয়েছে। এ কারণে তারা প্রথমে মামলা কিংবা কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি। পরে যখন তারা মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিয়েছে তখন তারা সিআইডির কাছে শরণাপন্ন হয়েছেন।