ঢাকা, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

লটারির মাধ্যমে ডিসি-এসপি বদলির দাবি গোলাম পরওয়ারের

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৩:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৫২ বার পড়া হয়েছে

নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে সাম্প্রতিক রদবদল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, জনপ্রশাসন ও পুলিশে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে তা পরিকল্পিত মনে হচ্ছে, তাই তফসিল ঘোষণার পর সব জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে লটারির মাধ্যমে বদলি করতে হবে। এতে নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না বলে মত দিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে অংশ নিয়ে এ বক্তব্য দেন জামায়াত নেতারা। সংলাপে মাঠ প্রশাসন, গণভোট, আচরণবিধি, প্রবাসী ভোট, সেনা মোতায়েন থেকে শুরু করে ব্যালট নিরাপত্তা—বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরে দলটি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে সাম্প্রতিক সময়ে যে রদবদল চলছে, তা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। তাঁর ভাষায়, বদলিগুলো এক মাস ধরে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, একজন ডিসি হঠাৎ করেই বদলি হয়েছেন, আবার খুব কম সময়ের মধ্যে অনেকে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এতে মনে হয়েছে, বিষয়টি যেন কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা ডিজাইন অনুযায়ী হচ্ছে, যা নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর যখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে আসবে, তখন লটারিভিত্তিক বদলি করলে আস্থা বাড়বে। যার যেখানে তকদির আছে, সেখানে গেলে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকবে না। আগের কিছু নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এক রাতে সব ডিসি–এসপি বদলি হলে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। কমিশন চাইলে আবারও সেই পদ্ধতিই নিতে পারে।

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, একসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদের গণভোট আয়োজন ভোটারদের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাঁর মতে, “একই দিনে দুই ধরনের ব্যালটে ভোট হলে ভোটার বুঝতে পারবে না। গণভোট আগে হলে জনগণ ঠিকভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।” প্রবাসী ভোটারদের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রক্রিয়া অস্পষ্ট বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাসপোর্ট দিয়ে ভোটার নিবন্ধনের সুযোগ রাখার প্রস্তাবও আবার উত্থাপন করেন।

নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন সদস্য নয়, বরং প্রতি কেন্দ্রে চার থেকে পাঁচ জন সেনাসদস্য থাকলে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা যাবে।

সংলাপে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি বাস্তবায়নে ‘সিদ্ধান্তহীনতার’ অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি কে দেবে এবং দলের আর্থিক দায় কার উপর পড়বে—এসব স্পষ্ট নয়।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। তিনি সিইসি নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন, যদি ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে বাস্তবায়িত হয়। তবে তিনি সতর্ক করেন, শুধু কথায় নয়, নির্বাচনে প্রকৃত স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং সাহসী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ইসি নীতিনিষ্ঠ হলেও এক্সিকিউটিভ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাব থাকলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাঁর ভাষায়, সরিষার মধ্যে ভূত আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। বর্তমান প্রশাসনে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ‘একপেশে নিয়োগ’ হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর মতে, এ পরিস্থিতিতে লটারিভিত্তিক নিয়োগ ও বদলিই একমাত্র নিরপেক্ষ উপায়।

আযাদ বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো দীর্ঘদিন দুর্বল ছিল, যার প্রভাব প্রশাসনে রয়ে গেছে। সরকার পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্রে তেমন পরিবর্তন আসেনি। তিনি অবৈধ ও বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকায় বিশেষ নজরদারির দাবি করেন এবং ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। অতিরিক্ত ব্যালট পেপার যেন কোথাও না যায়, সে বিষয়ে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।

সংলাপে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল, যেখানে গোলাম পরওয়ার ও হামিদুর রহমান আযাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা প্রশ্ন, সংশয় ও আস্থার সংকটের মধ্যেই তারা লটারিভিত্তিক বদলি থেকে শুরু করে গণভোট, আচরণবিধি, নিরাপত্তা ও ব্যালট নিরাপত্তা—সব বিষয়ে বিশদ আলোচনায় অংশ নেন।

নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, জামায়াতের এই সংলাপ সেই আলোচনাকে আরও তীব্র করল।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

লটারির মাধ্যমে ডিসি-এসপি বদলির দাবি গোলাম পরওয়ারের

আপডেট সময়ঃ ০৩:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে সাম্প্রতিক রদবদল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, জনপ্রশাসন ও পুলিশে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে তা পরিকল্পিত মনে হচ্ছে, তাই তফসিল ঘোষণার পর সব জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে লটারির মাধ্যমে বদলি করতে হবে। এতে নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না বলে মত দিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে অংশ নিয়ে এ বক্তব্য দেন জামায়াত নেতারা। সংলাপে মাঠ প্রশাসন, গণভোট, আচরণবিধি, প্রবাসী ভোট, সেনা মোতায়েন থেকে শুরু করে ব্যালট নিরাপত্তা—বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরে দলটি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে সাম্প্রতিক সময়ে যে রদবদল চলছে, তা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। তাঁর ভাষায়, বদলিগুলো এক মাস ধরে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, একজন ডিসি হঠাৎ করেই বদলি হয়েছেন, আবার খুব কম সময়ের মধ্যে অনেকে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এতে মনে হয়েছে, বিষয়টি যেন কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা ডিজাইন অনুযায়ী হচ্ছে, যা নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর যখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে আসবে, তখন লটারিভিত্তিক বদলি করলে আস্থা বাড়বে। যার যেখানে তকদির আছে, সেখানে গেলে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকবে না। আগের কিছু নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এক রাতে সব ডিসি–এসপি বদলি হলে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। কমিশন চাইলে আবারও সেই পদ্ধতিই নিতে পারে।

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, একসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদের গণভোট আয়োজন ভোটারদের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাঁর মতে, “একই দিনে দুই ধরনের ব্যালটে ভোট হলে ভোটার বুঝতে পারবে না। গণভোট আগে হলে জনগণ ঠিকভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।” প্রবাসী ভোটারদের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রক্রিয়া অস্পষ্ট বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাসপোর্ট দিয়ে ভোটার নিবন্ধনের সুযোগ রাখার প্রস্তাবও আবার উত্থাপন করেন।

নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন সদস্য নয়, বরং প্রতি কেন্দ্রে চার থেকে পাঁচ জন সেনাসদস্য থাকলে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা যাবে।

সংলাপে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি বাস্তবায়নে ‘সিদ্ধান্তহীনতার’ অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি কে দেবে এবং দলের আর্থিক দায় কার উপর পড়বে—এসব স্পষ্ট নয়।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। তিনি সিইসি নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন, যদি ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে বাস্তবায়িত হয়। তবে তিনি সতর্ক করেন, শুধু কথায় নয়, নির্বাচনে প্রকৃত স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং সাহসী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ইসি নীতিনিষ্ঠ হলেও এক্সিকিউটিভ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাব থাকলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাঁর ভাষায়, সরিষার মধ্যে ভূত আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। বর্তমান প্রশাসনে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ‘একপেশে নিয়োগ’ হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর মতে, এ পরিস্থিতিতে লটারিভিত্তিক নিয়োগ ও বদলিই একমাত্র নিরপেক্ষ উপায়।

আযাদ বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো দীর্ঘদিন দুর্বল ছিল, যার প্রভাব প্রশাসনে রয়ে গেছে। সরকার পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্রে তেমন পরিবর্তন আসেনি। তিনি অবৈধ ও বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকায় বিশেষ নজরদারির দাবি করেন এবং ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। অতিরিক্ত ব্যালট পেপার যেন কোথাও না যায়, সে বিষয়ে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।

সংলাপে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল, যেখানে গোলাম পরওয়ার ও হামিদুর রহমান আযাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা প্রশ্ন, সংশয় ও আস্থার সংকটের মধ্যেই তারা লটারিভিত্তিক বদলি থেকে শুরু করে গণভোট, আচরণবিধি, নিরাপত্তা ও ব্যালট নিরাপত্তা—সব বিষয়ে বিশদ আলোচনায় অংশ নেন।

নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, জামায়াতের এই সংলাপ সেই আলোচনাকে আরও তীব্র করল।