ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:৫৬:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
  • / ১৫৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের নির্যাতন করে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা আদায় ও দুটি দোকান লিখে নেওয়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে (সিজিএম) ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তলব করা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে পরবর্তী শুনানির দিন উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন, শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন আদালত। আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ও পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ্ মুনজুরুল হক। আর আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুজিবুর রহমান মিয়া। এ ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। ওই আসামিদের বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের পর এ-সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশের বিষয়ে ওইদিন আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মিয়া বলেন, একটি ছিনতাই মামলার আসামিদের শারীরিক নির্যাতন করে আহত করার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির ও সদ্য প্রত্যাহার হওয়া পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের জামিনাদেশ থাকার পরও আসামিদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করা হয়। ১৬ জুলাই তাদের সশীররে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। এর আগে গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদারকান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে নেন। জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে তারা এ মামলার আরেক আসামি আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদারের বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন এএসপি রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেলসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য। আইনজীবী মুজিবুর রহমান জানান, ২৯ মে তিন আসামিকে ৬ সপ্তাহের জামিন দেন হাইকোর্ট। পরদিন ৩০ মে আসামিদের গ্রেপ্তার করে মারধর করা হয়। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল উপস্থিত ছিলেন। পরদিন থানায় নিয়ে এসে আসামিদের বাবার কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়া হয় এবং নওডোবা বাজারে দুটি দোকান লিখে দিতে বলা হয়। তিনি আরও জানান, এরপরও পুলিশ ক্ষ্যান্ত হয়নি। আসামিরা যখন পানি চান, তখন এক আসামির প্র¯্রাব আরেকজনকে খাওয়ানো হয়। ১ জুন তাদেরকে চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে উপস্থাপন করা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ থাকায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উচিত ছিল জামিন দেওয়া। এটা না করে তিনি কারাগারে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিষয়টি নজরে আনার পর দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি

আপডেট সময়ঃ ০৮:৫৬:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের নির্যাতন করে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা আদায় ও দুটি দোকান লিখে নেওয়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে (সিজিএম) ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তলব করা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে পরবর্তী শুনানির দিন উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন, শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন আদালত। আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ও পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ্ মুনজুরুল হক। আর আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুজিবুর রহমান মিয়া। এ ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। ওই আসামিদের বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের পর এ-সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশের বিষয়ে ওইদিন আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মিয়া বলেন, একটি ছিনতাই মামলার আসামিদের শারীরিক নির্যাতন করে আহত করার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির ও সদ্য প্রত্যাহার হওয়া পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের জামিনাদেশ থাকার পরও আসামিদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করা হয়। ১৬ জুলাই তাদের সশীররে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। এর আগে গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদারকান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে নেন। জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে তারা এ মামলার আরেক আসামি আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদারের বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন এএসপি রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেলসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য। আইনজীবী মুজিবুর রহমান জানান, ২৯ মে তিন আসামিকে ৬ সপ্তাহের জামিন দেন হাইকোর্ট। পরদিন ৩০ মে আসামিদের গ্রেপ্তার করে মারধর করা হয়। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল উপস্থিত ছিলেন। পরদিন থানায় নিয়ে এসে আসামিদের বাবার কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়া হয় এবং নওডোবা বাজারে দুটি দোকান লিখে দিতে বলা হয়। তিনি আরও জানান, এরপরও পুলিশ ক্ষ্যান্ত হয়নি। আসামিরা যখন পানি চান, তখন এক আসামির প্র¯্রাব আরেকজনকে খাওয়ানো হয়। ১ জুন তাদেরকে চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে উপস্থাপন করা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ থাকায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উচিত ছিল জামিন দেওয়া। এটা না করে তিনি কারাগারে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিষয়টি নজরে আনার পর দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।