শিক্ষাখাতের গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কাজের স্বাভাবিক গতি

- আপডেট সময়ঃ ১০:০০:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৮ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষাখাতের গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কাজের গতি। বর্তমানে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন স্তরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদই খালি। তাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি একরকম অচলাবস্থা বিরাজ করছে কোনো কোনো দপ্তরে। ফলে প্রয়োজনীয় কাজে এসে ওসব প্রতিষ্ঠানে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দপ্তরে বদলি করা হয়। অনেককে দেয়া হয় নতুন দায়িত্ব। তাছাড়া ইতিমধ্যে অবসরেও গেছেন কেউ কেউ। ফলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু ওসব পদে জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে শিক্ষা খাতে গত এক বছরেও শৃঙ্খলা ফেরেনি। তাতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের খেসারত দিতে হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে গত ২২ জুলাই প্রত্যাহার করা হয়। তারপর অতিরিক্ত সচিব রুটিন দায়িত্বে ছিলেন। তবে ওই পদে অতিসম্প্রতি নতুন সচিব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া অবসরে গেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব। ওই পদেও এখনো কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে অতিরিক্ত সচিব এখন রুটিন দায়িত্বে আছেন। আর শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডেও (এনসিটিবি) বিরাজ করছে স্থবিরতা। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহকারী ওই প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যানের পদটি দীর্ঘদিন ধরেই খালি। তাছাড়া আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর কাজও থেমে আছে। এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের দরপত্র চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এবারও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বিন্যামূল্যে পাঠ্যবই ছাপাতে বেশির ভাগ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান চলতি শিক্ষাবর্ষে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ৩০ ভাগ নি¤œমানের বই দেয়া হয়েছে। এনসিটিবিতে নিয়মিত চেয়ারম্যান না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং এনসিটিবি ওসব বিতর্কিত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগকেই বই ছাপানো কাজ পেতে সুযোগ করে দেয়। এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান ২৬ জানুয়ারি পিআরএলে যান। পরে তাকে দুই মাস অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর থেকে চেয়ারম্যান পদটি ফাঁকা। যদিও একজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান না থাকলে স্বাভাবিকভাবে কাজের ব্যাঘাত ঘটে। তাতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। সামনের সময়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্রুত এনসিটিবির শূন্য পদগুলো পূরণ হওয়া জরুরি। সূত্র আরো জানায়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। কিন্তুখালি রয়েছে ওই দপ্তরের পরিচালক পদও।
সেখানে রুটিন দায়িত্বে আছেন একজন যুগ্ম-পরিচালক। তাছাড়া জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) সহকারী পরিচালক ও মেডিকেল অফিসার পদও খালি রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ-৩) ও মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন শাখার উপপরিচালক পদও খালি রয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর বোর্ডের সচিব পালিয়ে যান। তারপর শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তাকে রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তুএক বছরেও দপ্তরটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। তিন মাস ধরে সেখানে সার্ভার বন্ধ রয়েছে। ফলে আটকে আছে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরভাতার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও। তাতে দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে। অবসরভাতার জন্য ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রুটিন দায়িত্বে অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মো. মজিবর রহমান জানান, শিক্ষা খাতে অবহেলা, গাফিলতি, বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিনের। অল্প সময়ের মধ্যে এর পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। শিক্ষার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে সমাধান করতে হবে।