সীমান্তে আর পিঠ দেখাবেন না, বিজিবিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

- আপডেট সময়ঃ ০৯:১৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪
- / ১০৪ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে আর পিঠ দেখাবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, সীমান্তে আমাদের মানুষ মারে আর বিজিবি পতাকা বৈঠক করতে বাধ্য হয়। বলে দিয়েছি, আর পিঠ দেখাবেন না। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাহিনীর সদস্যদের খোঁজ-খবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই ফোর্সগুলোকে (বাহিনী) ১৫ বছরে দানব বানিয়েছে; যারা বানিয়েছে, তাদের আমি পারি আর না পারি, তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে দাঁড় করাবো। তারা কত লোক মেরেছে, প্রত্যেকটি ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করেছে। বিজিবির মতো একটা ফোর্সকে সীমান্তে পিঠ দেখাতে বলেছে। বর্ডারে আমাদের লোক মারে, বিজিবি পতাকা বৈঠক করতে বাধ্য হয়। আমি এখানে বলেছি, যতদূর আমার বলার আছে, পিঠ দেখাবেন না, এনাফ ইজ এনাফ (যথেষ্ট হয়েছে)। আমাদের সীমান্তের মধ্যে ঢুকে মারে, আমরা বলি আমরা পতাকা বৈঠক করেছি, সব ঠিক হয়ে গেছে বা আমি জানি না। সেসব দিন শেষ হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিগত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই বাহিনীগুলোকে দানব বানিয়েছে-পুলিশ, আনসার, র্যাব, বিজিবি। ভাগ্য ভালো আমাদের সেনাবাহিনী এ থেকে রক্ষা পেয়েছে। এগুলো জাতীয় বাহিনী। কারও ব্যক্তিগত বাহিনী নয়। আমি হয়তো এরপর আপনাদের সঙ্গে এত কথা বলবো না। আমি তাদের বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা চালিয়ে যাব। দেশে এবং দেশের বাইরে, সে যত বড়ই হোক। আমার হাতে পড়লে তাদের একদম জেলে দিয়ে দেব। আমরা এরইমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে, যারা পুলিশকে দানব বানিয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এই দল ফ্যাসিস্টের চেয়েও নিকৃষ্ট। ফ্যাসিস্টরা যা করেছে, তারা সেটাই করেছে, প্রোপাগান্ডা.. আর যারা সীমান্ত রক্ষার কথা, তাদের বলে পিঠ দেখাও। আর নয়। ইনশাল্লাহ এমন আর হতে দেওয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সব কিছুর একটা প্রসেস আছে। আমি লিস্ট করছি। যাদের অন্যায়ভাবে বের করা হয়েছে, আবার যারা এরমধ্যেই ছিল না, আপনারা যাদের কথা বলছেন সেটা আমরা দেখব। তবে আমরা খুঁজছি, বের করার চেষ্টা করছি হুকুমের আসামিদের। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের সবার লিস্ট আমাদের কাছে আছে। ২/১ দিনের মধ্যে আপনারা অ্যাকশন দেখবেন। আমি তো এটার মালিক না। চাইলেই সাইন করতে পারি না। দুটো ধাপ পার হতে হবে। আজ বা কালকের মধ্যে আপনারা খবর জেনে যাবেন। মাঠের কাজ প্রায় শেষ। আমি আপনার নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমি যতদিন আছি, এই অপরাধীদের আদালতে দাঁড় করাবো। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গত সোমবার নিজের এক বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেক কথার মধ্যে অনেক কথা চলে আসে। যদি আমি এমন কোনো কথা বলে থাকি, সেটা ভুল বুঝেছেন, সেটার জন্য আমি দুঃখিত। ১৫ আগস্ট নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা এখনই আমি বলতে পারব না। আজকে আমরা বিকেলে বসব, সেখানে আলোচনা হবে। যেটাই হয় আমরা নির্ধারণ করব, সেদিন প্রচুর পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কেউ যাতে কোনো ধরনের গন্ডগোল করতে না পারে। পুলিশের যোগদান সম্পর্কে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সবাই যোগ দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার বলতে পারব কয়জন এসেছে, কয়জন আসেনি। আর আপনারা তো দেখছেন পুলিশ আমার সঙ্গে আছে। ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের আন্দোলন কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এই আন্দোলনের তো ইমেজ আছে। আর পুলিশ তো অনুতপ্ত। আমি তোমাদের কয়জনকে দাওয়াত করি, আমরা একসঙ্গে বসে পুলিশের সঙ্গে দুপুরে খাব। এর আগে ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত বর্ডার গার্ড সদস্যদের দেখতে পিলখানায় বিজিবি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার বিজিবি সদর দপ্তর থেকে এই তথ্য জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সকালে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের বর্ডার গার্ড হাসপাতালে আসেন। এ সময় তিনি আহত বিজিবি সদস্য এবং আন্দোলনে আহত হয়ে বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। আহতদের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। সাম্প্রতিক ঘটনায় বিজিবির তিন জন সদস্য নিহত (এদের মধ্যে দুজন র্যাবে কর্মরত ছিলেন) এবং ১৩০ জন বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়াও আন্দোলনে আহত বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ ও গেন্দুয়া কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তারাও বর্তমানে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পরিদর্শনকালীন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।