ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

স্বাস্থ্য খাতে আলোচিত ঠিকাদার মিঠু পাঁচ দিন রিমান্ডে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০২:২২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট করা ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলায়আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

‎আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সব্বির ফয়েজ এই রিমান্ডের আদেশ দেন।

‎‎প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা দায়ের করেন।

‎‎ওই দিন রাতেই মিঠুকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

‎এর ‎পরদিন তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে দুদকের উপসহকারি পরিচালক জাকির হোসেন। যার শুনানির তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ঠিক করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।

‎‎এদিন আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিনসহ অনেকেই তার রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। ‎‎আর দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

‎‎উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

‎‎রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগসহ দেশে এবং দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া তার নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। সুষ্ঠ অনুসন্ধান ও মামলার সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে তথ্য উদঘাটনের জন্য আসামির ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

‎‎মামলায় বলা হয়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের কোম্পানির মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম (মিঠু) কৃষি জমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী মিলিয়ে তার আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

‎সব মিলিয়ে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা।

‎‎মামলায় আরও বলা হয়, মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদ ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ১৭২ টাকা।

‎‎উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন ঠিকাদারি ব্যবসায়ী মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু।

‎‎অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে প্রভাব খাটিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

‎‎সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোরসের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ মৃত্যুর আগে লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটার অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির মূল কারণ হলো এই খাত ‘মিঠু চক্র’এর দখলে থাকা। এ প্রতিবেদনের পরই বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুদকসহ একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য খাতে আলোচিত ঠিকাদার মিঠু পাঁচ দিন রিমান্ডে

আপডেট সময়ঃ ০২:২২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট করা ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলায়আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

‎আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সব্বির ফয়েজ এই রিমান্ডের আদেশ দেন।

‎‎প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা দায়ের করেন।

‎‎ওই দিন রাতেই মিঠুকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

‎এর ‎পরদিন তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে দুদকের উপসহকারি পরিচালক জাকির হোসেন। যার শুনানির তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ঠিক করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।

‎‎এদিন আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিনসহ অনেকেই তার রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। ‎‎আর দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

‎‎উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

‎‎রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগসহ দেশে এবং দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া তার নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। সুষ্ঠ অনুসন্ধান ও মামলার সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে তথ্য উদঘাটনের জন্য আসামির ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

‎‎মামলায় বলা হয়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের কোম্পানির মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম (মিঠু) কৃষি জমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী মিলিয়ে তার আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

‎সব মিলিয়ে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা।

‎‎মামলায় আরও বলা হয়, মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদ ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ১৭২ টাকা।

‎‎উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন ঠিকাদারি ব্যবসায়ী মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু।

‎‎অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে প্রভাব খাটিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

‎‎সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোরসের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ মৃত্যুর আগে লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটার অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির মূল কারণ হলো এই খাত ‘মিঠু চক্র’এর দখলে থাকা। এ প্রতিবেদনের পরই বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুদকসহ একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।