হাসনাতের অবস্থা স্থিতিশীল, দেখতে গেলেন তিন উপদেষ্টা

- আপডেট সময়ঃ ০৭:২৯:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
- / ৯৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আনসারদের হামলায় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে তাকে সিএমএইচে স্থানান্তরিত করা হয়। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন। এরপর তিনি জানান, এখানে অনেক ক্রাউড। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, শত শত মানুষ। হাসনাত আব্দুল্লাহর বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আরও ৪৮ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এরপর হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দেওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এদিকে আনসার সদস্যদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ককে অবরুদ্ধ করার খবরে সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্য ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্যান্যের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিন উপদেষ্টা। গতকাল সোমবার বেলা সারে ১১টার দিকে আহতদের দেখতে উপদেষ্টারা ঢাকা মেডিকেলে আসেন। এসময় তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিনে থাকা সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। আহতদের দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গতকালকের (গত রোববার) ঘটনায় খুবই ব্যথিত আমরা। আহত সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আগের চেয়ে ভাল আছে। যারা আনসারের ছদ্মবেশে এসেছিলো, তাদের দাবি আদায়ের এজেন্ডা ছিল না বিশৃংখলা সৃষ্টি করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। লাঠি তাদের স্টকে ছিল। আমরা দেখেছি কিভাবে তারা ছাত্রদের উপড় হামলা করেছে। যে ছাত্ররা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, যারা আমাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যত তাদের রাস্তায় ফেলে নির্মম ভাবে মেরেছে। তাদের দাবি ছিল রাত ১০টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন করে জাতীয়করণ করতে হবে। তার অসম্ভব ও অবাস্তব দাবি তুলে ছিল। এই জাগ্রত ছাত্রসমাজ যারা আন্দোলন করে সৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, তারা আবারও তাদের অপরিসীম ত্যাগের ভূমিকা ছিল। পুরা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে তারা। যারা ষড়যন্ত্র করবে, তারা সফল হবে না। প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা সঠিক পথে দাবি আদায়ের আন্দোলন করছেন, আপনাদেরর কাছে অনুরোধ বিবেচনা করে দেখবেন ১৭ বছরের বৈষম্য ও শোষণ ১৭ দিনে কি ঠিক করা যায়? ধৈয্য ধরেন নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাবি জানান, আমরা জনগণের পক্ষ থেকে এসেছি কোনো দলের প্রতিনিধি না। সবার স্বার্থ নিশ্চিত হয় এমন ভাবে কাজ করবো। তবে সেটা সময় লাগবে। আহত হাসনাতের অবস্থা মোটামুটি ভালো। দুজন পথচারিও আহত আছে। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, মনে হচ্ছে ধান কাটার মৌসুমের মত দাবি আদায়ের মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রত্যকটা দাবির সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্ট আছে। যেখানে সরকারের ব্যয় বাড়বে। সরকারের রাজস্বতো রাতারাতি বেড়ে যাবে না। কিভাবে দাবি মেটাবো, টাকা ছাপতে পারি, তবে টাকা ছাপলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সব কিছু হবে। এই সরকার বানের জলে ভেসে আসে নাই। ছাত্র জনতা রাজপথে রক্ত দিয়ে এই সরকারকে এনেছে। এটা জনপ্রত্যাশার সরকার। তবে আমাদের সময় দিতে হবে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ অনেকে। এর আগে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গত রোববার সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন আনসার সদস্যরা। একপর্যায়ে দুপুরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাদের প্রতিনিধিদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। একপর্যায়ে টানা ১১ ঘণ্টা সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ রাখে আনসার সদস্যরা। এরপর ছাত্র-জনতার ও প্রশাসনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার শুরু হলে সচিবালয়ে সামনে আনসারদের সঙ্গে সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আহত হন। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সচিবালয়ের সামনের ছাত্র-জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় আনুমানিক ৩০ জন আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শিক্ষার্থী।