হিলি দিয়ে কমছে পণ্য রপ্তানি, নানা জটিলতার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা

- আপডেট সময়ঃ ১০:৩৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩
- / ১৩২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দিন দিন কমছে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ১৫ হাজার ২৩৩ টন ক্রু রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানি হলেও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৮ হাজার ৫১১ টন রপ্তানি হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতার কারণে রপ্তানি কমেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ভারতে কাস্টমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা না থাকা, কোয়ারেন্টাইন অফিস, বন্দরের ব্যবস্থাপনা না থাকা ও রাস্তা ছোটসহ নানা জটিলতার কারণে রপ্তানি বাড়ছে না, বরং দিন দিন কমছে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর পণ্য রপ্তানির জন্য একটি সম্ভাবনাময় বন্দর। কিন্তু বন্দর দিয়ে বর্তমানে ইচ্ছে করলেও সব ধরনের পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না। যেই পণ্যগুলো বন্দর দিয়ে রপ্তানি হতো, সেটি দিন দিন কমে আসছে। আমরা মনে করছি, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ভারতের অনীহা একমাত্র কারণ। ভারতীয় অংশে কাস্টমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পোস্টিং দেওয়া হয় না। আমরা বারবার বললেও তারা উদ্ভিদ সংগনিরোধের কোনো অফিস সেখানে দেয়নি। এখান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অফিস রয়েছে। এ ছাড়া ওখানে বন্দরের কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। ওখানে কোনো শেড নেই। যার কারণে বৃষ্টিতে আমাদের পণ্যগুলো ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না ভারতে।’ একই কথা বলেছেন হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হিলি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে পণ্য রপ্তানি হবে, তার কোনো কর্মকর্তা নেই। ভারতে গিয়ে যে পণ্যটি খালাস করে নেবে; কোয়ারেন্টাইনসহ এ ধরনের কোনো অফিস তাদের নেই। এসব কারণে হিলি দিয়ে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশে যখন আলুর দাম কম থাকে, সেসময় ভারত বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানি করতে চায়। কিন্তু তাদের ওখানে অফিস না থাকায় নিতে পারে না। একইভাবে দেশের সরিষার তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য বন্দর দিয়ে রপ্তানি হলেও একই সমস্যার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি যাচ্ছে না।’ বন্দরের আমদানিকারক শাহিনুর রেজা বলেন, ‘হিলিতেই একটি জুট মিল রয়েছে, সেখানে উৎপাদিত চটের বস্তা ভারতে রপ্তানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এর একমাত্র কারণ হিলি স্থলবন্দরের ভারত অংশে এই পণ্যগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা রপ্তানির প্রক্রিয়া করার কোনো অফিস নেই। এতে আমাদের যেমন পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ছে, তেমনই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি কমছে। আগে এই বন্দর দিয়ে ওয়াটার পাম্প প্লাস্টিকের ক্যারেটসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হতো। সেগুলো আর রপ্তানি হচ্ছে না। এ ছাড়া আমাদের এই অঞ্চলে ব্যাপক কলার আবাদ হয়। ভারতে কলার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমরা রপ্তানি করতে পারছি না।’ হিলি স্থলবন্দরের আরেক আমদানিকারক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হিলি দিয়ে ইলেকট্রনিকস পণ্য, বিভিন্ন সুতাজাতীয় পণ্য, তুলা ও গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করা যায়। বাংলাদেশ অংশে এসব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ভারতে যারা এসব পণ্য আমদানি করবেন, তাদের অংশে যে ধরনের ব্যবস্থাপনা কাস্টম ও ব্যবসায়ী সংগঠনের যে উদ্যোগ থাকার কথা; সেটির অভাবে পণ্য রপ্তানি মার খেয়ে যাচ্ছে।’ বাংলাহিলি কাস্টম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন বলেন, ‘আমাদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। মূলত হিলি স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারত অংশে তাদের কোনো কোয়ারেন্টাইন অফিস নেই। যদি অফিস থাকতো তাহলে আমরা এই স্থলবন্দর দিয়ে অনায়াসে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা পণ্য রপ্তানি করতে পারতাম। এসব কারণে রপ্তানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।’ হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে যে হারে পণ্য আমদানি হয়, সেই হারে রপ্তানি হয় না। প্রতি মাসে দেখা যায়, দুই থেকে তিনটি করে পণ্য রপ্তানি হয়। বন্দর দিয়ে যদি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পেতো তাহলে অধিক পরিমাণ ডলার আসতো দেশে। স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে শুধুমাত্র ক্রু রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানি করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা মূল্যের ১৫ হাজার ২৩৩ টন ক্রু রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি কমে ৯৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা মূল্যের ৮ হাজার ৫১১ টন রপ্তানি হয়েছে। এই হিসাবে প্রতি বছরই কমছে রপ্তানি।’