১২ হাইটেক পার্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি

- আপডেট সময়ঃ ০৯:০৯:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১৩২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের ১২টি জেলায় আইটি পার্ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা, বরিশাল, রংপুর, নাটোর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও সিলেট। সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকের পছন্দে ওই ১২ জেলা নির্ধারণ করা হয় বলে জানা যায়। এ নিয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পও তৈরি করা হয়। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় জেলা পর্যায়ে আইটি পার্ক/ হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২ জেলায়)। প্রকল্পে সংযুক্ত করা হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতকে। অর্থাৎ ভারতীয় ঋণে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভারতীয়। ৫ আগস্টের পর কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান তারা। মেয়াদ শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ। জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকল্পের কাজ ফেলে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে তখন থেকে বন্ধ প্রকল্পের কাজ। চলতি বছরের জুন নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সর্বশেষ অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ। ফলে কবে নাগাদ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এছাড়া নতুন করে সংশোধনের প্রস্তাবেও অনীহা দেখা গেছে কমিশনের। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এ কে এ এম ফজলুল হক বলেন, পট পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের কাজ তখন থেকে বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় ঠিকাদারেরাও প্রকল্প এলাকা থেকে চলে গেছেন। পরে আসার কথা থাকলেও আর আসেননি। প্রকল্পের অনেক প্যাকেজের কাজ শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা কারণে ভারত থেকে নির্মাণসামগ্রী আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাজ বন্ধ। জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেক থেকে প্রকল্পের বাজেট অনুমোদন করা হলেও কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর পাল্টে গেছে ওই প্রকল্পের চিত্র। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে বর্তমানে কোনো অর্থও ছাড় করছে না ভারত। এ কারণে পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির পিডি এ কে এ এম ফজলুল হক বলেন, নানা কারণে আপাতত প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে চার জেলাকে বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নির্দেশনায় সচিবের নেতৃত্বে আইটি পার্ক/ হাইটেক পার্ক প্রকল্প পর্যালোচনা করা হয়। সম্প্রতি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ওই প্রকল্পে ভারত থেকে ঋণের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। তারই আলোকে প্রকল্প প্রস্তাব থেকে চার জেলাকে বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বাদ পড়া ওই জেলাগুলো হচ্ছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার (রামু) ও সিলেট। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে এরই মধ্যে নাটোর ও রংপুরে তিন তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি ভবন (আরসিসি) নির্মাণের কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা জানান, প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতির কাজ হয়েছে ৩৬ ভাগ। আর আর্থিক অগ্রগতির কাজ হয়েছে ৩৩ দশমিক ৯২ ভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল এক হাজার ৭৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ২৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও প্রকল্প ঋণ এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১৯ মে ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত এনইসি সভার সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ, ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর মোট এক হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী করা হয়। বর্তমানে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় দুই হাজার ৩৫১ কোটি ৭১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট চার হাজার ১৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে কমিশনে। অর্থাৎ, ১২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২৪ এর পরিবর্তে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধিসহ দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভাও করা হয়েছে। সভায় কিছু পর্যবেক্ষণও দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে প্রকল্পটির পিইসি সভা হয়েছে। তাতে ব্যয় কমানোসহ বেশকিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঠিক করে দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত ভারত আইটি প্রকল্পে নতুন করে আর কোনো ঋণ দিতে চায় না। এমনকি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে তারা বর্তমানে কোনো অর্থও ছাড় করছে না। এ কারণে পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। অবস্থা যে পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে তাতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ ছাড়া ওই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না।