৫০ বছরের পুরোনো ট্র্যাক ও স্লিপার পশ্চিমাঞ্চল রেলে, কমেছে ট্রেনের গতি

- আপডেট সময়ঃ ০৬:৪৭:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১২০ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
পশ্চিমাঞ্চল রেল নেটওয়ার্কের লাইন বা ট্র্যাক ও স্লিপারগুলো ৫০ বছরের পুরোনো বলে জনিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় এই লাইনে ট্রেন কাক্সিক্ষত গতিতে চলাচল করতে পারছে না। এ ছাড়া বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। পরিস্থিতি উত্তরণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। পুরোনো লাইনের কারণে ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগের ইঞ্জিনগুলোকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৭৩ সালে রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। স্বাভাবিকভাবে একটি রেললাইনের আয়ুকাল ধরা হয় ২০ থেকে ২৫ বছর। সেই হিসেবে ৫০ বছরের এই লাইনের (ট্র্যাক) বয়স স্বাভাবিক আয়ুকালের দ্বিগুণ। অর্থাভাবে কংক্রিট স্লিপার বসানো সম্ভব হয়নি। কাঠের স্লিপারের পাশাপাশি স্টিলের স্লিপারের কারণে এই লাইনটিকে সব সময় সংস্কারের ওপর রাখতে হয়। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে হয়। সেই সঙ্গে মর্ডান ট্র্যাক বা আধুনিক লাইন স্থাপন না হওয়ায় পশ্চিমাঞ্চল রেলের লাইনে ট্রেনের গতি কমে এসেছে। রেলের গতি বৃদ্ধির জন্য মর্ডার ট্র্যাক তথা জয়েন্টলেস এবং কংক্রিটের স্লিপারের ওপর জোর দিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেলকে ঘিরে সহিংসতা রোধে লাইন সংস্কারের জনবলকে লাইন পাহারায় নিয়োগ করে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে যে হারে লাইনগুলো সংস্কার হওয়ার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে পুরোনো রেললাইন, দুর্বল স্লিপার এবং আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এই রুটের লাইনে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে যাত্রীবোঝাই ট্রেন। গত ২৯ জানুয়ারি সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের বাগমারী গ্রামে রেললাইনের জোড়ার কাছে ৬ ইঞ্চি ভেঙে যায়। এর আগে ২২ জানুয়ারি রাতে একই কায়দায় ভেঙে যায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর এলাকায়। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পায় যাত্রীবোঝাই ট্রেন। এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, মাত্রাতিরিক্ত গরম বা শীতে লাইন বেঁকে বা ফেটে যাচ্ছে। এমন লাইনগুলোতে রেলের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে। শীত বা গরমের কারণে লাইনে স্ট্রেচিং ও ডিস্ট্রেচিংয়ের ফলে ‘রেল ব্রোকেন’ ও ‘বাকলিং’ (লাইন বেঁকে যাওয়া) হয়ে থাকে। আসাদুল হক জানান, পুরো পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে রেললাইনগুলো পরিবর্তনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যেসব লাইন অত্যধিক পুরোনো হয়ে গেছে, সেগুলো পরিবর্তন করা হবে। এই প্রকল্প পাস হলে পশ্চিমাঞ্চলের সব লাইন ও ট্র্যাক পরিবর্তন হবে। এখন রেললাইনে যেভাবে শীতে রেল ব্রোকেন এবং গরমে বাকলিং হচ্ছে, তা আর হবে না। এখন যেসব ঘটনা ঘটছে সেখানে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেল কর্তৃপক্ষের কাছে পুরো রেল নেটওয়ার্কসহ দুর্বল বা পুরোনো সরঞ্জামের লিস্ট আছে; কোন সরঞ্জাম, লাইন বা স্লিপারের বয়স কত, কত দিন চলবে, কবে নাগাদ পরিবর্তন করতে হবে। আমরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে পরিমাণ অর্থ পাই, লিস্ট ধরে পুরোনো সেই লাইনগুলো সংস্কারে কাজ করি এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ত্রুটি ধরা পড়লেই আমাদের জনবল সেটা নিয়ে কাজ করছে। এই কার্যক্রমে সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাই, সেই অনুযায়ী সংস্কার বা মেইনটেইন্যান্সের কাজ করে থাকি। সরকার আমাদের একত্রে অনেক বেশি অর্থ দিতে পারবে না। কারণ সরকারের আরও অনেক বিভাগ রয়েছে। রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেললাইনের বয়স ৫০ বছরের বেশি। অর্থাভাবে কংক্রিট স্লিপার বসানো সম্ভব হয়নি। কাঠের স্লিপারের পাশাপাশি স্টিলের স্লিপার বসানো হয়েছে। এ কারণে এই লাইনটিকে বেশি বেশি মেইনটেইন্যান্সে রাখতে হয়, রাখতে হয় নজরদারিতে। এদিকে গত নির্বাচনে রেললাইনে সহিংসতা রোধে লাইন সংস্কারের জনবলকে লাইন পাহারায় নিয়োগ করে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে এখন আবার ওই জনবলকে লাইন সংস্কারের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। লাইন এখন মেইনটেইন হচ্ছে। সব মিলিয়ে পুরোনো রেললাইন, দুর্বল স্লিপার এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে লাইনে বিচ্যুতি ঘটছে। তবে শীতকালে ট্র্যাকে সমস্যা দেখা দেয় বেশি। লাইন সঙ্কুচিত হয়। এতে লাইনে টান পড়ে এবং লাইনের সংযোগস্থলে নাটের কাছ থেকে ভেঙে যেতে পারে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের বর্তমান গতিবেগ প্রসঙ্গে জিএম অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেলের ট্র্যাকের অবস্থার ওপর নির্ভর করে রেলের গতি। রাজশাহী-আব্দুলপুর লাইনে গতি দেওয়া আছে ৬০-৭০ কিলোমিটার। গতি কম, কারণ এই লাইনে কংক্রিটের চেয়ে কাঠ ও স্টিলের স্লিপারই বেশি। কংক্রিট দিতে পারলে গতি ১০০ কিলোমিটার দেওয়া যেত। যাত্রীদের দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারা যেত। সেই হিসেবে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পেত। আবার ঈশ্বরদী বাইপাস থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত গতি দেওয়া আছে ৯০-৯২ কিলোমিটার। নতুন ট্র্যাকে রেলের গতি হবে ১২০ কিলোমিটার, তবে দিয়ে রাখা হয়েছে ১০০ কিলোমিটার। পশ্চিমাঞ্চল রেলের এই কর্মকর্তা বলেন, সময়ের বিবর্তনে রেলের গতি বৃদ্ধির জন্য স্লিপারগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কংক্রিট স্লিপার অনেক বেশি স্ট্রেস ও লোড নিতে পারে, তাই রেলের গতিও অনেক বাড়ানো যায়। কাঠের স্লিপারে তা সম্ভব না, এটা সাধারণ ইয়ার্ডে বসানো যেতে পারে। কিন্তু স্লিপারের স্বল্পতার করণে মেইন লাইনে কাঠের ও স্টিলের স্লিপার বসাতে বাধ্য হই। এককথায় লাইনে মিক্সিং আছে। মূলত আমদের টার্গেট সব অর্থ একত্রে পেলে ভবিষ্যতে পুরো লাইন কংক্রিট স্লিপারে কনভার্ট করা।