• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
শ্রমিকদের জন্য কর্মবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে: স্পিকার ‘মাদক নিয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স’ আইনগত সহায়তা দরিদ্র-অসহায় নাগরিকের অধিকার: আইনমন্ত্রী রোগীর প্রতি চিকিৎসকের অবহেলা সহ্য করা হবে না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী নৌকা-জাল মেরামতে ব্যস্ত, নদীতে নামার অপেক্ষায় জেলেরা বান্দরবানে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হয়েছে সাংবাদিকবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কৃত্রিম বৃষ্টিতে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ভিজলেন মেয়র আতিক বিএনপির ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই: কাদের

হাসপাতালের বর্জ্য পুনরায় বিক্রি হচ্ছে দোকান-ক্লিনিকে!

Reporter Name / ১৪১ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
হাসপাতালের বর্জ্য জীবাণুমুক্ত না করেই একটি চক্র বিক্রি করছে বাইরে। যা আবার নানা হাত ঘুরে স্থান করে নিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। এতে ব্যাপক ঝুঁকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। আজ মঙ্গলবার ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে ভয়াবহ এই তথ্য জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়- হাসপাতালের দুই ধরনের চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি করা হয়, পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও পুনঃচক্রায়নযোগ্য বর্জ্য। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ (সিন্ডিকেটের অংশ) পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য যেমন, ব্যবহৃত কাচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও রাবার/প্লাস্টিক নল নষ্ট না করে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহকারীর (সিন্ডিকেটের অংশ) কাছে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিক্রি করে দেয়। এসব উপকরণ সঠিকভাবে জীবানুমুক্ত করা হয় না। ফলে এসব উপকরণ পুনঃব্যবহারে এইচআইভিসহ মারাত্মক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। একইভাবে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণ ইত্যাদি) নষ্ট/ধ্বংস না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙ্গারির দোকানে এবং রিসাইক্লিং কারখানাগুলোতে (সিন্ডিকেটের অংশ) বিক্রি করে দেয়। সংক্রমিত অবস্থায় এসব বর্জ্য পরিবহণ করার ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও রিসাইক্লিং কারখানার কর্মীদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ে। একটি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কেজি প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
বর্জ্যকর্মী নিয়োগে লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন: সরকারি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী নিয়োগে ২ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা থেকে পর্যন্ত লেনদেন হয়। ৫৫ শতাংশ বর্জ্যকর্মীর নিয়োগ হয় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ৪৬ শতাংশ, প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপে ৪২ শতাংশ ও সরাসরি ঘুসের মাধ্যমে ১৪ শতাংশ বর্জ্য কর্মীর নিয়োগ হয়। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো মো. নেওয়াজুল মওলা। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৫টি জেলার ১৮১টি হাসপাতাল, ৩৮ সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ৯৩ জন বর্জ্যকর্মীর দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সূচনা বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এ খাতের সুরুক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তায় নিশ্চিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালগুলোতে বর্জ্যকর্মী নিয়োগে ১-২ লাখ টাকা দুর্নীতি হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়সহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এই অর্থের ভাগ পান। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ পেতে একজন বর্জ্যকর্মীকে দিতে হয় ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। মেয়র, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে কর্মচারীরা এই অর্থ নেন। আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে বর্জ্য কর্মীদের দিতে হয় ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।
বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট রঙের পাত্রের ঘাটতি: প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য ৬টি নির্দিষ্ট রঙের পাত্র রাখার নির্দেশনা থাকলেও জরিপকৃত হাসপাতালের ৬ শতাংশে তা নেই। হাসপাতালের অভ্যন্তরে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে বর্জ্যকর্মী সব ধরনের বর্জ্য একত্রে বালতি-গামলায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন। জরিপকৃত হাসপাতালের ৬৬ শতাংশে বর্জ্য মজুতকরণের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ নেই। ৪৯ শতাংশে অটোক্লেভ যন্ত্র নেই। ফলে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ পরিশোধন না করেই পুনর্ব্যবহার করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতালে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকা বাধ্যতামূলক হলেও ৮৩ শতাংশ হাসপাতালে ইটিপি নেই। যেসব হাসপাতালে (১৭ শতাংশ) ইটিপি আছে, তাদের ১৬ শতাংশ হাসপাতালে এই ব্যবস্থা সচল নেই। জরিপকৃত সব সিটি করপোরেশন এবং ৭৭ শতাংশ পৌরসভায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। মাত্র ২৩ শতাংশ পৌরসভা তাদের ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’র একটি উপখাত হিসেবে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বার্ষিক ১-৮ লাখ টাকা খরচ করে থাকে। যদিও পৌরসভার শ্রেণিভেদে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বার্ষিক ১০-৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। বাজেট ঘাটতির কারণে হাসপাতালগুলোর আধুনিক প্রযুক্তির ইটিপি ও ইনসিনেরেটর ক্রয় করার সামর্থ্য নেই। ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত বিদ্যুৎবিলের অজুহাতে হাসপাতালে ইটিপি, ইনসিনেরেটর, অটোক্লেভসহ বর্জ্য শোধন ও বিনষ্টকারী যন্ত্র ব্যবহার করা
হয় না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী চিকিৎসা বর্জ্য পুনঃব্যবহার রোধে ব্যবহৃত রাবার-প্লাস্টিক নল ও বিভিন্ন ব্যাগ টুকরো করে কাটার নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৮ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার-প্লাস্টিকের ব্যাগ কাটা হয় না এবং ৩১ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার-প্লাস্টিকের নল কাটা হয় না। গাইডলাইন অনুযায়ী পুনর্ব্যবহার রোধ করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহত সুচ ব্যবহারের পরপরই ধ্বংস বা গলিয়ে দিতে হয়। দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ হাসপাতালে সূচ ধ্বংসকারী (নিডল ডেস্ট্রয়ার) যন্ত্রটি নেই। মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গবেষণায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন কর্তৃক বিদ্যমান চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা, গাইডলাইন, সম্পূরক বিধি এবং নির্দেশিকা প্রয়োগ ও প্রতিপালনে ঘাটতির চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ)-২০০৮ বিধিমালা গত ১৪ বছরেও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এখানে নেই স্বচ্ছতা, নেই জবাবদিহিতা, রয়েছে সমন্বয়ের ঘাটতি। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নিম্নপর্যায়ের এই কর্মচারীদের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রেও অনিয়ম রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ৯টি সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি। এর মধ্যে রয়েছে- প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়, তদারকি ও তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে ‘কর্তৃপক্ষ’ গঠন করতে হবে এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে করা, আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করা, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় সুস্পষ্টভাবে চিকিৎসা বর্জ্যকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন/পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। এছাড়া চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সক্ষমতা ও কার্যকরতা বৃদ্ধির জন্য এই ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা, প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ইটিপি ও এলাকভিত্তিক কেন্দ্রীয় ইনসিনারেটর স্থাপন, দক্ষ জনবল দ্বারা চিকিৎসা বর্জ্য পরিশোধন ও অপসারণ, চিকিৎসা বর্জ্যরে ঝুঁকি সম্পর্কে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী এবং জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সিটি করপোরেশন/পৌরসভায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদাভাবে জনবল নিয়োগ এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া ও চিকিৎসা বর্জ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা প্রদান করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category