মানবতাবিরোধী অপরাধ: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফুল মিয়ার মৃত্যুতে মামলা অকার্যকর ঘোষণা

- আপডেট সময়ঃ ১১:১৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩
- / ১৪২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বগডহর গ্রামের বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফুল মিয়ার মৃত্যুতে তার মামলাটি অকার্যকর (অ্যাবেটেড) ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে পলাতক ফুল মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন পরবর্তী শুনানির জন্য ধার্য ছিল। এর মধ্যে গত ২২ মার্চ ফুল মিয়া মারা যাওয়াই মামলাটি (অ্যাবেটেড) অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফুল মিয়ার (৭৫) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওইদিন দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আউয়াল মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা-ধর্ষণসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে। জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অভিযুক্ত মো. ফুল মিয়া হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন ও রাজাকার কমা-ার হিসেবে তার নেতৃত্বে তিতাস নদী ও বুড়ী নদীতে ডাকাতি সংগঠিত হয়। শরণার্থীরা ভারতে যাওয়ার সময় তিনি তাদের মারধর করে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ই মে রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দিন ভারতে যাওয়ার পথে বুড়ী নদীর কনিকারা মোড়ে রাজাকার ফুল মিয়ার নেতৃত্বে তার ছেলে-মেয়েকে আটক করে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে দেন। নবীনগর উপজেলার জল্লা গ্রামের শীতল মাঝি তাদের দেখতে পেয়ে শ্রীরামপুর গ্রামের লোকজনদের খবর দেন। পরে শ্রীরামপুর গ্রামের লোকজন তাদের উদ্ধার করে ত্রিপুরার আগরতলা কংগ্রেস ভবনে পৌঁছে দেন। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর রাজাকার ফুল মিয়া হানাদার বাহিনীকে নিয়ে শ্রীরামপুর গ্রামে নির্মমভাবে গণহত্যা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা এবং শতাধিক ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরদিন ১২ নভেম্বর ফুল মিয়া নবীনগর উপজেলার রসুল্লাবাদ বাজারে ব্যাপক লুটপাট করে বাজারের সব দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন। এরপর ১৪ ডিসেম্বর ফুল মিয়া নবীনগর উপজেলার সাহেবনগর গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা মো. মোকাদ্দুছ মিয়াকে ধরে এনে নবীনগর গার্লস হাইস্কুলের সামনে প্রকাশ্যে হানাদার বাহিনীর সহায়তায় হত্যা করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পার্শ্ববর্তী নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার চরসেন্দুর গ্রামে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নবীনগরে আসেন। এ সময় তারা বুড়ী নদীর লঞ্চঘাটে গোসল করতে গেলে ফুল মিয়া তাদের দেখতে পেয়ে রাজাকারদের নিয়ে তাদের চোখ বেঁধে বগডহর গ্রামে নিয়ে যান এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল করিমসহ কয়েকজনের নির্দেশে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।