দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন সংবাদ প্রচার না করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

- আপডেট সময়ঃ ০৮:২১:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩
- / ১৪১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের অগ্রযাত্রা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা সমালোচিত হয় এমন কোনো সংবাদ প্রচার না করার জন্য সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও আহত ৪৩৮ সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তথ্যসচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, টকশোতে ইচ্ছেমতো বলে যাচ্ছে, যা বলার তাই বলে যাচ্ছে। সব কিছু বলার পরও বলে কথা বলার স্বাধীনতা নাই। স্বাধীনতা ছিল কখন? আইয়ুব খানের আমলে ছিল, জিয়াউর রহমানের আমলে ছিল, এরশাদের আমলে ছিল? তিনি বলেন, ২০০১ সালের কথা একবার চিন্তা করুন, খালেদা জিয়া যখন সরকারে এলো দক্ষিণ অঞ্চলে কি কোনো সাংবাদিক যেতে পেরেছিল? কোনো সাংবাদিক যেতেই পারেনি। সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে এত অত্যাচার করেছিল মানুষের ওপরে। সেখানে যেভাবে মেয়েদের রেপ করেছে, খুন করেছে, আমি প্রতিটি এলাকায় ঘুরেছি। তিনি আরও বলেন, কত মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে তাদের এই অত্যাচারে। তাদের এই সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কাজ, তারপর অপারেশন ক্লিনহার্টে মানুষ হত্যা করা, তাদের এসব কর্মকা- কখনও কোনো পত্রিকা সাহস করে লিখতেই পারত না। আর যে পত্রিকা লিখত, তার তো জবাব দিতেই হতো। শেখ হাসিনা বলেন, যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, এই ১৪ বছর সাংবাদিকরা পেয়েছে, এই স্বাধীনতা এর আগে কখনও কেউ ভোগ করেনি, এটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলতে পারি। আমরা চাই আমাদের দেশের কল্যাণে যেন সমালোচনা হয়, দেশের ক্ষতি করার জন্য নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনকল্যাণের জন্য কাজ, দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ থেকে শুরু করে সবার জন্যই আমরা সহযোগিতা করে আসছি, যাতে জীবনমান উন্নত করা যায়। আজ কিন্তু সেই উন্নতিটা হয়েছে। হ্যাঁ, এই সময় মানুষের কষ্ট হচ্ছে আমি জানি। ইউক্রেন যুদ্ধের পর স্যাংশনের ফলে মুদ্রাস্ফীতি, আমাদের দেশে কত আর মুদ্রাস্ফীতি, অন্যান্য উন্নত দেশে দেখবেন যে কী দুরবস্থা মানুষের! তারা তো তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেও পারে না। তিনি বলেন, আমরা তো এটুকু দাবি করতে পারি, এদেশের মানুষ নুন-ভাত চাইত, নুন ভাত জোটাতে পারত না। আজ তারা মাংস খাওয়ার চিন্তা করে। মাংসের দাম বেড়েছে, এই কথাটা তারা বলতে পারে। এই অবস্থা কি বাংলাদেশে কখনও ছিল, ছিল না। এই যে উন্নতিটা এটাও তো একটা উন্নতি। এখন তারা আর নুন-ভাত চায় না, ভাত-মাংস চায়। আমরা এই অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, এখন সারা বিশ্বেই একটা সমস্যা। সেই সমস্যার কারণে আমাদের ওপর একটা প্রভাব পড়েছে। আমরা আহ্বান করেছি, কেউ এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না রাখে, কেউ জমি অনাবাদি রাখছে না, উৎপাদন বাড়ছে। তবে বর্ষাকালে সব সময় কাঁচা মরিচের দাম পাওয়া যায়, কারণ বর্ষার জন্য ক্ষেতে মরিচ উৎপাদনও হয় না, আর ক্ষেতে পানি আসে বিধায় মরিচ তোলাও যায় না। এই সমস্যাটা আছে। মানুষ যাতে ঝালটা খেতে পারে, আমরা মরিচ আমদানি করে সে ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। হ্যাঁ, কোথাও খারাপ দেখলে তা অবশ্যই বলবেন। ২০০১ সালে ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর থেকে যে অত্যাচার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর, সাংবাদিকদের ওপর হয়েছে, সেগুলো সবার মনে রাখা উচিত। তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা (দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার কারণে) আর বাধাগ্রস্ত হবে না। স্বাধীনতা উপভোগ করার অধিকার সবার আছে। তবে তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। আপনারা অবশ্যই স্বাধীনতা উপভোগ করবেন। তবে আপনাদের দায়িত্বশীলতা এবং কর্তব্যপরায়ণতা দেখাতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই আপনাদের পাশে আছে, আমরা থাকব। আমি তো প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যখন যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, আমি সব সময়ই সেটা করে যাই। এতে আমার কাজের পরিমাণ বাড়ে, হাজার হাজার দরখাস্ত দেখতে হয়, পড়তে হয়, কাকে কী দেব, তারপরও আমি কিন্তু করে যাওয়ার চেষ্টা করি। কল্যাণ ট্রাস্ট আমি এই জন্যই করে দিয়েছিলাম, আমি যখন থাকব না, তখনও যেন কেউ বঞ্চিত না হয়, সবাই যেন পায়। প্রধানমন্ত্রী সংবাদমাধ্যম মালিকদের বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে অর্থ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, আগে টেলিভিশন চালাতে গেলে ডলার দিয়ে স্যাটেলাইট ভাড়া করতে হতো, এখন ভাড়া করতে হয় না। এখন অনেক টাকা বেঁচে যাচ্ছে, বেঁচে যাচ্ছে বলে তো কল্যাণ ট্রাস্টে অনুদান দিতে পারেন। মালিকদের তো এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকরা সরকারি ফ্ল্যাট কিস্তিতে কিনতে চাইলে ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবাদপত্রে যারা কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী বা প্রেস শ্রমিকদের কল্যাণে ইতোমধ্যে আমরা একটা ওয়েজবোর্ডও কার্যকর করেছি। আমি মালিকদেরও বলবো এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকদেরও ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং খুব শীঘ্রই এটা বাস্তবায়ন করা হবে। আপনাদের কল্যাণে গণমাধ্যম চাকরি শর্তাবলি আইন সেটাও আমরা প্রণয়ন করে দেব। সাংবাদিকদের আবাসনের জন্যও বিশেষ প্রকল্পেরও উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে অনেকেই প্লট দেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে পেয়ে বিক্রিও করেছেন। আমরা কিন্তু সরকারিভাবে অনেক ফ্ল্যাটও তৈরি করেছি। সেটা আপনি কিছু টাকা জমা দিয়ে কোনোটা ১৬ বছর, কোনোটা ২৬ বছর পর্যন্ত আস্তে আস্তে টাকা শোধ করে একসময় নিজে মালিক হতে পারবেন। শেখ হাসিনা বলেন, ন্যাম সম্মেলনের জন্য আমরা যখন ফ্ল্যাট তৈরি করি তখনই আমার একটা লক্ষ্য ছিল সম্মেলন শেষে এই ফ্ল্যাটগুলো কবি, শিল্প, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের দিবো। কারণ তাদের চাকরির কোনো স্থায়িত্ব থাকে না। যখন তারা বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয়ে যায় কি করে চলবে? সরকারি চাকরি যারা করেন তারা তো অবসর ভাতা পান, আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্যও কিছু থাকে না, আবার সাংবাদিকদেরও কিছু থাকে না। এটাই বাস্তবতা। তাই সরকারি ফ্ল্যাটগুলো চাইলে সাংবাদিকরা নিতে পারেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্য সচিব মো. হুমায়ন কবির খন্দকার। বিএফইউজে এবং ডিইউজে নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
৪ হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতাল হবে ঢাকা মেডিকেল: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে চার হাজার শয্যাার আধুনিক হাসপাতালে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধান বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ক্রমবর্ধমান রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া খুবই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। তাই, আমরা ঢাকা মেডিকেলকে সুন্দর, আধুনিক এবং বড় হাসপাতালে পরিণত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। কারণ, এই হাসপাতাল থেকে যাতে একই সময় ৪ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর তাঁর অফিস থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ্যালামনাই ট্রাস্ট কলেজের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, আমরা খুব শিগগির (ঢাকা মেডিকেলকে ৪ হাজার শয্যার হাসপাতালে পরিণত করার) কাজ শুরু করতে পারব। শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান সামনের দিনগুলোতে বিকাশ লাভ করবে। তাই বাংলাদেশকেও একই গতি বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার সংখ্যা আমাদের দেশে কম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুষ্টিমেয় সংখ্যক ব্যক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বলেন, কাজেই, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার প্রতি আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ বর্তমান যুগে চিকিৎসা বিঞ্জানের ওপর পর্যাপ্ত গবেষণা খুবই প্রয়োজনীয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালাতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেবে। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিস্তারিত গবেষণার জন্য যে পরিমাণ তহবিলের প্রয়োজন, আমি আপনাদের তা দেব। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাস্তাবায়িত হলে তা বিপুল সংখ্যক মানুষকে আধুনিক চিকিৎসা প্রদানের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীরা সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ৫০টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সারাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে বঙ্গবন্ধু প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি ধাপে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করে সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেছে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, তাঁর সরকার স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত করতে বেশ কিছু বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার চিকিৎসা-সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে একটি সমীক্ষা চালিয়ে কিছু জেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতালে পরিণত করেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। এ সময় শেখ হাসিনা তাঁর হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বেশ কয়েকটি জেলা হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের অভাবের কারণে কোনো অস্ত্রোপচার করা হয় না। এছাড়া, অনেক আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তিনি চিকিৎসকদের গ্রামীণ এলাকায় না থাকার মানসিকতার সমালোচনা করে বলেন, এ কারণে গ্রামের লোকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সবাই (চিকিৎসকরা) ঢাকায় থাকতে চায়, তাদের কেউ ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। যখন আপনাকে গ্রামে পোস্টিং দেয়া হবে, তখন সেখানে থেকেই আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে। শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের স্মরণ করিয়ে দেন যে তাঁর সরকার প্রতিটি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছে, যাতে গ্রামের বাসিন্দারা নগরের বাসিন্দাদের মতো সুবিধা উপভোগ করতে পারে।
চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তো সবার বাড়ি সাফ করে দিয়ে আসতে পারবে না। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা যার যার নিজের ব্যাপার। নিজেকেই সচেতন করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা বেশি দরকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যার যার ঘরবাড়িতে মশা যেন না থাকে সেদিকে বেশি দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের দেশের একটা সমস্যা হচ্ছে যা কিছু দোষ সব সরকারের। গবেষণায় মনোযোগ দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার খুব অভাব, হাতেগোনা কয়েকজন গবেষণা করেন। মশা কামড় দিলেও সেটা সরকারের দোষ, এখন কত মশা মারবে! মশার তো প্রজননের হার অনেক বেশি। সেই প্রজনন যাতে না হয় সেজন্য নিজের বাড়ি ঘর সাফ রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরের মেয়র সাহেব বললেন- এত বড়লোক বিশাল বিশাল ফ্ল্যাটে থাকে, তাদের বাড়ির ভিতরে মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে। সেটা তারা সাফ করবেন না, সরকারকে বোধহয় সাফ করে দিয়ে আসতে হবে। বাড়ি তাদের, জায়গা তাদের, মেন্টেননসের জন্য একটা সার্ভিস চার্জ দিচ্ছে। কিন্তু তারা সেটা সাফ করবেন না। কে করে দিবে? সরকার যেয়ে করে দিবে। সরকার তো সবার ঘরবাড়ি যেয়ে যেয়ে সাফ করে দিয়ে আসতে পারবে না। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা যার যার নিজের ব্যাপার। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্য মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতার সংবিধানেও স্বাস্থ্যের অধিকার গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন, দেশের প্রত্যেকটা মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। এটাকে রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য যুদ্ধাহত মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন এদেশের চিকিৎসকরা। ডিএমসি অ্যালামনাই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. জুলফিকার রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ী সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বেসরকারি খাতের অবদান, বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয় নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। আগামী শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলন’ শীর্ষক এই সম্মেলন উপলক্ষে গত রোববার এফবিসিসিআই এর অধিভুক্ত সব চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে দেশের বেসরকারি খাত। দেশের ৮২ ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য আসে বেসরকারি খাত থেকে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বেসরকারি খাত কী ভূমিকা রাখবে সেসব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে এই সম্মেলনে। তিনি আরও বলেন, করোনাকালে সৃষ্ট সংকট অনেকখানি কাটিয়ে ওঠা গেলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এই কঠিন সময় অতিক্রমে সরকার ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সক্ষমতাকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করার প্রয়াস হিসেবে বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের প্রাপ্তি নিয়ে আমরা একটি বই বের করছি। ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বই হস্তান্তর করা হবে। আমাদের এই প্রকাশনায় সামিটে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞদের মতামতের পাশাপাশি সামিটে আলোচনা হওয়া সুপারিশ ও পলিসিগুলো আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেবো। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথাগুলোও প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানান বক্তারা। এসময় অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরি বাবু, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, মনোয়ারা হাকিম আলী, বর্তমান সহসভাপতি এম এ মোমেন, আমিনুল হক শামিম, আমিন হেলালী, হাবিব উল্লাহ ডন, এম এ রাজ্জাক খান, ফরেইন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামির সাত্তার, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনসহ এফবিসিসিআই এর অধিভুক্ত চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।