জনবলের অভাবে ডিমের বাজার তদারকি করতে পারিনি: ভোক্তার ডিজি

- আপডেট সময়ঃ ১১:৩০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩
- / ১২৯ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিরবচ্ছিন্ন তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, কিন্তু জনবলের সীমাবদ্ধতায় আমরা সত্যিকার অর্থে ডিমের ক্ষেত্রে সে ফোকাসটি দিতে পারিনি। আজ সোমবার ডিমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (ফার্ম ও করপোরেট), এজেন্ট-ডিলার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ অপারগতা স্বীকার করেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, আমাদের আমিষের মূল চাহিদা পূরণ করছে ডিম এবং ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু এ খাতে প্রচুর অস্থিরতা বিরাজ করছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে। এজন্য ক্ষুদ্র খামারিদের ১৫ শতাংশের ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এই খাতে শৃঙ্খলা আসা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, উৎপাদক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রিতেরা যদি পাকা রশিদ ব্যবহার করেন, তাহলে আমরা তদারকি করতে পারি কত টাকায় ক্রয়-বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই পাকা রশিদ ব্যবহার না করার কারণে দাম বাড়ার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করছে। এ বিশৃঙ্খলা রোধ করার বড় সমাধান হতে পারে পাকা রশিদ ব্যবহার। এ জন্য তিনি আগামীকাল বুধবার থেকে ডিম উৎপাদনকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ফার্ম এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ডিম কেনা-বেচার সময় পাকা রশিদ ব্যবহারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কেউ যদি ওই দিন থেকে পাকা রশিদ ব্যবহার না করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা শুধু পাকা রশিদটা নিশ্চিত করতে চাই। ১৬ আগস্ট থেকে যেখানে পাকা রশিদ পাওয়া যাবে না, সেখানে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবো। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১২টায় ডিম বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটি তদারকিতে ওইদিন থেকে আমরা মাঠে আরও জোরদারভাবে কাজ করবো। এছাড়া তিনি ডিম উৎপাদনকারী বড় বড় যে ৫-৬টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোকে ১৬ আগস্ট থেকে প্রতিদিন সকাল বেলা ডিম বিক্রির তথ্য ভোক্তা অধিদপ্তরকে দেওয়ার আহ্বান জানান। ডিম আমদানির সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন আমরা যদি বর্ডার খুলে দেই এবং ভারত থেকে ৬ রুপিতে ডিম আসে, তাহলে দেশে একটি পোল্ট্রিও টিকতে পারবে না, একটি করপোরেট গ্রুপও কম্পিটিশন করতে পারবে না। আমরা আপনাদের (ব্যবসায়ী) ততক্ষণ প্রোটেকশন দেব, যতক্ষণ আপনারা বাজার অস্থির করবেন না। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে যদি ডিম প্রতি ৪ টাকা বেড়ে যায়, তাহলে তো প্রোটেকশন দিব না। কারণ সরকারের ব্যবসায়ীদের প্রোটেকশন দেওয়ার পাশাপাশি ১৭ কোটি মানুষের কথাও ভাবতে হয়। তিনি বলেন, আমরা গত বছর আগস্ট মাসে ডিম নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি। তার প্রেক্ষিতে আমরা সরকারের কাছেও কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছিলাম। এ বছর আবার একই সময়ে ডিমের বাজার অস্থির আচরণ করছে। প্রতি ডিমে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। তার প্রেক্ষিতে আমরা গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন বাজার ও আড়তে অভিযান পরিচালনা করেছি। গত বছর আমরা যেসব সমস্যা পেয়েছি, এবার একই ধরনের সমস্যা পেয়েছি। এ সময় ডিম উৎপাদনকারী বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ফার্মের প্রতিনিধি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের প্রতিনিধি ও বাজার মালিক সমিতি ডিমের দাম বাড়ার পেছনে বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের কথা তুলে ধরেন। পিপলস পোল্ট্রি ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল রহমান বলেন, খামার টিকলে আমরা ডিম পাবো, খামার না টিকলে ডিম পাবো না। ডিমের বাজারের এ অস্থিরতাকে দূর করতে খামারিদের টিকিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে ডিমের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে খামারিরা বাঁচবে। পাশাপাশি ডিম বিক্রিতে পাইকারি, খুচরা ও আড়তদাররা কত লাভ করবেন সেটিও নির্ধারণ করতে হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. শহীদুল আলম বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই বাজারের এ অস্থিরতা কেটে যাবে। এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র অতিরিক্ত মহাসচিব শাহ মোহাম্মদ আবদুল খালেক বলেন, এফবিসিসিআই যেমন ব্যবসায়ীদের পক্ষে আছে, তেমনি ভোক্তাদের পক্ষেও আছে। তাই ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, পোল্ট্রি খাতের অস্থিরতা দূর করতে আমরা একটি নীতিমাল করছি। যা ফাইনাল স্টেজে আছে। পাশাপাশি আমরা একটি পোল্ট্রি বোর্ড করারও চিন্তাভাবনা করছি। এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রোগ্রাম কর্ডিনেটর আহমেদ ইকরামুল্লাহ, তেঁজগাও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আবদুল জব্বার মন্ডলসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।