২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় খালেদা-তারেক জড়িত: শেখ হাসিনা

- আপডেট সময়ঃ ১০:২২:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০২৩
- / ১৪৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত ছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় বাংলাদেশের মানুষ তাদের ছাড়বে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। আজ সোমবার ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরআগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আলোচনা সভার শুরুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ছুটে আসে। আহতদের সাহায্য করে। সেদিন কিন্তু কেউ আসেনি। আমাদের নেতাকর্মীরা যারা সাহায্যের জন্য ছুটে আসে তাদের ওপর পুলিশ উল্টো লাঠিচার্জ শুরু করে। তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস মারা শুরু করে। শুধু এই হত্যাকা- করা না, এর কোনো আলামতই রক্ষা করা হয়নি। তিনি বলেন, এই ঘটনার পর পরই সিটি করপোরেশন থেকে তখনকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা লোক পাঠিয়ে সব আলামত হুজ পাইপ দিয়ে পরিষ্কার করতে চায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে নানককে বললাম, এই জায়গায় লাল পতাকা দিয়ে সেগুলে রক্ষা করো। দুইটি গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোও আলামত হিসেবে রক্ষা করা হয়নি। এক সেনা অফিসার এগুলি নিয়েছিল। সে বলেছিল এগুলি নষ্ট করা যাবে না, আলামত হিসেবে থাকবে। সেই জন্য সে চাকরিচ্যুত হয়েছিল। অর্থাৎ কোনো আলামতও রাখতে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালগুলোয় বিএনপির মানসিকতার ডাক্তাররা কেউ সেদিন আসেনি চিকিৎসা করতে। চিকিৎসার জন্য যা দরকার সুই থেকে শুরু করে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের ডাক্তার যারা তারা ছুটে গিয়েছিল, তারা তালা ভেঙ্গে এগুলো নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। লাশের ওপর লাশ পড়ে আছে। সেদিন আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কেউ গাড়ি পাঠায়নি, লোক পাঠায়নি। আমি আমার সবাইকে বলি চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন তো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কি ভূমিকা পালন করেছিলেন সে সেটাই প্রশ্ন। কোনো রকম কোনো উদ্যোগ নিলেন না আলামত রক্ষা করতে। এতে কি প্রমাণ হয়? গ্রেনেড হামলায় সম্পূর্ণভাবে খালেদা-তারেক গং জড়িত এতে তো কোনো সন্দেহ নাই। এবং তদন্তেও সেটা বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা কারা হলো। আমরা বিদেশে ছিলাম, তাই বেঁচে গিয়েছিলাম। এই হত্যাকা-ে জিয়াউর রহমান যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল এটা খুনি রশিদ-ফারুকের বিবিসির সাক্ষাৎকারে বেরিয়ে এসেছে। জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছিল সবাইকে শেষ করে দিতে। তারও তো দায়িত্ব ছিল সে তো উপ-সেনাপ্রধান ছিল, কোনো ভূমিকা তো রাখেনি। তিনি আরও বলেন, খুনি বেইমান মোস্তাক জিয়াকে সেনাবাহিনীর প্রধান নিয়োগ দেয়। কি সখ্যতা ছিল, যেহেতু এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাই জিয়াকে পুরস্কৃত করে মোস্তাক। তারা তো হত্যা, খুনের রাজনীতিতে পারদর্শি। এমনকি আমেরিকায় বিএনপি-জামায়াত এফবিআইএর অফিসারকে তারা হায়ার করে জয়কে কিডন্যাপ করে হত্যা চেষ্টা করে। আমরা তো এ ঘটনা কোনো দিন জানতে পারিনি। জেনেছি কিভাবে ওই এফবিআই অফিসারের বিরুদ্ধে আমেরিকায় এফবিআই মামলা করে তার দুর্নীতির জন্য। আর ওই কোর্টে তখন বেরিয়ে আসে এ বিএনপির কাছে টাকা খেয়েছে জয়কে কিডন্যাপের চেষ্টা করেছে। সেই মালার যে রায় সেই রায়েই বেরিয়ে আসে শফিক রেহমান আর মাহমুদুর রহমানের নাম। আমাদের পরিবারকে শেষ করা। আওয়ামী লীগের সভাপতি বলন, খুনের রাজনীতি করা, মানুষ হত্যা, একটি দলকে নিশ্চিহ্ন বা পরিবারকে হত্যা করা-এই রাজনীতি তো বিএনপি করে। খালেদা জিয়া করে। এটা তো মানুষের কাছে স্পষ্ট। ২১ আগস্ট তো আমাদের চোখের সামনে। বার বারই তো তারা আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ আসার পর থেকেই তো আমার ওপর বার বার হামলা হয়েছে। হ্যাঁ, বেঁচে গেছি আমি বার বার। জানি না কেন? এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন। কেন বার বার তিনি মৃত্যুর হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তারা হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। চক্রান্ত করেছে। যে রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়েছে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তাদের মিথ্যাচার মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন। তাদের হাতে তো রক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে আইভি রহমানসহ আমাদের দলের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার বিচারের রায় হয়েছে। এই রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত। কিছু এখানে আছে তারা কারাগারে, কিন্তু মূল হোতা তো বাইরে। সে তো মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই সুযোগ নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে চলে গেছে। এখন সেই টাকা খরচ করে। তিনি বলেন, সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক, বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না। বাংলাদেশের মানুষ ওদেরকে ছাড়বে না। তারা বাংলাদেশের মানুষকে চেনে নাই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে জাতির পিতাকে সরাতে চেষ্টা করেছিল, তার নামটা মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। আবার জাতির পিতার নাম ফিরে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে এসেছ। কাজেই এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। শেখ হাসিনা বলেন, যারা এখনও স্পিøন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় কাতর তাদের বলব, আপনারা মানুষের কাছে যান, বলেন যে ওই খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া কিভাবে আপনাদের জীবনটাকে ধ্বংস করেছে। কিভাবে দেশ লুটপাট করেছে, কিভাবে দেশের স্বাধীনতা চেতনা ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের হোতা জিয়া, খালেদা, তারেক ও জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীরা। আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা এখানকার মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তা ওই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের শেখানো বুলি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ তারা ভোটের অধিকারের কথা বলে, আর কিছু আছে তাদের ভাড়া করা, তারা মানবাধিকারের কথা বলে। যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নে তোলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাদের আপনজন হারিয়েছে বিএনপি জামায়াতের কাছে, তাদের মানবাধিকার কোথায়? আমরা বিচার পাইনি। আমরা কেন বিচার বঞ্চিত ছিলাম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা দেখি বাংলাদেশের মানবাধিকারের কথা বলে। তাদের শেখানো বুলি যারা বলে, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে, যার হোতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াসহ জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীরা। তারা এখনো তা করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ হয়েছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার আমরা করি। কিন্তু আমরা তো বিচার পাইনি। কেন ৩৩ বছর সময় লেগেছে বিচার পেতে? কী অপরাধ করেছিলাম যে, আমরা বিচার পাইনি? বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার সময়কার মর্মান্তিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে র্যালি করছিলাম। আর সেখানেই প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে গ্রেনেড হামলা হয়। যে গ্রেনেড ব্যবহার হয় রণক্ষেত্রে, ছোঁড়া হয় যুদ্ধের সময়, তা এখানে ছোঁড়া হলো। যখন আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি, মানুষের নিরাপত্তার জন্য, তখন ১৩টি গ্রেনেড হামলা হলো। আর কতগুলো যে ওদের হাতে ছিল কে জানে! প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বক্তৃতা শেষ করেছি, ফটোগ্রাফাররা আমাকে ছবি তোলার জন্য একটু দাঁড়াতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল গ্রেনেড হামলা। হানিফ ভাই আমাকে টেনে নিচে বসিয়ে দিলেন। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরা হলো। গ্রেনেড ট্রাকের ওপর না পড়ে ট্রাকের ডালার সঙ্গে লেগে নিচে পড়ে। সমস্ত স্পিøন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায়। তার সমস্ত গা বেয়ে রক্ত আমার কাপড়ে এসে পড়ছে। প্রথমে তিনটি গ্রেনেড, তারপর একটু বিরতির পর আবার একটার পর আরেকটা গ্রেনেড মারা হলো। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত। ঘটনায় ২২ জন মৃত্যুবরণ করেন। হাজারের কাছাকাছি নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে ৫০০ জনের বেশি গুরুতর আহত হন। তিনি বলেন, সেখানে এমন একটি পরিবেশ, কেউ উদ্ধার করতে আসতে পারেনি। যারা উদ্ধার করতে এসেছিল, তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করা হয়। আমার প্রশ্ন কেন এই টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ? এখানে অনেক আহত নেতারাই বসে আছেন, এখনো যাদের শরীরে সেই স্পিøন্টার রয়ে গেছে। সেই যন্ত্রণা নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শরীরও ঝাঁঝরা। এখানে অনেকেই আছেন, কত নাম বলব, সবাই আহত। সাংবাদিকও আহত হন। এ ধরনের ঘটনা একটি রাজনৈতিক দলের ওপর হতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। কোনোদিন এ ধরনের ঘটনা দেখা যায়নি। আমি বেঁচে গিয়েছিলাম, যখন ফিরি, আমার সারা শরীরে রক্ত। রেহানা (শেখ রেহানা) দেখে সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। আমি বলি, আমার কিছু হয়নি। আমি তো চলে এসেছি, কিন্তু ওখানে কি অবস্থা আমি কিছু জানি না। লাশের ওপর লাশ পড়ে আছে। দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা আমাদের নেতাকর্মীদের তো হামলা করেছে, সাধারণ মানুষও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ঘাতক-ঘাতকই। ওরা তো জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ওরা তো জনগণকে হত্যা করেছে। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। পেট্রোল ঢেলে আগুন দিচ্ছে। হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করলেও ছাড়ে না। এটাই তো বিএনপির আসল চেহারা। এটিই বিএনপির চরিত্র। এর নেতৃত্ব খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া তারাই তো দিচ্ছে। তারা ক্ষমতায় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে। মানুষকে কী দিয়েছে? মানুষ তো ক্ষুধার্ত ছিল। তিনি বলেন, সজাগ থাকতে হবে, ওই খুনিদের হাতে যেন এদেশের মানুষ আর নিগৃহীত হতে না পারে, অগ্নিসন্ত্রাস আর জুলমবাজি করে এদেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, খুনি, দুষ্কৃতকারী, অস্ত্র চোরাকারবারী, ঘুষখোররা যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ওই খুনিদের প্রতি ঘৃণা জনগণের। সবাই নিরাপদ থাকুন, ভালো থাকুন। যতক্ষণ বেঁচে আছি, দেশের মানুষের সেবা করে উন্নত জীবন দিয়ে যাব। মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।