ঢাকা, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

দিনমজুর-নিম্ন আয়ের লোকদের খুব কষ্ট হচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:৫৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩
  • / ১১৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতিতে শহরের দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের লোকদের খুব কষ্ট হচ্ছে। এমনটি বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক কারণে এটি হয়েছে। সামনে নির্বাচন, কাজেই এটি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলা ঠিক হবে না। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে, যদি আপনারা ইতিবাচক হন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক কারণে এটি হয়েছে। কাজেই এটি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলা ঠিক হবে না। এটি নির্ভর করে আপনারা কতটুকু ইতিবাচক হবেন, তার ওপর। আপনার তো এলাকায় গিয়ে ভোট চাইতে হবে, ভোটাররা যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করে, তাহলে কী বলবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এলাকার মানুষের কষ্ট নেই। কারণ তারা আলুর দাম পাচ্ছে। আমাদের তো কৃষিভিত্তিক এলাকা। একেক এলাকা একেক রকম। ঢাকা শহরে যে নির্বাচন করবে, তার অনেক সমস্যা। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার এলাকায় ১০টা মোটরসাইকেল ছিল, ২০০১ সালে। তখন আমি প্রথম নির্বাচন করি। আজ সেখানে হাজার হাজার মোটরসাইকেল। মন্ত্রী বলেন, আমার এলাকা আলুভিত্তিক, কৃষিভিত্তিক। তাদের কোনো কষ্ট নেই। সেখানকার নারীরা দিনে তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে, চারবার করে স্যান্ডেল বদলাচ্ছে। আমি খুব ভালো জানি, আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সারা দেশের অবস্থাটা ভিন্ন। শহরের যারা দিনমজুর, নিম্নশ্রেণীর তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করে শুক্রবার নতুন করে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, দেখুন, একশ ভাগ শান্তি ঠিক করা যায় না। কেউ খুশি হবেন, কেউ অখুশি হবেন। যারা খুশি না, তারা যদি ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন, তাহলে খুশি হতেন। আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, যেখানে দুপক্ষেরই রক্ষা হয়। ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট করা যায় না। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনই কেবল বাড়ানো হয়নি, তাদের বেসিকের অ্যামাউন্টও বাড়ানো হয়েছে। আপনারা জানেন, সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে দিনে তারা দুই ঘণ্টা ওভার টাইম করেন, একটা হাজিরা বোনাস পান। কাজেই যার বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, তিনি কিন্তু ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা তুলবে। কথাটি সাধারণভাবে জানা যায় না। এরপরও প্রত্যেককে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে, তাতে মাসে অন্তত ৫০০ টাকা সাশ্রয় হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটা ভালো বলে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তারপরও কিছু বাদ থেকে যায়। আমার মনে হয়, অধিকাংশই তা মেনে নেবে। এদিকে, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার পর আপনারা আমদানির সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু বাজার মনিটরিং করার কারণে আগে থেকেই তো জানেন, তাহলে সিদ্ধান্তটা আগে নেন না কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি সাংবাদিক, যথেষ্ট বুদ্ধিমান। যেমন ধরেন, আলু আমদানি করতে হলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আমরা যে দুই মাস আগে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি, তখন তাদের অনুমতি নিয়েছি। তারাও এটা চিন্তা করে। একইভাবে ডিমের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। যদি পেছনের সমর্থন না পাই, তাহলে আমরা অনেক সময় করতে পারি না। সংকট যখন প্রকট হয়ে যায়, তখন তারা মেনে নেন, কিন্তু তখন আবার অনেক দেরি হয়ে যায়। আলু ও ডিমে ছাড়াও সারা বছর বাজারে অস্বস্তিই থেকে যাচ্ছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরবরাহ যদি ভালো থাকে, তাহলে সমস্যা হয় না। আবার আলু যদি অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন প্রশ্ন করা হয়, কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না, আপনি কী ব্যবস্থা করেছেন? দুই ভাবেই সমস্যা। উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেই প্রচারটা করেন।সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রীর কোনো সুখবর আছে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা হলো আমাদের দেশের উৎপাদন, আরেকটি আমদানি করে আনা। বিভিন্ন জিনিসের বিভিন্ন রকম অবস্থা। পেঁয়াজের দাম কবে কমবে? এটা আমরা সবাই বুঝি যে যখন নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে, কৃষক যখন ফসল ঘরে তুলবে। হয়ত আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা বাজারে উঠবে, তখন হয়ত পেঁয়াজের দাম কমবে। আবার আলু যেমন ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে উঠতে শুরু করবে, তখন দাম কমবে। এখন এটা গেলো নিজেদের উৎপাদনের বিষয়। আবার যখন আমরা তেল ও চিনির কথা বলি, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে কী দাম আছে, সেটার ওপর নির্ভর করে। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দাম বাড়বে বা কমবে। পেঁয়াজের কথা বলি, আমাদের যা প্রয়োজন, তার চেয়ে ২০ শতাংশ ঘাটতি আছে। এটা আমরা আমদানি করে পূরণ করি, যার ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। সেখানেও দাম বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় বাজারে ৮০ রুপি প্রতি কেজি পেঁয়াজ, যা আমাদের টাকায় ১০৫ বা ১১০ টাকা করে। গতকাল (গত মঙ্গলবার) দেখলাম, ওরা ২৫ রুপি ভর্তুকি দরে মানুষকে দিতে শুরু করেছে। আমাদের পেঁয়াজ প্রায় শেষ। যে কারণে পেঁয়াজের দামটা অনেকখানি নির্ভর করে আমাদের নিজস্ব উৎপাদনের ওপরে। পাশাপাশি, পেঁয়াজের নূন্যতম দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ভারত, ৮০০ ডলার। যেটা আমাদের টাকায় প্রতি কেজি প্রায় ৯৫ টাকা পড়ে। সেটার নিচে ওরা রপ্তানি করতে পারবে না। ওই টাকায় আমরা আমদানি করলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ কিংবা ১২৫ টাকা পড়ে যাবে। এখন আমাদের নিজেদের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। টিপু মুনশি বলেন, একইভাবে আলু আমাদের যা আছে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে, তা প্রয়োজন অনুসারে টাইট অবস্থা। আশা করি, ডিসেম্বরের শেষের দিকে আলু উঠতে শুরু করবে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একটা আগাম আলু আসে উত্তরাঞ্চল থেকে, সেটা এলে দাম কিছুটা কমবে। আমদানিও শুরু হয়েছে, বাজারে সেটার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মন্ত্রী বলেন, আশা করি, আমদানিটা ভালোভাবে এলে কিছুটা সাশ্রয় হবে। ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি, বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লেগেছে। এরইমধ্যে প্রথম একটা চালান ঢুকে গেছে। তার প্রভাব বাজারে দেখছি, সেই ডিমটা ১১ কিংবা সাড়ে ১১ টাকায় পাওয়া যায়। আশা করি, আরও আসলে ডিমের যে দামটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেটায় পাওয়া যাবে। আমাদের দেশীয় পণ্যের দাম বাড়ে কেন, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সবজির দাম বাড়ছে কখনো। এছাড়া, বৃষ্টি, পরিবহন ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে দাম বাড়ছে। তবে গত দুতিন ধরে ২০-২৫ টাকা করে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। আর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে শীতের সবজির দাম কমে যাবে। যখন মুদ্রাস্ফীতি থাকে, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দামের ওপর মূল্যস্ফীতির একটা বড়ো প্রভাব বিস্তার করে। এখন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি। সেটার সমাধান করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কেউ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে পেঁয়াজ-আলু আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কমে পাওয়া শুরু করবেন। নিজেদের উৎপাদনটা তখন শুরু হয়ে যাবে। এলাকার মানুষের কষ্ট নেই উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তার এলাকার নারীরা দিনে তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, এই প্রভাব কাটানো কি সম্ভব হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে, যদি আপনারা ইতিবাচক হন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক কারণে এটা হয়েছে। কাজেই এটিকে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলা ঠিক হবে না। এটা নির্ভর করে আপনারা কতটুকু ইতিবাচক হবেন, তার ওপর। আপনাদের তো এলাকায় গিয়ে ভোট চাইতে হবে, ভোটররা যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করে, তিনি বলেন, ধরেন, আমার এলাকা, আমার এলাকার মানুষের কষ্ট নেই। কারণ তারা আলুর দাম পাচ্ছে। আমাদের তো কৃষিভিত্তিক এলাকা। একটা এলাকা একেক রকম। ঢাকা শহরে যে নির্বাচন করবে, তার অনেক সমস্যা। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার এলাকায় ১০টা মোটরসাইকেল ছিল, ২০০১ সালে। তখন আমি প্রথম নির্বাচন করি। আজকে সেখানে হাজার হাজার মোটরসাইকেল। আমার এলাকা আলুভিত্তিক। কৃষিভিত্তিক। তাদের কোনো কষ্ট নেই। সেখানকার নারীরা দিনে তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। চারবার করে স্যান্ডেল বদলাচ্ছে। আমি খুব ভালো জানি আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সারা দেশের অবস্থাটা ভিন্ন। শহরের যারা দিনমজুর, নিম্নশ্রেণির তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করে শুক্রবার নতুন করে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন, একশ ভাগ শান্তি ঠিক করা যায় না। কেউ, কেউ খুশি হবেন, কেউ অখুশি হবেন। যারা খুশি না, তারা যদি ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন, তাহলে তারা খুশি হতেন। আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, যেখানে দু’পক্ষই রক্ষা হয়। সেখানে ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট করা যায় না। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনই কেবল বাড়ানো হয়নি, তাদের বেসিকের অ্যামাউন্টও বাড়ানো হয়েছে। আপনারা জানেন, সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে দিনে যদি দুই ঘণ্টা ওভার টাইম করে, একটা হাজিরা বোনাস পায় তারা, কাজেই যারা বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, সেই কিন্তু ষোলো থেকে সতেরো হাজার টাকা তুলবে। এই কথাটা সাধারণভাবে জানা যায় না। এরপর প্রত্যেককে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে, তাতে মাসে অন্তত ৫০০ টাকা সাশ্রয় হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটা ভালো বলে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তারপরেও কিছু বাদ থেকে যায়। আমার মনে হয়, অধিকাংশ মানুষই সেটা মেনে নেবেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

দিনমজুর-নিম্ন আয়ের লোকদের খুব কষ্ট হচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

আপডেট সময়ঃ ০৭:৫৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতিতে শহরের দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের লোকদের খুব কষ্ট হচ্ছে। এমনটি বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক কারণে এটি হয়েছে। সামনে নির্বাচন, কাজেই এটি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলা ঠিক হবে না। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে, যদি আপনারা ইতিবাচক হন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক কারণে এটি হয়েছে। কাজেই এটি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলা ঠিক হবে না। এটি নির্ভর করে আপনারা কতটুকু ইতিবাচক হবেন, তার ওপর। আপনার তো এলাকায় গিয়ে ভোট চাইতে হবে, ভোটাররা যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করে, তাহলে কী বলবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এলাকার মানুষের কষ্ট নেই। কারণ তারা আলুর দাম পাচ্ছে। আমাদের তো কৃষিভিত্তিক এলাকা। একেক এলাকা একেক রকম। ঢাকা শহরে যে নির্বাচন করবে, তার অনেক সমস্যা। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার এলাকায় ১০টা মোটরসাইকেল ছিল, ২০০১ সালে। তখন আমি প্রথম নির্বাচন করি। আজ সেখানে হাজার হাজার মোটরসাইকেল। মন্ত্রী বলেন, আমার এলাকা আলুভিত্তিক, কৃষিভিত্তিক। তাদের কোনো কষ্ট নেই। সেখানকার নারীরা দিনে তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে, চারবার করে স্যান্ডেল বদলাচ্ছে। আমি খুব ভালো জানি, আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সারা দেশের অবস্থাটা ভিন্ন। শহরের যারা দিনমজুর, নিম্নশ্রেণীর তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করে শুক্রবার নতুন করে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, দেখুন, একশ ভাগ শান্তি ঠিক করা যায় না। কেউ খুশি হবেন, কেউ অখুশি হবেন। যারা খুশি না, তারা যদি ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন, তাহলে খুশি হতেন। আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, যেখানে দুপক্ষেরই রক্ষা হয়। ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট করা যায় না। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনই কেবল বাড়ানো হয়নি, তাদের বেসিকের অ্যামাউন্টও বাড়ানো হয়েছে। আপনারা জানেন, সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে দিনে তারা দুই ঘণ্টা ওভার টাইম করেন, একটা হাজিরা বোনাস পান। কাজেই যার বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, তিনি কিন্তু ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা তুলবে। কথাটি সাধারণভাবে জানা যায় না। এরপরও প্রত্যেককে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে, তাতে মাসে অন্তত ৫০০ টাকা সাশ্রয় হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটা ভালো বলে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তারপরও কিছু বাদ থেকে যায়। আমার মনে হয়, অধিকাংশই তা মেনে নেবে। এদিকে, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার পর আপনারা আমদানির সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু বাজার মনিটরিং করার কারণে আগে থেকেই তো জানেন, তাহলে সিদ্ধান্তটা আগে নেন না কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি সাংবাদিক, যথেষ্ট বুদ্ধিমান। যেমন ধরেন, আলু আমদানি করতে হলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আমরা যে দুই মাস আগে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি, তখন তাদের অনুমতি নিয়েছি। তারাও এটা চিন্তা করে। একইভাবে ডিমের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। যদি পেছনের সমর্থন না পাই, তাহলে আমরা অনেক সময় করতে পারি না। সংকট যখন প্রকট হয়ে যায়, তখন তারা মেনে নেন, কিন্তু তখন আবার অনেক দেরি হয়ে যায়। আলু ও ডিমে ছাড়াও সারা বছর বাজারে অস্বস্তিই থেকে যাচ্ছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরবরাহ যদি ভালো থাকে, তাহলে সমস্যা হয় না। আবার আলু যদি অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন প্রশ্ন করা হয়, কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না, আপনি কী ব্যবস্থা করেছেন? দুই ভাবেই সমস্যা। উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেই প্রচারটা করেন।সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রীর কোনো সুখবর আছে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা হলো আমাদের দেশের উৎপাদন, আরেকটি আমদানি করে আনা। বিভিন্ন জিনিসের বিভিন্ন রকম অবস্থা। পেঁয়াজের দাম কবে কমবে? এটা আমরা সবাই বুঝি যে যখন নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে, কৃষক যখন ফসল ঘরে তুলবে। হয়ত আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা বাজারে উঠবে, তখন হয়ত পেঁয়াজের দাম কমবে। আবার আলু যেমন ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে উঠতে শুরু করবে, তখন দাম কমবে। এখন এটা গেলো নিজেদের উৎপাদনের বিষয়। আবার যখন আমরা তেল ও চিনির কথা বলি, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে কী দাম আছে, সেটার ওপর নির্ভর করে। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দাম বাড়বে বা কমবে। পেঁয়াজের কথা বলি, আমাদের যা প্রয়োজন, তার চেয়ে ২০ শতাংশ ঘাটতি আছে। এটা আমরা আমদানি করে পূরণ করি, যার ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। সেখানেও দাম বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় বাজারে ৮০ রুপি প্রতি কেজি পেঁয়াজ, যা আমাদের টাকায় ১০৫ বা ১১০ টাকা করে। গতকাল (গত মঙ্গলবার) দেখলাম, ওরা ২৫ রুপি ভর্তুকি দরে মানুষকে দিতে শুরু করেছে। আমাদের পেঁয়াজ প্রায় শেষ। যে কারণে পেঁয়াজের দামটা অনেকখানি নির্ভর করে আমাদের নিজস্ব উৎপাদনের ওপরে। পাশাপাশি, পেঁয়াজের নূন্যতম দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ভারত, ৮০০ ডলার। যেটা আমাদের টাকায় প্রতি কেজি প্রায় ৯৫ টাকা পড়ে। সেটার নিচে ওরা রপ্তানি করতে পারবে না। ওই টাকায় আমরা আমদানি করলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ কিংবা ১২৫ টাকা পড়ে যাবে। এখন আমাদের নিজেদের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। টিপু মুনশি বলেন, একইভাবে আলু আমাদের যা আছে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে, তা প্রয়োজন অনুসারে টাইট অবস্থা। আশা করি, ডিসেম্বরের শেষের দিকে আলু উঠতে শুরু করবে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একটা আগাম আলু আসে উত্তরাঞ্চল থেকে, সেটা এলে দাম কিছুটা কমবে। আমদানিও শুরু হয়েছে, বাজারে সেটার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মন্ত্রী বলেন, আশা করি, আমদানিটা ভালোভাবে এলে কিছুটা সাশ্রয় হবে। ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি, বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লেগেছে। এরইমধ্যে প্রথম একটা চালান ঢুকে গেছে। তার প্রভাব বাজারে দেখছি, সেই ডিমটা ১১ কিংবা সাড়ে ১১ টাকায় পাওয়া যায়। আশা করি, আরও আসলে ডিমের যে দামটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেটায় পাওয়া যাবে। আমাদের দেশীয় পণ্যের দাম বাড়ে কেন, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সবজির দাম বাড়ছে কখনো। এছাড়া, বৃষ্টি, পরিবহন ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে দাম বাড়ছে। তবে গত দুতিন ধরে ২০-২৫ টাকা করে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। আর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে শীতের সবজির দাম কমে যাবে। যখন মুদ্রাস্ফীতি থাকে, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দামের ওপর মূল্যস্ফীতির একটা বড়ো প্রভাব বিস্তার করে। এখন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি। সেটার সমাধান করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কেউ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে পেঁয়াজ-আলু আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কমে পাওয়া শুরু করবেন। নিজেদের উৎপাদনটা তখন শুরু হয়ে যাবে। এলাকার মানুষের কষ্ট নেই উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তার এলাকার নারীরা দিনে তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, এই প্রভাব কাটানো কি সম্ভব হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে, যদি আপনারা ইতিবাচক হন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক কারণে এটা হয়েছে। কাজেই এটিকে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলা ঠিক হবে না। এটা নির্ভর করে আপনারা কতটুকু ইতিবাচক হবেন, তার ওপর। আপনাদের তো এলাকায় গিয়ে ভোট চাইতে হবে, ভোটররা যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করে, তিনি বলেন, ধরেন, আমার এলাকা, আমার এলাকার মানুষের কষ্ট নেই। কারণ তারা আলুর দাম পাচ্ছে। আমাদের তো কৃষিভিত্তিক এলাকা। একটা এলাকা একেক রকম। ঢাকা শহরে যে নির্বাচন করবে, তার অনেক সমস্যা। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার এলাকায় ১০টা মোটরসাইকেল ছিল, ২০০১ সালে। তখন আমি প্রথম নির্বাচন করি। আজকে সেখানে হাজার হাজার মোটরসাইকেল। আমার এলাকা আলুভিত্তিক। কৃষিভিত্তিক। তাদের কোনো কষ্ট নেই। সেখানকার নারীরা দিনে তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। চারবার করে স্যান্ডেল বদলাচ্ছে। আমি খুব ভালো জানি আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সারা দেশের অবস্থাটা ভিন্ন। শহরের যারা দিনমজুর, নিম্নশ্রেণির তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করে শুক্রবার নতুন করে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন, একশ ভাগ শান্তি ঠিক করা যায় না। কেউ, কেউ খুশি হবেন, কেউ অখুশি হবেন। যারা খুশি না, তারা যদি ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন, তাহলে তারা খুশি হতেন। আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, যেখানে দু’পক্ষই রক্ষা হয়। সেখানে ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট করা যায় না। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনই কেবল বাড়ানো হয়নি, তাদের বেসিকের অ্যামাউন্টও বাড়ানো হয়েছে। আপনারা জানেন, সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে দিনে যদি দুই ঘণ্টা ওভার টাইম করে, একটা হাজিরা বোনাস পায় তারা, কাজেই যারা বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, সেই কিন্তু ষোলো থেকে সতেরো হাজার টাকা তুলবে। এই কথাটা সাধারণভাবে জানা যায় না। এরপর প্রত্যেককে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে, তাতে মাসে অন্তত ৫০০ টাকা সাশ্রয় হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটা ভালো বলে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তারপরেও কিছু বাদ থেকে যায়। আমার মনে হয়, অধিকাংশ মানুষই সেটা মেনে নেবেন।