হাসিনার ইচ্ছায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট

- আপডেট সময়ঃ ০২:০৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৭২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট বানিয়ে শ্রমিক পাঠানোর দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ইচ্ছা ও স্বাক্ষরেই। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো সারসংক্ষেপে ‘মালয়েশিয়ার সরকার কর্তৃক নির্বাচিত বাংলাদেশী ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশী কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা প্রসঙ্গে’ এমন তথ্য উল্লেখ রয়েছে।
শেখ হাসিনার স্বাক্ষর থাকার পাশাপাশি সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার দফতরের সচিব বেগম শামছুন নাহার স্বাক্ষরিত চার পাতার পাঠানো ওই গোপন প্রতিবেদনটি নয়া দিগন্তের হাতে এসেছে। প্রতিবেদনে ঢাকার প্রভাবশালী ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের সমন্বয়ে কিভাবে জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ‘সিন্ডিকেট’ গঠন এবং ১০ এজেন্সির প্রত্যেকের সাথে আরো ২০টি করে এজেন্সিকে অন্তর্ভুক্ত করে (২০০ রিক্রুটিং এজেন্সি) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে সেই ব্যাপারে একটি মনিটরিং সেল গঠনের কথাও ওই সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়।
এ দিকে দ্বিতীয়বার সিন্ডিকেট করে পৌনে পাঁচ লাখ শ্রমিক যাওয়ার পর শ্রমবাজার বন্ধের আগ পর্যন্ত যে ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে সিন্ডিকেট গঠন হয়েছিল তার নেপথ্যেও শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ইশারাতেই দ্বিতীয়বার ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপনের হাত ধরে সিন্ডিকেট করে শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েও শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের তৎকালীন এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর হাত ধরে দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূর আলীর নেতৃত্বে আরো একটি সিন্ডিকেট গঠন হয়। ওই সিন্ডিকেট গঠনের পর সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১০১ জনে। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলও রয়েছে।
প্রথম ১০ জনের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পৌনে তিন লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারে। আর দ্বিতীয় দফা সিন্ডিকেট হওয়ার পর দুই গ্রুপের পাঠানো কর্মীর সংখ্যা হয় পৌনে পাঁচ লাখ। এরপর দুই সিন্ডিকেট একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো (অনিয়ম, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ) শুরু করে। একপর্যায়ে অনেকটা তোপের মুখে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশসহ সোর্স কান্ট্রিভুক্ত দেশগুলো থেকে শ্রমিক নেয়াই বন্ধ করে দেয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
অপর দিকে ১০১ জন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সিন্ডিকেট গঠন করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বায়রার একজন সদস্য সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সাবেক সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহিন, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, বেনজীর আহমেদ, লে. কর্নেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী, বায়রার সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন, ইউনিক গ্রুপের কর্ণধার মো: নূর আলীসহ মোট ১০৩ জনের নাম উল্লেখ করে সম্প্রতি পল্টন থানায় মানবপাচার আইনে একটি নিয়মিত এজাহার দায়ের করেছেন। এই মামলা দায়েরের পর নানা দিক থেকে হুমকি ও চাপ পাওয়ায় একপর্যায়ে বাদি দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন।