ঢাকা, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

প্রি-পেইড মিটারের বাড়তি বিদ্যুৎ বিলে নাভিশ্বাস গ্রাহকের

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৪:২৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৭১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্র্রতিবেদক:

দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বসছে প্রি-পেইড মিটার। কিন্তু ভোগান্তি কমানোর কথা বলে চালু করা এসব প্রি-পেইড মিটার বর্তমানে অনেক সাধারণ গ্রাহকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে বিতরণ কম্পানিগুলো পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়ে টাকা (বিল) বেশি কেটে নিচ্ছে। জরুরি ব্যালান্স নিতে গুনতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত সুদ।

বাড়তি বিদ্যুৎ বিলে নাভিশ্বাস গ্রাহকেরআবার গত মে-জুন মাসের পর থেকে বেশির ভাগ গ্রাহকের বিল আসছে দ্বিগুণের বেশি। চলতি সেপ্টেম্বরে বিলের এই উত্তাপ আরো বেড়েছে। আগে যাঁদের গড়ে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা বিল দিতে হতো, এখন তাঁদের দিতে হচ্ছে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিদ্যুৎ বিলের পেছনে বাড়তি টাকা খরচ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস সাধারণ গ্রাহকের।

বিষয়টি রাজপথের আন্দোলন পর্যন্ত গড়িয়েছে।
বিতরণ কম্পানিগুলো বলছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না, যতটুকু গ্রাহক ব্যবহার করছে, তার বেশি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেড়েছে। দেশে ছয়টি কম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কম্পানি (নেসকো)। এসব বিতরণ কম্পানির মোট গ্রাহক প্রায় চার কোটি ৭১ লাখ। এর মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় রয়েছে। বাকিদের ক্রমান্বয়ে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ চলছে। রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘গত এপ্রিল মাস থেকে প্রতি মাসে আমাকে বিদ্যুতে দ্বিগুণের বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।

গত মার্চ মাসে আমার প্রি-পেইড মিটারে খরচ হয় দুই হাজার টাকার মতো। কিন্তু তার পরবর্তী মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে আমার গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অথচ আগের মতো এখনো একই রকম বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি।’

ডিপিডিসির গ্রাহক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. খালেদ  বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে অস্বাভাবিক বাড়তি টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়টি মানা যাচ্ছে না। যত বারই রিচার্জ করা হয়, ততবারই চার্জ হিসেবে বাড়তি টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রি-পেইড মিটার এখন আমাদের জন্য বাড়তি ব্যয়ের মেশিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিপিডিসিতে অভিযোগ জানালে তারা বলে দিচ্ছে, আপনি বেশি ইউনিট ব্যবহার করায় বেশি টাকা কাটা যাচ্ছে।’

 

বিতরণ কম্পানিগুলো যা বলছে : জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়িয়েছেন। বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে উঁচু স্ল্যাবে চলে যায়। এতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের হারও বেড়ে যায়। তখন গ্রাহকের কাছে মনে হয় বাড়তি টাকা কাটা হচ্ছে। আসলে উঁচু স্ল্যাবে চলে যাওয়ার কারণেই বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে দু-একটি মিটার কারিগরি ত্রুটির কারণেও বাড়তি টাকা কাটা হতে পারে। সেটি খুবই কম। এগুলো আমাদের নজরে আসা মাত্র মিটার পরিবর্তন বা ঠিক করে দেওয়া হয়।’

জানতে চাইলে ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুতে অনেকগুলো স্ল্যাব রয়েছে। আবাসিক গ্রাহকদের সর্বনিম্ন স্ল্যাবে (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) ইউনিট প্রতি পাঁচ টাকা ২৬ পয়সা হারে বিল দেয়। আর সর্বোচ্চ স্ল্যাবে (৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারী) ইউনিট প্রতি ১৪ টাকা ৬১ পয়সা হারে বিল দিতে হয়। মাসের প্রথমদিকে গ্রাহকরা যখন বিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু করেন তখন ৫০০ টাকায় ১০০ ইউনিট পাবেন। আর সর্বোচ্চ স্ল্যাবে গিয়ে ১০০ ইউনিট কিনতে খরচ করতে হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। মূলত এসব কারণে গ্রাহকের বেশি টাকা কাটে।’

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

প্রি-পেইড মিটারের বাড়তি বিদ্যুৎ বিলে নাভিশ্বাস গ্রাহকের

আপডেট সময়ঃ ০৪:২৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্র্রতিবেদক:

দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বসছে প্রি-পেইড মিটার। কিন্তু ভোগান্তি কমানোর কথা বলে চালু করা এসব প্রি-পেইড মিটার বর্তমানে অনেক সাধারণ গ্রাহকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে বিতরণ কম্পানিগুলো পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়ে টাকা (বিল) বেশি কেটে নিচ্ছে। জরুরি ব্যালান্স নিতে গুনতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত সুদ।

বাড়তি বিদ্যুৎ বিলে নাভিশ্বাস গ্রাহকেরআবার গত মে-জুন মাসের পর থেকে বেশির ভাগ গ্রাহকের বিল আসছে দ্বিগুণের বেশি। চলতি সেপ্টেম্বরে বিলের এই উত্তাপ আরো বেড়েছে। আগে যাঁদের গড়ে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা বিল দিতে হতো, এখন তাঁদের দিতে হচ্ছে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিদ্যুৎ বিলের পেছনে বাড়তি টাকা খরচ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস সাধারণ গ্রাহকের।

বিষয়টি রাজপথের আন্দোলন পর্যন্ত গড়িয়েছে।
বিতরণ কম্পানিগুলো বলছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না, যতটুকু গ্রাহক ব্যবহার করছে, তার বেশি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেড়েছে। দেশে ছয়টি কম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কম্পানি (নেসকো)। এসব বিতরণ কম্পানির মোট গ্রাহক প্রায় চার কোটি ৭১ লাখ। এর মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় রয়েছে। বাকিদের ক্রমান্বয়ে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ চলছে। রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘গত এপ্রিল মাস থেকে প্রতি মাসে আমাকে বিদ্যুতে দ্বিগুণের বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।

গত মার্চ মাসে আমার প্রি-পেইড মিটারে খরচ হয় দুই হাজার টাকার মতো। কিন্তু তার পরবর্তী মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে আমার গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অথচ আগের মতো এখনো একই রকম বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি।’

ডিপিডিসির গ্রাহক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. খালেদ  বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে অস্বাভাবিক বাড়তি টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়টি মানা যাচ্ছে না। যত বারই রিচার্জ করা হয়, ততবারই চার্জ হিসেবে বাড়তি টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রি-পেইড মিটার এখন আমাদের জন্য বাড়তি ব্যয়ের মেশিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিপিডিসিতে অভিযোগ জানালে তারা বলে দিচ্ছে, আপনি বেশি ইউনিট ব্যবহার করায় বেশি টাকা কাটা যাচ্ছে।’

 

বিতরণ কম্পানিগুলো যা বলছে : জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়িয়েছেন। বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে উঁচু স্ল্যাবে চলে যায়। এতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের হারও বেড়ে যায়। তখন গ্রাহকের কাছে মনে হয় বাড়তি টাকা কাটা হচ্ছে। আসলে উঁচু স্ল্যাবে চলে যাওয়ার কারণেই বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে দু-একটি মিটার কারিগরি ত্রুটির কারণেও বাড়তি টাকা কাটা হতে পারে। সেটি খুবই কম। এগুলো আমাদের নজরে আসা মাত্র মিটার পরিবর্তন বা ঠিক করে দেওয়া হয়।’

জানতে চাইলে ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুতে অনেকগুলো স্ল্যাব রয়েছে। আবাসিক গ্রাহকদের সর্বনিম্ন স্ল্যাবে (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) ইউনিট প্রতি পাঁচ টাকা ২৬ পয়সা হারে বিল দেয়। আর সর্বোচ্চ স্ল্যাবে (৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারী) ইউনিট প্রতি ১৪ টাকা ৬১ পয়সা হারে বিল দিতে হয়। মাসের প্রথমদিকে গ্রাহকরা যখন বিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু করেন তখন ৫০০ টাকায় ১০০ ইউনিট পাবেন। আর সর্বোচ্চ স্ল্যাবে গিয়ে ১০০ ইউনিট কিনতে খরচ করতে হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। মূলত এসব কারণে গ্রাহকের বেশি টাকা কাটে।’