ঢাকা, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

ভ্যাট মামলা ও বকেয়ায় আটক হাজার হাজার কোটি টাকা

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৯:৩৯:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট মামলা ও বকেয়ায় আটকে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ওই টাকা আদায়ে এনবিআরের তেমন নজর নেই। তারচেয়ে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপাতেই সংস্থাটি বেশি আগ্রহী। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ভ্যাট-সংক্রান্ত মামলায় ৩১ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছেই ২০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাছাড়া বড় বড় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছেও আটকে আছে ভ্যাটের টাকা। কিন্তু ওই টাকা আদায়ে এনবিআরের গতি নেই। বরং নতুন ভ্যাট আরোপ করে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে বর্তমানে চলমান রয়েছে ভ্যাট সংক্রান্ত ৩ হাজার ৫৪৯টি মামলা। ওইই মামলায় এনবিআরের ৩১ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে ৩ হাজার ৩৯১টি মামলা চলমান রয়েছে। আর হাইকোর্টের ওসব মামলায় জড়িত ভ্যাটের পরিমাণ ২৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। আর আপিল বিভাগের ১৫৮টি মামলায় এনবিআরের ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা আটকে আছে। সূত্র জানায়, সারা দেশে ভ্যাটের সিংহভাগ এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট, এলটিইউ (ভ্যাট)আদায় করে। দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ওই কমিশনারেটে ভ্যাট দিয়ে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দেয়, সেসব প্রতিষ্ঠান এলটিইউ ভ্যাটের তালিকাভুক্ত। বর্তমানে এলটিইউ ভ্যাটে ১০৯টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা আটকে আছে। সেগুলোর মধ্যে টোব্যাকো কোম্পানিতে আড়াই হাজার কোটি টাকা, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা, ফার্মাসিটিউক্যালসে ১৪০ কোটি টাকা এবং সিমেন্ট কোম্পানিতে ১০ কোটি টাকা রয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের সবচেয়ে বেশি ভ্যাটের বকেয়া রয়েছে। এর পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে চিঠি চালাচালির পর বকেয়া আদায়ে একটি সিদ্ধান্তে এসেছিল এনবিআর। এক্ষেত্রে প্রতি বছর পেট্রোবাংলা ৫ হাজার কোটি টাকা করে এনবিআরকে পরিশোধ করবে। ওই হিসাবে গত অর্থবছরও ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে পেট্রোবাংলা। তবু প্রতিষ্ঠানটির কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ বকেয়া ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ভ্যাটের বাইরে আয়কর ও আমদানি শুল্ক বাবদ পাওনা রয়েছে আরো ১৪ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। আর এলএনজি আমদানির শুল্ক হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস পেট্রোবাংলার কাছে পাবে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, ভ্যাট আদায় এবং নতুন করে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটনে এনবিআরে গতি নেই। বরং প্রায় বন্ধ রয়েছে রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনে এনবিআরের অডিট ও প্রিভেন্টিভ। নতুন করে অডিট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটনে প্রিভেন্টিভের গতি কমায় ভ্যাট আদায়ের গতিও ঠেকেছে তলানিতে। এরই মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি ঠেকেছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নতুন করে উচ্চমূল্যের পণ্যে আরো ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়েছে। রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও ভ্যাট আরোপ করেছে এনবিআর। চলতি অর্থবছরে প্রথম দফায় কর বাড়ানোর পর অতিসম্প্রতি আবারো কর বাড়ানো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলবে। এদিকে অর্থনীতিবিদরা বছরের মাঝপথে ভ্যাট বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলেছেন। তাছাড়া ভ্যাট বাড়ানো নিয়ে নানা মহল থেকেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বর্তমান সরকার। শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপকে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তারা দ্রুত সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। ব্যবসায়ী মহল থেকেও প্রতিবাদ এসেছে। এর ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ড. আব্দুর রউফ জানান, বর্তমান অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে যেসব কৌশল নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বকেয়া আদায়। যেসব বকেয়া নিরঙ্কুশ অর্থাৎ আইনের সব কার্যক্রম শেষ করে যেসব বকেয়ার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো আদায় করার জন্য প্রতিটা কমিশনারেটে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বকেয়া আদায়ে ভ্যাট আইনে যেসব পদক্ষেপ রয়েছে, সেগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে, বর্তমানে যার কোনো অস্তিত্বই নেই। সেসব ক্ষেত্রে বকেয়া আদায় করার কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বকেয়ার ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করা যায় অর্থবছরের শেষ নাগাদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বকেয়া আদায় করা সম্ভব হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ভ্যাট মামলা ও বকেয়ায় আটক হাজার হাজার কোটি টাকা

আপডেট সময়ঃ ০৯:৩৯:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট মামলা ও বকেয়ায় আটকে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ওই টাকা আদায়ে এনবিআরের তেমন নজর নেই। তারচেয়ে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপাতেই সংস্থাটি বেশি আগ্রহী। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ভ্যাট-সংক্রান্ত মামলায় ৩১ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছেই ২০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাছাড়া বড় বড় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছেও আটকে আছে ভ্যাটের টাকা। কিন্তু ওই টাকা আদায়ে এনবিআরের গতি নেই। বরং নতুন ভ্যাট আরোপ করে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে বর্তমানে চলমান রয়েছে ভ্যাট সংক্রান্ত ৩ হাজার ৫৪৯টি মামলা। ওইই মামলায় এনবিআরের ৩১ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে ৩ হাজার ৩৯১টি মামলা চলমান রয়েছে। আর হাইকোর্টের ওসব মামলায় জড়িত ভ্যাটের পরিমাণ ২৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। আর আপিল বিভাগের ১৫৮টি মামলায় এনবিআরের ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা আটকে আছে। সূত্র জানায়, সারা দেশে ভ্যাটের সিংহভাগ এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট, এলটিইউ (ভ্যাট)আদায় করে। দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ওই কমিশনারেটে ভ্যাট দিয়ে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দেয়, সেসব প্রতিষ্ঠান এলটিইউ ভ্যাটের তালিকাভুক্ত। বর্তমানে এলটিইউ ভ্যাটে ১০৯টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা আটকে আছে। সেগুলোর মধ্যে টোব্যাকো কোম্পানিতে আড়াই হাজার কোটি টাকা, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা, ফার্মাসিটিউক্যালসে ১৪০ কোটি টাকা এবং সিমেন্ট কোম্পানিতে ১০ কোটি টাকা রয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের সবচেয়ে বেশি ভ্যাটের বকেয়া রয়েছে। এর পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে চিঠি চালাচালির পর বকেয়া আদায়ে একটি সিদ্ধান্তে এসেছিল এনবিআর। এক্ষেত্রে প্রতি বছর পেট্রোবাংলা ৫ হাজার কোটি টাকা করে এনবিআরকে পরিশোধ করবে। ওই হিসাবে গত অর্থবছরও ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে পেট্রোবাংলা। তবু প্রতিষ্ঠানটির কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ বকেয়া ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ভ্যাটের বাইরে আয়কর ও আমদানি শুল্ক বাবদ পাওনা রয়েছে আরো ১৪ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। আর এলএনজি আমদানির শুল্ক হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস পেট্রোবাংলার কাছে পাবে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, ভ্যাট আদায় এবং নতুন করে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটনে এনবিআরে গতি নেই। বরং প্রায় বন্ধ রয়েছে রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনে এনবিআরের অডিট ও প্রিভেন্টিভ। নতুন করে অডিট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটনে প্রিভেন্টিভের গতি কমায় ভ্যাট আদায়ের গতিও ঠেকেছে তলানিতে। এরই মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি ঠেকেছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নতুন করে উচ্চমূল্যের পণ্যে আরো ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়েছে। রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও ভ্যাট আরোপ করেছে এনবিআর। চলতি অর্থবছরে প্রথম দফায় কর বাড়ানোর পর অতিসম্প্রতি আবারো কর বাড়ানো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলবে। এদিকে অর্থনীতিবিদরা বছরের মাঝপথে ভ্যাট বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলেছেন। তাছাড়া ভ্যাট বাড়ানো নিয়ে নানা মহল থেকেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বর্তমান সরকার। শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপকে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তারা দ্রুত সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। ব্যবসায়ী মহল থেকেও প্রতিবাদ এসেছে। এর ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ড. আব্দুর রউফ জানান, বর্তমান অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে যেসব কৌশল নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বকেয়া আদায়। যেসব বকেয়া নিরঙ্কুশ অর্থাৎ আইনের সব কার্যক্রম শেষ করে যেসব বকেয়ার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো আদায় করার জন্য প্রতিটা কমিশনারেটে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বকেয়া আদায়ে ভ্যাট আইনে যেসব পদক্ষেপ রয়েছে, সেগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে, বর্তমানে যার কোনো অস্তিত্বই নেই। সেসব ক্ষেত্রে বকেয়া আদায় করার কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বকেয়ার ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করা যায় অর্থবছরের শেষ নাগাদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বকেয়া আদায় করা সম্ভব হবে।