ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

বিপুল অঙ্কের ঋণের দায় শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:২৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ২০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিপুল অঙ্কের ঋণের দায় শোধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিমশিম খাচ্ছে বর্তমান। বর্তমান সরকারের ঘাড়ে বিগত সরকারের ১০৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণের বোঝা। দায় শোধে অনেক ব্যাংকও সমস্যা মোকাবেলা করছে। ওসব ব্যাংককে অন্য ব্যাংক থেকে ডলার ধার করতে হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিদেশি ঋণের দায় শোধে মোট সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়েছে। তবে সামনে আরো ১২.৭২ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে। আর দায় শোধের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের জোগান পাওয়া কঠিন হতে পারে। অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি মাসে এখন ছয় বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার আয়। তার মধ্যে দুই বিলিয়ন রেমিট্যান্স ও চার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়। আর কোনো কোনো মাসে বিদেশি ঋণ আসছে। তবে তার পরিমাণ খুবই অল্প এবং প্রতি মাসে বিদেশি ঋণ আসছে না। আর আমদানি বাবদ প্রতি মাসে পাঁচ বিলিয়ন গড়ে খরচ হচ্ছে এবং বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। অর্থাৎ ছয় বিলিয়ন ডলার আয়ের বিপরীতে খরচ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। ফলে অর্থবছর শেষে সামষ্টিক ঘাটতি ডলার বাজারে অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, মোট ১০৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৮৪.৪ বিলিয়ন ডলার সরকারি ঋণ। বাকি ১৯.৯ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাত বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে। সরকারের ৮৪.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। যদিও সরকারের বেশির ভাগ ঋণই দীর্ঘমেয়াদি। গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ১.৯ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। বাকি ছয় মাসে ২.৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরবর্তী ছয় মাসে পরিশোধ করতে হবে বেশি ঋণ। পাশাপাশি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের ৯.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যবসায়ীরা পরিশোধ করেছেন। আগামী ছয় মাসে আরো ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন। এমন অবস্থায় ডলার আয় না বাড়ালে অর্থবছর শেষে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক খাত বিপাকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। যদিও রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ডলার সংকট মোকাবেলায় আশার আলো দেখাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর জন্য রেমিট্যান্সে ডলার কেনাবেচার সর্বোচ্চ দর ১২২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর ডলার কেনাবেচার মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবধান এক টাকার বেশি হওয়া যাবে না। নিয়ম ভাঙলে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি রয়েছে। ওই নির্দেশনা মেনে রেমিট্যান্সে ডলারের দর সাড়ে ১২১ টাকা থেকে ১২২ টাকার মধ্যে রেখেছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে তীব্র হয়েছে ডলার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। তাতে দরও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত দামে সব সময় ব্যাংক থেকে ডলার পাওয়া যায় না। তখন বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে খোলাবাজার থেকে কিনতে হয়।
এদিকে এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো। প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের প্রবাহও ভালো। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে ডলার সংকট তৈরি হবে না। কারণ এরই মধ্যে রমজানকেন্দ্রিক প্রচুর পণ্য আমদানি হয়েছে। হজের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারও পরিশোধ হয়েছে। ফলে নতুন করে ডলারের চাহিদা তৈরি হবে না। তাছাড়া প্রতি মাসে আমদানি দায় মেটানোর জন্য যে ডলার প্রয়োজন হবে তা রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ডলার দিয়েই মেটানো সম্ভব। তাই আশা করা যায় এ বছর নতুন করে ডলার সংকট তৈরি হবে না।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বিপুল অঙ্কের ঋণের দায় শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার

আপডেট সময়ঃ ০৮:২৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিপুল অঙ্কের ঋণের দায় শোধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিমশিম খাচ্ছে বর্তমান। বর্তমান সরকারের ঘাড়ে বিগত সরকারের ১০৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণের বোঝা। দায় শোধে অনেক ব্যাংকও সমস্যা মোকাবেলা করছে। ওসব ব্যাংককে অন্য ব্যাংক থেকে ডলার ধার করতে হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিদেশি ঋণের দায় শোধে মোট সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়েছে। তবে সামনে আরো ১২.৭২ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে। আর দায় শোধের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের জোগান পাওয়া কঠিন হতে পারে। অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি মাসে এখন ছয় বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার আয়। তার মধ্যে দুই বিলিয়ন রেমিট্যান্স ও চার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়। আর কোনো কোনো মাসে বিদেশি ঋণ আসছে। তবে তার পরিমাণ খুবই অল্প এবং প্রতি মাসে বিদেশি ঋণ আসছে না। আর আমদানি বাবদ প্রতি মাসে পাঁচ বিলিয়ন গড়ে খরচ হচ্ছে এবং বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। অর্থাৎ ছয় বিলিয়ন ডলার আয়ের বিপরীতে খরচ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। ফলে অর্থবছর শেষে সামষ্টিক ঘাটতি ডলার বাজারে অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, মোট ১০৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৮৪.৪ বিলিয়ন ডলার সরকারি ঋণ। বাকি ১৯.৯ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাত বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে। সরকারের ৮৪.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। যদিও সরকারের বেশির ভাগ ঋণই দীর্ঘমেয়াদি। গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ১.৯ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। বাকি ছয় মাসে ২.৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরবর্তী ছয় মাসে পরিশোধ করতে হবে বেশি ঋণ। পাশাপাশি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের ৯.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যবসায়ীরা পরিশোধ করেছেন। আগামী ছয় মাসে আরো ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন। এমন অবস্থায় ডলার আয় না বাড়ালে অর্থবছর শেষে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক খাত বিপাকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। যদিও রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ডলার সংকট মোকাবেলায় আশার আলো দেখাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর জন্য রেমিট্যান্সে ডলার কেনাবেচার সর্বোচ্চ দর ১২২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর ডলার কেনাবেচার মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবধান এক টাকার বেশি হওয়া যাবে না। নিয়ম ভাঙলে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি রয়েছে। ওই নির্দেশনা মেনে রেমিট্যান্সে ডলারের দর সাড়ে ১২১ টাকা থেকে ১২২ টাকার মধ্যে রেখেছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে তীব্র হয়েছে ডলার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। তাতে দরও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত দামে সব সময় ব্যাংক থেকে ডলার পাওয়া যায় না। তখন বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে খোলাবাজার থেকে কিনতে হয়।
এদিকে এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো। প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের প্রবাহও ভালো। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে ডলার সংকট তৈরি হবে না। কারণ এরই মধ্যে রমজানকেন্দ্রিক প্রচুর পণ্য আমদানি হয়েছে। হজের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারও পরিশোধ হয়েছে। ফলে নতুন করে ডলারের চাহিদা তৈরি হবে না। তাছাড়া প্রতি মাসে আমদানি দায় মেটানোর জন্য যে ডলার প্রয়োজন হবে তা রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ডলার দিয়েই মেটানো সম্ভব। তাই আশা করা যায় এ বছর নতুন করে ডলার সংকট তৈরি হবে না।