সহজ পথে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত

- আপডেট সময়ঃ ০৮:০২:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১০ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সহজ পথে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত। বিগত ২৭ জুন কাঁচা পাট, পাটের রোল, সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় স্থলপথ দিয়ে রফতানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দেয়। আর গত ১৭ মে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্ল্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা, ফল ও পানীয়সহ বেশকিছু পণ্যে একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে এবং ভারত ৯ এপ্রিল কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির সুবিধাও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সর্বশেষ বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে আবারো বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এখন থেকে ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের চার ধরনের পাটজাত পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। বরং ওসব পণ্য এখন থেকে সীমান্তের কোনো স্থলবন্দর দিয়ে নেয়া যাবে না। শুধু মুম্বাইয়ের নাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করা যাবে। অতিসম্প্রতি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফটি) বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যে নতুন বিধিনিষেধ ভারত সরকারি আরোপ করেছে তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত পণ্যগুলো হলো ব্লিচ করা ও না করা পাট বা অন্যান্য তন্তুযুক্ত বস্ত্রজাত কাপড়; পাটের দড়ি, রশি, সুতা এবং পাটের তৈরি বস্ত ও ব্যাগ। তার আগে ২৭ জুন ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন পাটজাত পণ্য ও কাপড় স্থলপথে রফতানি নিষিদ্ধ করেছিল। তখন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ পণ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে কোনো স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। তবে মুম্বাইয়ের নাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। আর আগের ২৭ জুনের বিজ্ঞপ্তির অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে এবং এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারত যেসব পণ্য রফতানিতে স্থলপথ বন্ধ করে দিয়েছে ওসব পণ্যের মাত্র ১ শতাংশ সমুদ্রপথে রফতানি হয়। বাকি সবটাই স্থলপথে। ফলে ভারতের নতুন বিধিনিষেধ কার্যত সহজ রফতানির পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের এমন পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক। বিষয়টি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা জরুরি। একই সঙ্গে বিকল্প বাজার খোঁজারও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে, যা মোট রফতানির ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিপরীতে ভারত থেকে বাংলাদেশে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। যার বড় অংশ শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য। ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় তুলা, তারপর সুতা। তাছাড়া খাদ্যশস্য, খনিজ ও জ্বালানি পণ্য, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্য ও সেবা আমদানি হয়।
সূত্র আরো জানায়, দেশের পোশাক খাতের জন্য ভারত থেকে সুতার বড় একটি অংশ আসে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে মূলত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সুতা আমদানি করা হয়। ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয় এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে রফতানি হয়। ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধের সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১৫ এপ্রিল বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয়। মূলত দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েনে চাপে পড়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও উভয় দেশের ব্যবসা। যদিও গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য বেড়েছে এবং ভারত এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানি উৎস দেশ।
এদিকে বাংলাদেশ ভারতে পণ্য আমদানি-রফতানির বিধিনিষেধ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও ভারত এখনো ওই চিঠির কোনো সাড়া দেয়নি। গত ১২ আগস্ট বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।