ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

দেশে ভয়াবহ পর্যায়ে মব সহিংসতা

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ১০:০১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে মব সহিংসতা। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। বিগত চার বছরে মব সন্ত্রাসে মৃত্যুহার পাঁচ গুণ বেড়েছে। অতীতে একটা সময় চুরি-ডাকাতি বা অপরাধমূলক কোনো ঘটনায় সন্দেজভাজন ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হতো। এখন যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় চোর, ডাকাত, ধর্ষণকারী সন্দেহে পরিকল্পিত মব সহিসংতা সৃষ্টি করে নির্বিচারে বেদম পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। অনেকে আহত হচ্ছেন। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও মব-সন্ত্রাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাতে মৃত্যু ও আহতের হার বাড়ছে। মব সংস্কৃতিতে দেশজুড়ে আতঙ্কিত মানুষ। বেসরকারি সংস্থা, পুলিশ এবং সমাজবিজ্ঞানীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মব সন্ত্রাসের ঘটনায় ২০২১ সালে ২৯ জন নিহত হলেও ২০২৪ সালে তা পৌঁছেছে ১৪৬ জনে। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ১২ জনের বেশি মব সন্ত্রাসে মারা গেছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক বছরে ১৭৭ জন মব সহিংসতার ঘটনায় মারা গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই প্রথম সাত মাসে মব সন্ত্রাসে নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৭ জন। কিন্তু আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পরবর্তী পাঁচ মাসে মব সন্ত্রাসে ওই নিহতের সংখ্যা ছিলো। যা আগের সাত মাসের তুলনায় দ্বিগুণ এবং ওই বছরে মোট নিহতের ৬৬ শতাংশ।
সূত্র জানায়, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অনেকটাই ভেঙে পড়ায় মবের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে মবের ঘটনায় ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকায় ৪৫ জন, চট্টগ্রামে ১৭ জন, বরিশালে ১১ জন, রাজশাহীতে চার, রংপুরে চার, ময়মনসিংহে তিন, খুলনায় তিন ও সিলেটে দুজন। মব জাস্টিস দেশের ৭১.৫ শতাংশ তরুণ মনে গভীর প্রভাব ফেলছে এবং আইনের প্রতি অনাস্থা বাড়াচ্ছে। সরকার থাকার পরও যদি মব সন্ত্রান নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা চরম ব্যর্থতা। মূলত বর্তমানে আইনের শাসন দুর্বল থাকা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর যথেষ্ট ভূমিকা না থাকা, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্যের ঘাটতি এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতার কাছাকাছি মনে করা অর্থাৎ নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার কারণেই মব সহিংসতা চলছে। আর বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা না থাকলে সেটি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
সূত্র আরো জানায়, সরকার কঠোর অবস্থানে মব সহিংসতা কিছুটা কমলেও সম্প্রতি কিছু কিছু এলাকায় তা আবার মাথাচাড়া। তুচ্ছ ঘটনায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মবের সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। পাশাপাশি বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অপরাধ দমনে প্রস্তুত। কোথাও অপরাধের সংবাদ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশে ভয়াবহ পর্যায়ে মব সহিংসতা

আপডেট সময়ঃ ১০:০১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে মব সহিংসতা। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। বিগত চার বছরে মব সন্ত্রাসে মৃত্যুহার পাঁচ গুণ বেড়েছে। অতীতে একটা সময় চুরি-ডাকাতি বা অপরাধমূলক কোনো ঘটনায় সন্দেজভাজন ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হতো। এখন যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় চোর, ডাকাত, ধর্ষণকারী সন্দেহে পরিকল্পিত মব সহিসংতা সৃষ্টি করে নির্বিচারে বেদম পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। অনেকে আহত হচ্ছেন। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও মব-সন্ত্রাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাতে মৃত্যু ও আহতের হার বাড়ছে। মব সংস্কৃতিতে দেশজুড়ে আতঙ্কিত মানুষ। বেসরকারি সংস্থা, পুলিশ এবং সমাজবিজ্ঞানীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মব সন্ত্রাসের ঘটনায় ২০২১ সালে ২৯ জন নিহত হলেও ২০২৪ সালে তা পৌঁছেছে ১৪৬ জনে। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ১২ জনের বেশি মব সন্ত্রাসে মারা গেছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক বছরে ১৭৭ জন মব সহিংসতার ঘটনায় মারা গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই প্রথম সাত মাসে মব সন্ত্রাসে নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৭ জন। কিন্তু আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পরবর্তী পাঁচ মাসে মব সন্ত্রাসে ওই নিহতের সংখ্যা ছিলো। যা আগের সাত মাসের তুলনায় দ্বিগুণ এবং ওই বছরে মোট নিহতের ৬৬ শতাংশ।
সূত্র জানায়, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অনেকটাই ভেঙে পড়ায় মবের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে মবের ঘটনায় ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকায় ৪৫ জন, চট্টগ্রামে ১৭ জন, বরিশালে ১১ জন, রাজশাহীতে চার, রংপুরে চার, ময়মনসিংহে তিন, খুলনায় তিন ও সিলেটে দুজন। মব জাস্টিস দেশের ৭১.৫ শতাংশ তরুণ মনে গভীর প্রভাব ফেলছে এবং আইনের প্রতি অনাস্থা বাড়াচ্ছে। সরকার থাকার পরও যদি মব সন্ত্রান নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা চরম ব্যর্থতা। মূলত বর্তমানে আইনের শাসন দুর্বল থাকা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর যথেষ্ট ভূমিকা না থাকা, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্যের ঘাটতি এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতার কাছাকাছি মনে করা অর্থাৎ নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার কারণেই মব সহিংসতা চলছে। আর বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা না থাকলে সেটি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
সূত্র আরো জানায়, সরকার কঠোর অবস্থানে মব সহিংসতা কিছুটা কমলেও সম্প্রতি কিছু কিছু এলাকায় তা আবার মাথাচাড়া। তুচ্ছ ঘটনায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মবের সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। পাশাপাশি বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অপরাধ দমনে প্রস্তুত। কোথাও অপরাধের সংবাদ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।