আজই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য

- আপডেট সময়ঃ ১১:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২২ বার পড়া হয়েছে
আজই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর আগে গত জুলাই মাসে স্টারমার বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয় এবং টেকসই শান্তিচুক্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে অঙ্গীকার না করে, তবে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান বদলাবে।
এটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতির এক বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দেশটির সরকার বলেছিল, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় হবে তখনই, যখন শান্তি প্রক্রিয়ায় তা সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলতে পারবে।
এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েলি সরকার, জিম্মিদের পরিবার এবং কিছু কনজারভেটিভ নেতা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এমন পদক্ষেপ ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করার’ সমান।
তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির আশা টিকিয়ে রাখতে নৈতিক দায়িত্ব থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তারা বলছে, গাজায় অনাহার ও সহিংসতার চিত্র ‘সহ্য করা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলের সর্বশেষ স্থল অভিযানকে এক জাতিসংঘ কর্মকর্তা ‘মহাপ্রলয়সদৃশ’। দখলদার বাহিনীর অভিযানে লাখ লাখ মানুষ গাজা সিটি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘের এক তদন্ত কমিশন উপসংহার টানে যে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। ইসরায়েল এই প্রতিবেদনকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সরকারি মন্ত্রীরা আরও বলেছেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের ক্রমাগত সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ এবং এটাই তাদের এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ব্রিটেনের আইনমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, আমরা পশ্চিম তীরে যে ভয়াবহ বসতি সম্প্রসারণ, সহিংসতা এবং বিতর্কিত ই-ওয়ান প্রকল্পের পরিকল্পনা দেখছি তা একটি কার্যকর দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করবে। সে কারণেই এই স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চলতি মাসের শুরুতে স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান। দুই নেতা একমত হন যে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন শাসন ব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনকও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তিনি দ্য টেলিগ্রাফে এক বিবৃতিতে লিখেছেন, জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার শামিল।
শনিবার এক খোলা চিঠিতে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের পরিবারগুলো অনুরোধ করে বলেছেন, বাকি ৪৮ জন জিম্মি (যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে) ফেরত না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে। তাদের দাবি, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের ঘোষণায় হামাস উল্লাস প্রকাশ করেছে এবং একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই হামাসের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে। এদিকে যুক্তরাজ্য সফরে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
স্টারমার আগেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকে সময়সীমা হিসেবে ঠিক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যদি ইসরায়েল গাজার পরিস্থিতির অবসান, যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়, তবে যুক্তরাজ্য এই পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, আমি সবসময়ই বলেছি, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে তখনই, যখন তা শান্তি প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান রাখবে। এখন যখন সেই সমাধান হুমকির মুখে, তখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
এদিকে পর্তুগাল, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে গত বছরই এই পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।