অর্থপাচারের এজেন্ট’ আরামিটের দুই কর্মকর্তা, জবানবন্দিতে স্বীকার

- আপডেট সময়ঃ ০৭:১৯:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫ বার পড়া হয়েছে
আবদুল মতিন চৌধুরী রিপন, বিশেষ প্রতিনিধি: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাংলাদেশ থেকে দুবাই ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা উৎপল পাল ও দেশের সম্পদ দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.আবদুল আজিজ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে এই জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা সাবেক এই মন্ত্রীর অবৈধ সম্পদ দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন বলেও স্বীকার করেছেন।
আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড এজিএম এবং উৎপল পাল আরামিট গ্রুপের এজিএম (ফিন্যান্স)। এই দুই প্রতিষ্ঠানই সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের পারিবারিক মালিকানাধীন।
দুদকের সরকারি কৌঁসুলি এড. মোকাররম হোসাইন বলেন, ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় দুদকের মামলায় রিমান্ডে থাকা উৎপল পাল ও মো. আবদুল আজিজ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা শুধু আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তাই ছিলেন না, জাবেদ এবং তার স্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবেও তারা কাজ করতেন। সাবেক এই মন্ত্রীর ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশও দেখাশোনা করতেন। দেশে যে জাবেদের অবৈধ সম্পদ ছিলো, সেগুলোর দেখাশোনাও তারাই করতেন। তারা এসব জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন।
গত ২৪ জুলাই ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগে জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলাসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার তথ্যানুযায়ী, সেই ঋণ নিতে গিয়েও জাবেদ জালিয়াতির আশ্রয় নেন। নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের কর্মচারীকে নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক সাজিয়ে নেওয়া হয় ঋণ। সেই ঋণ আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এর পর সেই টাকা পাচার করা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
ওই মামলা তদন্তে নেমে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে আরামিট গ্রুপের দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালকে নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দুদকের টিম। এরপর তাদের আদালতের নির্দেশে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদক বলছে, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশের সম্পদ অর্জন ও দেখাশোনার দায়িত্ব ছিলেন উৎপল পাল। তিনি দেশ থেকে দুবাই ও দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে জাবেদের পরিবারের অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার মাস্টারমাইন্ড। অন্যদিকে আব্দুল আজিজ জাবেদের সম্পদ কেনা-বেচা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিনিয়র চট্টগ্রাম মহানগর স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমানের আদালত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করে দুদক। পরে ২১ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে, ২১ সেপ্টেম্বর ভোরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকার সিকদার বাড়ি থেকে সাবেক মন্ত্রী জাবেদের বিদেশে থাকা সম্পদের দলিল, ভাড়া আদায় সংক্রান্ত ২৩ বস্তা নথিপত্র জব্দ করে দুদক। বাড়িটি জাবেদের স্ত্রী ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানের গাড়িচালক মো. ইলিয়াছের।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান নথিপত্র প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর জানিয়েছেন, তারা কিছু সম্পদের নাম পেয়েছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তিনটি, মালয়েশিয়ায় দুইটি, থাইল্যান্ডে চার-পাঁচটি সম্পদ আছে জাবেদের। এভাবে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায়ও কিছু কিছু সম্পদ তার নামে রয়েছে। এর আগে, যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি এবং আমেরিকায় ১০টি সম্পদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিলো। এছাড়া দুবাইতে ২২৮টি সহ সব মিলিয়ে কমপক্ষে নয়টি দেশে এ পর্যন্ত তার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে লন্ডনে তার অবস্থানের তথ্য প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুদক তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে। এর পর জাবেদের নিজ মালিকানাধীন ব্যাংক ইউসিবিএল থেকে লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার ও বিভিন্ন দেশে সম্পদ গড়ার একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে থাকে।