দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা জোরদার: মণ্ডপ-মন্দিরে সিসি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ ধর্ম উপদেষ্টার

- আপডেট সময়ঃ ০৮:৫৯:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৯ বার পড়া হয়েছে
রিপন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি: দুর্গাপূজায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, রাতের বেলা অনেকসময় হামলা করে, অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে।মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালীমন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় এখন জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার জন্য নিউইয়র্কে আছেন। উনি যাবার সময় আমাকে ডেকে বলে গেছেন- আমার আসতে আসতে তো দশমী হয়ে যাবে, তুমি সতর্ক থাক, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে যাতে মানুষ সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে পূজাটা উদযাপন করতে পারে, এ ব্যাপারে তোমাকে রাতদিন পরিশ্রম করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক দুর্গাপূজা নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, এগুলো অনেকটা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়। মাজারে হামলা চালায়, মন্দিরকেও অপবিত্র করার চেষ্টা করে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশকে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে। আমি সবসময় বলে থাকি, যারা উপাসনালয়, যে কোনো ধর্মের উপাসনালয়, মাজার, ধর্মীয় স্থাপনায় যারা পাথর নিক্ষেপ করে অথবা অপবিত্র করতে চায়, তারা কালপ্রিট, তারা অপরাধী, তাদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই।
পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা খালিদ বলেন, দুর্গাপূজা উদযাপন যেখানে হবে, মণ্ডপে-মন্দিরে সিসি ক্যামেরা বসান। রাতের বেলা অনেকসময় হামলা হয়, অন্ধকারের মধ্যে ঢিল মারে, অপবিত্র করতে চায়। এ ব্যাপারে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় আছে। গোয়েন্দারাও বিভিন্ন জায়গায় তৎপরতা চালাবে। আমি জেলা প্রশাসকদের বলে দিয়েছি, হটলাইন চালু থাকবে। আপনারা যদি কোনো আশঙ্কা অনুভব করেন, তাহলে হটলাইনে জানালে মুহূর্তের মধ্যে তারা আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।
ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে পূজায় সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আরেকটা কথা বলবো, লোকাল পিপলকে আপনারা ইনভলব করেন। আপনাদের ডানে-বামে যেসব মানুষেরা আছেন, যে ধর্মেরই হোক, তাদের সহযোগিতা আপনারা চান। তাহলে দুর্গাপূজাটা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আপনারা উদযাপন করতে পারবেন। এই যে নানা ধর্ম, নানা বর্ণ, নানা জাতি, মসজিদে আজান হয়, এখানে শঙ্খধ্বনি হয়, এই যে বৈচিত্র্য, এই বৈচিত্র্যের মাঝেই আমাদের ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। এদেশ আমাদের সবার, আমাদের অন্তরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমি আমার ধর্ম পালন করবো, আমি আমার ধর্ম চর্চা করবো, অন্যরা যাতে নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে, সেই সুযোগও আমাকে করে দিতে হবে।
ধর্ম অবমাননার দায় ব্যক্তির, পুরো সম্প্রদায়ের নয়- এ মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, সেই অপরাধের জন্য ব্যক্তি দায়ী হবে, সম্প্রদায় নয়। আমি আবার রিপিট করছি, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, ধর্ম অবমাননা করে থাকে, কটূক্তি করে থাকে, ব্যঙ্গ করে থাকে, এর জন্য সেই ব্যক্তিই দায়ী থাকবে, তার কমিউনিটি নয়, সম্প্রদায় দায়ী নয়।কিন্তু আমরা অনেক সময় আইন হাতে তুলে নিই। হামলা, মামলা, লুটপাট করি। আইন হাতে নিলেই আইনের শাসন নষ্ট হয়ে যাবে। অপরাধী শাস্তি পাবে, তার জন্য নিরপরাধ মানুষের বাড়িঘর আক্রান্ত হতে পারে না। আমরা সবসময় এ ব্যাপারে সচেতন আছি। আমরা এখনও আছি, অতীতেও ছিলাম, আগামীদিনেও আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। এদেশ আমাদের সবার। আমরা প্রত্যেকে নির্বিঘ্নে আমাদের ধর্মীয় যে চর্চা, ধর্মীয় যে উৎসব, ধর্মীয় যে উপাসনা এটা আমরা চালিয়ে যাবো।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। আমাদের প্রথম এবং শেষ ঠিকানা বাংলাদেশ। আমাদের দ্বিতীয় কোনো বাড়ি নেই, দ্বিতীয় কোনো ঠিকানা নেই। আমাদের সেকেন্ড হোম বলতে কিছু নেই। এই হোম, এই বাংলা, এই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশই আমাদের ঠিকানা। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি। এ দেশের যত অর্জন, নানা ধর্ম, নানা বর্ণ, নানা জাতির মানুষের অবদান আছে। আমরা কারও অবদানকে খাটো করতে চাই না।যারা সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি রাখেন, তাদের মানবিকতা বোধ থাকে না। অসাম্প্রদায়িক মানুষের ভেতরে মানবিকতা বোধ থাকে। আমি যখন কোনো অভাবগ্রস্ত, কোনো অসুখী, কোনো দুঃখী মানুষ দেখি, আমি তার ধর্মপরিচয় জানতে চাই না। সে যে একজন মানুষ এটাই আমার কাছে বড়। আমরা মানবতার জয়গান গাইতে চাই। ধর্ম যার যার সে পালন করবে। এদেশ আমাদের সবার, আমরা চাই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের রোলমডেল হিসেবে দুনিয়াতে পরিচিত হোক। আমাদের প্রতিবেশি অনেক দেশ আছে, তার তুলনায় আমরা এটাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই। এ সময় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিতসহ মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।