ঢাকা, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

বিএনপিকে চায় ৪১%, জামায়াতের পক্ষে ৩০%, ভোট বেড়েছে আ. লীগের

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৪:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনার জন্ম দিয়েছে বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং পরিচালিত সর্বশেষ জনমত জরিপ। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এটি এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত নির্বাচনী জরিপ। সারাদেশের ৬৪ জেলায় সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতা, যা দেশের ১৫০টি সংসদীয় আসনের প্রতিনিধিত্ব করছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এই জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ভোটের ক্ষেত্রে এখনো দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মোট উত্তরদাতাদের ৪১.০৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা বিএনপিকে ভোট দেবেন।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরাসরি সংগঠিতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও জামায়াতে ইসলামী শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। তাদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩০.০৩ শতাংশ ভোটার।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত ৬ মাসের তুলনায় বিএনপির সমর্থন ০.৪০ শতাংশ কমেছে, আর জামায়াতের সমর্থন কমেছে ১.৩ শতাংশ। বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন বেড়েছে সবচেয়ে বেশি—৪.৮০ শতাংশ।

জরিপ অনুযায়ী দেশের ৬টি বিভাগে বিএনপি এগিয়ে আছে। তবে রংপুর বিভাগে এগিয়ে জামায়াত।

জরিপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, তরুণ ও উচ্চশিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে জামায়াত বিএনপির চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। জরিপকারীদের ভাষায়, অন্যান্য দলের তুলনায় স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতের সংগঠিত ও সক্রিয় রাজনৈতিক কার্যক্রম ভোটারদের কাছে বেশি সন্তোষজনক মনে হয়েছে।

জরিপে একটি আলাদা অংশে ভোটারদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?
ফলাফলে উঠে এসেছে, সেই অবস্থায় বিএনপির ভোট বেড়ে ৪৫.০৬ শতাংশে পৌঁছাবে এবং জামায়াতের ভোটও বেড়ে ৩৩.০৫ শতাংশে দাঁড়াবে। এ ছাড়া এনসিপি পাবে ৪.০৮ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টি পাবে ২.০১ শতাংশ ভোট।

অর্থাৎ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি সরাসরি বিএনপি ও জামায়াতের ভোটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

ভোটের সিদ্ধান্তে কোন বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে—এই প্রশ্নে বেশিরভাগ ভোটার জানিয়েছেন তারা দলীয় প্রতীক নয়, বরং প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দেবেন।

৬৫.৫ শতাংশ ভোটার বলেছেন প্রার্থীর যোগ্যতা তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মাত্র ১৪.৭ শতাংশ ভোটার বলেছেন তারা প্রতীক দেখে ভোট দেবেন।

এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।

জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের একটি বড় অংশের বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে বিএনপিই সরকার গঠন করবে।

৩৯.১ শতাংশ মনে করেন বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।

২৮.১ শতাংশের মতে জামায়াত সরকার গঠন করবে।

এই সংখ্যা সরাসরি ভোটের হিসাবের সঙ্গে মিল না থাকলেও, ভোটারদের প্রত্যাশা ও আস্থার জায়গাটি এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে ইনোভেশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। তিনি জানান, “জনগণের নির্বাচন ভাবনা” শীর্ষক এই জরিপে সহযোগিতা করেছে দুটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম—বিআরএআইএন এবং ভয়েস ফর রিফর্ম।

এর আগে, গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানটি জরিপের প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছিল, যেখানে নির্বাচনী পরিবেশ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মদক্ষতা নিয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়।

রুবাইয়াৎ সারওয়ারের দাবি, এ জরিপটি ফেস-টু-ফেস হাউসহোল্ড সার্ভে পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ায় এটি দেশের নির্বাচনী প্রবণতা নিয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিত্র উপস্থাপন করছে।

যদিও জরিপটি বড় আকারে পরিচালিত হয়েছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তব নির্বাচনে নানা ভিন্ন সমীকরণ তৈরি হয়। নির্বাচনের সময় সরকারি প্রশাসনের ভূমিকা, জোট গঠন, প্রচারাভিযান, মাঠপর্যায়ের সংঘাত—সব মিলিয়েই চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ হয়। তাই এই জরিপকে ‘প্রবণতার ইঙ্গিত’ হিসেবে দেখা উচিত, নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে নয়।

তবুও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—ভোটাররা এখন দলীয় প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা, মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম এবং আস্থাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বিএনপিকে চায় ৪১%, জামায়াতের পক্ষে ৩০%, ভোট বেড়েছে আ. লীগের

আপডেট সময়ঃ ০৪:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনার জন্ম দিয়েছে বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং পরিচালিত সর্বশেষ জনমত জরিপ। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এটি এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত নির্বাচনী জরিপ। সারাদেশের ৬৪ জেলায় সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতা, যা দেশের ১৫০টি সংসদীয় আসনের প্রতিনিধিত্ব করছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এই জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ভোটের ক্ষেত্রে এখনো দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মোট উত্তরদাতাদের ৪১.০৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা বিএনপিকে ভোট দেবেন।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরাসরি সংগঠিতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও জামায়াতে ইসলামী শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। তাদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩০.০৩ শতাংশ ভোটার।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত ৬ মাসের তুলনায় বিএনপির সমর্থন ০.৪০ শতাংশ কমেছে, আর জামায়াতের সমর্থন কমেছে ১.৩ শতাংশ। বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন বেড়েছে সবচেয়ে বেশি—৪.৮০ শতাংশ।

জরিপ অনুযায়ী দেশের ৬টি বিভাগে বিএনপি এগিয়ে আছে। তবে রংপুর বিভাগে এগিয়ে জামায়াত।

জরিপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, তরুণ ও উচ্চশিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে জামায়াত বিএনপির চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। জরিপকারীদের ভাষায়, অন্যান্য দলের তুলনায় স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতের সংগঠিত ও সক্রিয় রাজনৈতিক কার্যক্রম ভোটারদের কাছে বেশি সন্তোষজনক মনে হয়েছে।

জরিপে একটি আলাদা অংশে ভোটারদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?
ফলাফলে উঠে এসেছে, সেই অবস্থায় বিএনপির ভোট বেড়ে ৪৫.০৬ শতাংশে পৌঁছাবে এবং জামায়াতের ভোটও বেড়ে ৩৩.০৫ শতাংশে দাঁড়াবে। এ ছাড়া এনসিপি পাবে ৪.০৮ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টি পাবে ২.০১ শতাংশ ভোট।

অর্থাৎ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি সরাসরি বিএনপি ও জামায়াতের ভোটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

ভোটের সিদ্ধান্তে কোন বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে—এই প্রশ্নে বেশিরভাগ ভোটার জানিয়েছেন তারা দলীয় প্রতীক নয়, বরং প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দেবেন।

৬৫.৫ শতাংশ ভোটার বলেছেন প্রার্থীর যোগ্যতা তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মাত্র ১৪.৭ শতাংশ ভোটার বলেছেন তারা প্রতীক দেখে ভোট দেবেন।

এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।

জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের একটি বড় অংশের বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে বিএনপিই সরকার গঠন করবে।

৩৯.১ শতাংশ মনে করেন বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।

২৮.১ শতাংশের মতে জামায়াত সরকার গঠন করবে।

এই সংখ্যা সরাসরি ভোটের হিসাবের সঙ্গে মিল না থাকলেও, ভোটারদের প্রত্যাশা ও আস্থার জায়গাটি এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে ইনোভেশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। তিনি জানান, “জনগণের নির্বাচন ভাবনা” শীর্ষক এই জরিপে সহযোগিতা করেছে দুটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম—বিআরএআইএন এবং ভয়েস ফর রিফর্ম।

এর আগে, গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানটি জরিপের প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছিল, যেখানে নির্বাচনী পরিবেশ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মদক্ষতা নিয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়।

রুবাইয়াৎ সারওয়ারের দাবি, এ জরিপটি ফেস-টু-ফেস হাউসহোল্ড সার্ভে পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ায় এটি দেশের নির্বাচনী প্রবণতা নিয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিত্র উপস্থাপন করছে।

যদিও জরিপটি বড় আকারে পরিচালিত হয়েছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তব নির্বাচনে নানা ভিন্ন সমীকরণ তৈরি হয়। নির্বাচনের সময় সরকারি প্রশাসনের ভূমিকা, জোট গঠন, প্রচারাভিযান, মাঠপর্যায়ের সংঘাত—সব মিলিয়েই চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ হয়। তাই এই জরিপকে ‘প্রবণতার ইঙ্গিত’ হিসেবে দেখা উচিত, নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে নয়।

তবুও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—ভোটাররা এখন দলীয় প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা, মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম এবং আস্থাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।