ঢাকা, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

আগামী নির্বাচন হবে ‘গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি’: প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৫:১০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং দেশের গণতন্ত্রে নতুন যুগের সূচনা ঘটাবে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, “আগামী সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন ভিত্তি স্থাপনের নির্বাচন, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেবে।”

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গণতান্ত্রিক রূপান্তর, ক্রীড়া, সামাজিক ব্যবসা এবং বৈশ্বিক মানবিক সংকট নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন। বিশেষভাবে রোহিঙ্গা ইস্যু, সামাজিক উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ড এবং অলিম্পিক গেমসে সামাজিক ব্যবসার সুযোগ নিয়েও মতবিনিময় হয়।

ড. ইউনূস বৈঠকে বলেন, “আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি নির্ধারণী মুহূর্ত। এটি শুধুমাত্র ভোটগ্রহণ নয়, বরং জনগণের আস্থা পুনর্নির্মাণ ও গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক মহাসুযোগ।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার বিগত ১৪ মাসে নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সরকার সর্বাত্মক কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও সর্বজনগ্রাহ্য।”

ড. ইউনূস বৈঠকে প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা অলিম্পিককে সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগে রূপান্তরের চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে লস অ্যাঞ্জেলেসসহ সব অলিম্পিক কার্বন নিরপেক্ষ হওয়া জরুরি। ক্রীড়া শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে।”

প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগো এসময় ড. ইউনূসের কাজের প্রশংসা করে বলেন, “আপনার নেতৃত্বকে আমি গভীরভাবে সম্মান করি। আপনার উদ্যোগ ও অঙ্গীকার মানবতার জন্য অনন্য উদাহরণ। সংকটের সময়ে আপনি যে ভূমিকা রেখেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

বৈঠকে দুই নেতা বিশেষভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে আলোচনা করেন। মেয়র হিদালগো বলেন, “বাংলাদেশ যে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, এটি বিশ্ব মানবতার জন্য বিরাট দৃষ্টান্ত। কিন্তু এ সংকটের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, একদিন রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে। এজন্য আন্তর্জাতিক তহবিল বাড়ানো ও বৈশ্বিক মনোযোগ বৃদ্ধির ওপর তিনি জোর দেন।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, “জাতিসংঘ আগামী সপ্তাহে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে। এর লক্ষ্য হলো বিশ্বকে আবারও এই সংকটের দিকে মনোযোগী করা এবং একটি স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা।”

ড. ইউনূস প্যারিসের মেয়রকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ফ্রান্স মানবিক ও সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে পারে। আপনি বাংলাদেশ সফরে এলে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। তিনি আলোচনার বিভিন্ন দিক সমন্বয় করেন।

রাজনৈতিক অঙ্গন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ক্রীড়া ও মানবিক সংকট—সব বিষয় একসঙ্গে আলোচিত হওয়ায় বৈঠকটি ছিল বহুমাত্রিক ও গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূস স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নতুন করে পথ দেখাবে। অন্যদিকে প্যারিসের মেয়র হিদালগো আশ্বাস দিয়েছেন, এই পথচলায় ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আগামী নির্বাচন হবে ‘গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি’: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট সময়ঃ ০৫:১০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং দেশের গণতন্ত্রে নতুন যুগের সূচনা ঘটাবে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, “আগামী সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন ভিত্তি স্থাপনের নির্বাচন, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেবে।”

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গণতান্ত্রিক রূপান্তর, ক্রীড়া, সামাজিক ব্যবসা এবং বৈশ্বিক মানবিক সংকট নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন। বিশেষভাবে রোহিঙ্গা ইস্যু, সামাজিক উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ড এবং অলিম্পিক গেমসে সামাজিক ব্যবসার সুযোগ নিয়েও মতবিনিময় হয়।

ড. ইউনূস বৈঠকে বলেন, “আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি নির্ধারণী মুহূর্ত। এটি শুধুমাত্র ভোটগ্রহণ নয়, বরং জনগণের আস্থা পুনর্নির্মাণ ও গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক মহাসুযোগ।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার বিগত ১৪ মাসে নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সরকার সর্বাত্মক কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও সর্বজনগ্রাহ্য।”

ড. ইউনূস বৈঠকে প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা অলিম্পিককে সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগে রূপান্তরের চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে লস অ্যাঞ্জেলেসসহ সব অলিম্পিক কার্বন নিরপেক্ষ হওয়া জরুরি। ক্রীড়া শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে।”

প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগো এসময় ড. ইউনূসের কাজের প্রশংসা করে বলেন, “আপনার নেতৃত্বকে আমি গভীরভাবে সম্মান করি। আপনার উদ্যোগ ও অঙ্গীকার মানবতার জন্য অনন্য উদাহরণ। সংকটের সময়ে আপনি যে ভূমিকা রেখেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

বৈঠকে দুই নেতা বিশেষভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে আলোচনা করেন। মেয়র হিদালগো বলেন, “বাংলাদেশ যে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, এটি বিশ্ব মানবতার জন্য বিরাট দৃষ্টান্ত। কিন্তু এ সংকটের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, একদিন রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে। এজন্য আন্তর্জাতিক তহবিল বাড়ানো ও বৈশ্বিক মনোযোগ বৃদ্ধির ওপর তিনি জোর দেন।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, “জাতিসংঘ আগামী সপ্তাহে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে। এর লক্ষ্য হলো বিশ্বকে আবারও এই সংকটের দিকে মনোযোগী করা এবং একটি স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা।”

ড. ইউনূস প্যারিসের মেয়রকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ফ্রান্স মানবিক ও সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে পারে। আপনি বাংলাদেশ সফরে এলে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। তিনি আলোচনার বিভিন্ন দিক সমন্বয় করেন।

রাজনৈতিক অঙ্গন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ক্রীড়া ও মানবিক সংকট—সব বিষয় একসঙ্গে আলোচিত হওয়ায় বৈঠকটি ছিল বহুমাত্রিক ও গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূস স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নতুন করে পথ দেখাবে। অন্যদিকে প্যারিসের মেয়র হিদালগো আশ্বাস দিয়েছেন, এই পথচলায় ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে থাকবে।