ছাত্রদলের প্যানেলে থেকে একমাত্র বিজয়ী ফুটবলার নার্গিস

- আপডেট সময়ঃ ০৫:০৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৩টি পদের মধ্যে ২২টিতেই পরাজিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থীরা। শুধুমাত্র ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন নার্গিস খাতুন। ছাত্রদল প্যানেলের একমাত্র চমক এই নার্গিস তার নামের ফুলের মতোই সৌরভ ছড়াচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন নার্গিস খাতুন। তিনি জাতীয় মহিলা ফুটবল দলেরও খেলোয়াড়। নির্বাচিত হবার পর নার্গিস খাতুন সমকালকে বলেছেন, ‘ছাত্রদলের প্যানেলে প্রার্থী হলেও আমি কোনো দলের রাজনীতি করি না। আমি বিএনপি বা ছাত্রদলের সদস্যও নই। শুধু ভোট করার জন্যই প্যানেলে ছিলাম।’
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কাজী নজরুল ইসলাম অডিটরিয়ামে নার্গিসকে বিজয়ী ঘোষণা করে রাকসু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম। তিনি ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী।
জয়ের পর নার্গিস খাতুন সমকালকে বলেন, ‘রাকসুতে আমি ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে ভোটে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ! এটা আমার জন্য গর্বের ও সম্মানের। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এখানে শুধু আমি জয়ী হই নাই, জয়ী হয়েছেন আমাকে ভোট দেওয়া প্রত্যেক ভোটার, জয়ী হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যারা দল-মত নির্বিশেষে যোগ্যতার মূল্যায়ন করেছেন। তারা আমাকে বিশ্বাস করেছেন। আমি তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা দেব।’
ছাত্রদলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে কীভাবে বিজয়ী হয়েছেন- জানতে চাইলে এই নারী ফুটবলার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সবাই যোগ্যতার ভিত্তিতে ভোট দিয়েছেন। আমি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও খেলেছি। এ কারণে তারা আমার যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করেছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান ভোট পছন্দের প্রার্থীকে যোগ্যতার ভিত্তিতে দিয়েছেন। তারা যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করেছেন। তাদের পছন্দকে আমি সম্মান করি।’
রাজনৈতিক দলের প্যানেলের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে নার্গিস খাতুন বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতি করি না। শুধু একটি প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যও না। ভোট করার জন্যই প্যানেলে যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা ও ক্রীড়া সেক্টরকে এগিয়ে নিতে কাজ করবো। আমি আমার শতভাগ চেষ্টা দিয়ে কাজ করব। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
কে এই নার্গিস
নার্গিসের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল খর্দ্দকৌড় গ্রামে। সেই গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলীর কন্যা তিনি। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট নার্গিস। বড় দুই বোন বিবাহিত। নার্গিস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। নার্গিসের বাবা একজন কৃষক।
নার্গিস খাতুন বলেন, ২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফুটবল খেলা শুরু করি। ২০১৪ সালে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব ১৪ ফুটবল দলে খেলার সুযোগ হয়। এরপর দেশের হয়ে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে ২০টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেই। দেশের বাইরে জাপান, কোরিয়া, চীনসহ ১০টি দেশে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছি।
তিনি আরও বলেন, খেলা শুরুর সময় গ্রামের প্রতিবেশীদের অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। তবে সেসবে থেমে যাইনি।
ছাত্রদল প্যানেলে অংশ নিয়ে নার্গিস খাতুন পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৮৫ ভোট। তার নিকটতম ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের হামিদুল্লাহ নাঈম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৩৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান জিহাদ ২ হাজার ৭৬৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৩ পদের ২০টিতে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। তিনটি পদের একটিতে জিএস হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন সালাউদ্দিন আম্মার, ছাত্রদল মনোনীত ক্রীড়া সম্পাদক নার্গিস এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা নির্বাচিত হয়েছেন।