ভোটের মাঠে ৮ দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রাখার প্রস্তাব: ইসি সচিব

- আপডেট সময়ঃ ০৪:৪৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৯ বার পড়া হয়েছে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আট দিনব্যাপী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রায় আট লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ।
আজ (২০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
ইসি সচিব বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন পাঁচ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছিল। তবে আজকের সভায় সেটি বাড়িয়ে আট দিন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রায় ৯০ থেকে ১ লাখ সেনা সদস্য, দেড় লাখ পুলিশ এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ আনসার সদস্য নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন।’
তবে চূড়ান্ত সময়সীমা ও লজিস্টিক সহায়তা নির্ভর করবে নির্বাচন বাজেটের ওপর বলে জানান সচিব।
সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি এবং বর্তমানে পরিস্থিতি সন্তোষজনক।’
সম্প্রতি ছিনতাই হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অবশিষ্ট অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলছে।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজানের আগে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতেই নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী আট দিন দায়িত্ব পালন করেছিল, অতিরিক্ত আরও পাঁচ দিন যাতায়াত ও সমন্বয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১০ দিন দায়িত্বে ছিল।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে আজকের সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমন্বিত নিরাপত্তা কৌশল চূড়ান্ত করা হয়।
তিন পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তিন ধাপে দায়িত্ব পালন করবে—নির্বাচনের আগে, চলাকালীন এবং পরে।
তফসিল ঘোষণার আগে সন্ত্রাসী, চিহ্নিত অপরাধী ও সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায়ও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত প্রচারণা চলাকালীন সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে অগ্রাধিকার। প্রার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাতে পারেন এবং ভোটাররা ভয়ভীতিমুক্তভাবে ভোট দিতে পারেন, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ইসি সচিব।
ভোটকেন্দ্র এলাকায় সন্দেহভাজন বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারি থাকবে। পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ ভোটকেন্দ্র নিরাপত্তায় থাকবে, আর র্যাব, বিজিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, কোস্টগার্ড এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে টহল ও তাৎক্ষণিক অভিযানে অংশ নেবে।
ইসি জানিয়েছে, একটি সার্বিক সমন্বয় কাঠামোর আওতায় সব বাহিনী কাজ করবে, যাতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হয়।
নিরাপত্তা, লজিস্টিক ও পর্যবেক্ষণ
ইসি সচিব বলেন, আজকের সভায় ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন কর্মকর্তা ও দেশব্যাপী ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটকেন্দ্রের পরিমাণগত মূল্যায়ন, মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সময়মতো সমন্বয়, অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার নিয়ে আলোচনা করেছি।’
এছাড়া বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ, বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা ও কার্যক্রমে সমন্বয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পোস্টাল ভোট ব্যবস্থাপনা, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও কালো টাকার প্রভাব নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার, এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ভোটসামগ্রী পরিবহনের বিষয়ও আলোচনায় আসে।
ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় ড্রোন ব্যবহার করা যাবে না, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে।’