বগুড়ায় সারজিস আলমের সভাস্থলের বাইরে ককটেল নিক্ষেপ

- আপডেট সময়ঃ ০৮:০১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
- / ২২ বার পড়া হয়েছে
বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভা চলাকালে অডিটোরিয়ামের নিচতলায় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকালে শহরের জেলা পরিষদ মিলনায়তন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সারজিস আলম এ হামলার জন্য ফ্যাসিস্টদের দায়ী করেন ও সরকারের কাছে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের আস্ফালন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আতোয়ার রহমান জানান, এনসিপির অনুষ্ঠানের বাইরে ককটেলসদৃশ বস্তু বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
বগুড়া জেলা এনসিপির সংগঠক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও প্রত্যক্ষদর্শী অন্যরা জানান, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সোমবার জয়পুরহাটে সমন্বয় সভা শেষে বিকাল ৩টার দিকে বগুড়ায় আসেন। তিনি ফিতা কেটে শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠসংলগ্ন এলাকায় বগুড়া জেলা শাখা কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সারজিস আলম বলেন, বিগত সময়ে বিএনপি যখনই সরকার গঠন করেছে জোট সরকার ছিল, জামায়াত কখনই এর পূর্বে শক্তিশালীভাবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি। আমরা মনে করি এককভাবে কেউ শক্তিশালী নয়, আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যায় আর মাঠের বাস্তবতা পার্থক্য আছে।
তিনি বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ ও আধিপত্যবাদ প্রশ্নে বিএনপি বা জামায়াত কেউ এককভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এ জায়গায় এনসিপির শক্তিশালী প্রতিনিধিত্ব রাজপথে যেমন লাগবে, সংসদেও প্রয়োজন, সেই লক্ষ্যে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে কাজ করছি।
সারজিস আলম আরও বলেন, আগামীর সংসদে তরুণরা যদি প্রতিনিধিত্ব করতে না পারে তাহলে গতানুগতিক কালচার পরিবর্তন সম্ভব নয়। যারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, খুনিদের বিচারের জন্য কাজ করবে তাদের সঙ্গে এনসিপি কাজ করবে। সংসদ বা নির্বাচন কেন্দ্রীয় কাজ সীমাবদ্ধ থাকবে না। দেশের মানুষদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সংস্কার ও বিচারের জন্য এনসিপি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, আগামীতেও করবে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও আইনগত ভিত্তির প্রশ্নে সকলে একপথে গেলেও এনসিপি সেই স্রোতে গা ভাসায়নি। এনসিপি জনগণের প্রশ্নে আপসহীন থেকে সনদের আইনগত ভিত্তির নিশ্চয়তা চেয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চয়তা না পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত জুলাই সনদে স্বাক্ষর থাকবে না।
এরপর তিনি বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংগঠনের জেলা সমন্বয় সভায় যোগদান করেন। সারজিস আলম সাংগঠনিক বক্তব্য দেয়া শুরুর কিছুক্ষণ পর জেলা পরিষদের পেছনে করতোয়া নদীর পাশ থেকে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। ককটেল দুটি অডিটোরিয়ামের নিচে জেলা পরিষদ চত্বরে এসে পড়ে। প্রথমটি অবিস্ফোরিত হলেও দ্বিতীয়টি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ও সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেন। তারা অবিস্ফোরিত ককটেলটি উদ্ধার করেন।
এদিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সার্বিক মাহদী ও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন।
বক্তারা বলেন, ককটেল মেরে, হামলা, মামলা করে এনসিপির কর্মকাণ্ড থামানো যাবে না। তারা প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, এটা তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হলেও প্রশাসন তাদের কোনো নিরাপত্তা দেয়নি। প্রশাসনের অনীহার কারণেই ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা এ ককটেল হামলা চালিয়েছে। আমাদের শরীরে জুলাইয়ের রক্ত আছে তাই আমরা এ হামলায় ভিত নই। বক্তব্যরা অবিলম্বে এ ককটেল হামলায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ককটেল হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, এ হামলা ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের আস্ফালন বন্ধের দাবি জানান।
সারজিস আলম বলেন, এনসিপি অনেক বড় সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কোনো জেলা বা উপজেলায় তাদের ভালো নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। আবার কোথাও কোথাও গাছাড়া ভাব দেখাচ্ছে।
তিনি প্রশাসনের লোকজনকে কোন দলের লোক না হতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ২৪ পরবর্তীতে বাংলাদেশে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কাম্য নয়। নানা কারণে আগে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সম্মান বিঘ্নিত হয়। তাদের মধ্যে অনেকে ফ্যাসিস্টদের তথ্য দিয়ে ও নানাভাবে সহযোগিতা করছে। এমনটা করলে ভবিষ্যতে তাদের অস্তিত্ব থাকবেন না। এতে জনগণ ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সারজিস আলম আরও বলেন, আমরা মনে করি এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ ও জনগণ একটা অস্থিতিশীল শঙ্কার দিকে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রশাসনকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান করছি। এখানে যারা জড়িত তাদের মুখোশ, পরিচয় উন্মোচন করতে হবে। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির জানান, জেলা পরিষদ চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের একাধিক দল তদন্তে কাজ করছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।