ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

শেখ হাসিনাকে খুঁজতে আদালত এলাকায় ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ মাইকিং

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০১:৩১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সোমবার সকাল থেকে অস্বাভাবিক এক মাইকিং শোনা যায়। কোথাও কোনো মানুষ বা শিশু হারিয়ে গেলে যেভাবে প্রচার করা হয়, ঠিক সেই ভঙ্গিতেই বলা হচ্ছিল, ‘একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি… আমাদের হাসিনা খালা (শেখ হাসিনা) গত ৫ আগস্ট সপরিবারে হারিয়ে গেছেন। যদি কোনো সৎ-হৃদয়বান ব্যক্তি তার সন্ধান পান, তবে তাকে হাইকোর্টের ফাঁসির মঞ্চে পৌঁছে দেবেন। একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি। একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি…

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন হওয়ায় আদালত চত্বর সকাল থেকেই জনসমাগমে জমে ওঠে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছিলেন রায়ের ফলাফলের জন্য।

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নগরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে সকাল থেকে রাজধানীতে যান চলাচল স্বাভাবিক দেখা যায়। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি গণপরিবহণও চলাচল করেছে।

রায়কে কেন্দ্র করে পতিত আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন কর্মসূচি’র কোনো প্রভাব সকাল থেকে রাজধানীতে দেখা যায়নি। এদিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি মোকাবিলায় জামায়াতসহ আটটি ইসলামিক দল মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে।

২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে মারাত্মক আহত করার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আলোচিত এই মামলার রায়ের দিন ধার্য‍্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এই মামলায় বিচারের জন‍্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। বিচার চলাকালে মোট ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ‍্যগ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি গণমাধ‍্যমে জুলাই-আগস্ট হত‍্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত অডিও, ভিডিও ও অন‍্যান‍্য প্রমাণ আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তবে মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী (অ‍্যাপ্রুভার) হয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে অন‍্য আসামিদের সব অপরাধের বর্ণনা দেন।

এ মামলায় সাক্ষীরা হলেন জুলাই অভ‍্যুত্থানে মারাত্মক আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, পুলিশের গুলিতে আহত আব্দুল্লাহ আল ইমরান, পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো দিনমজুর পারভীন, রংপুরের এনটিভির সাংবাদিক এ কে এম মঈনুল হক, রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু, শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের বড় ভাই রবিউল হাসান, ইবনে সিনা হাসপাতালের ডা. হাসানুল বান্না, শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের নিউরোট্রমা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান, রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম, রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা, জুলাই আন্দোলনে শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা মো. ইদ্রিস, সাংবাদিক মোহিদ হোসেন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, জুলাই আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দি দিয়েছেন প্রসিকিউর তানভীর হাসান জোহা, সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, আহত শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার, শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী মো. গিয়াস উদ্দিন, কুষ্টিয়ার সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ধার্য‍ ছিল। ওই দিনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স‍্যোশাল মিডিয়ার মাধ‍্যমে লকডাউন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। নিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়। গত কয়েকদিনে সারা দেশে অর্ধশত গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপি প্রতিরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রায়কে কেন্দ্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

শেখ হাসিনাকে খুঁজতে আদালত এলাকায় ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ মাইকিং

আপডেট সময়ঃ ০১:৩১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

রাজধানীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সোমবার সকাল থেকে অস্বাভাবিক এক মাইকিং শোনা যায়। কোথাও কোনো মানুষ বা শিশু হারিয়ে গেলে যেভাবে প্রচার করা হয়, ঠিক সেই ভঙ্গিতেই বলা হচ্ছিল, ‘একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি… আমাদের হাসিনা খালা (শেখ হাসিনা) গত ৫ আগস্ট সপরিবারে হারিয়ে গেছেন। যদি কোনো সৎ-হৃদয়বান ব্যক্তি তার সন্ধান পান, তবে তাকে হাইকোর্টের ফাঁসির মঞ্চে পৌঁছে দেবেন। একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি। একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি…

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন হওয়ায় আদালত চত্বর সকাল থেকেই জনসমাগমে জমে ওঠে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছিলেন রায়ের ফলাফলের জন্য।

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নগরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে সকাল থেকে রাজধানীতে যান চলাচল স্বাভাবিক দেখা যায়। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি গণপরিবহণও চলাচল করেছে।

রায়কে কেন্দ্র করে পতিত আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন কর্মসূচি’র কোনো প্রভাব সকাল থেকে রাজধানীতে দেখা যায়নি। এদিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি মোকাবিলায় জামায়াতসহ আটটি ইসলামিক দল মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে।

২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে মারাত্মক আহত করার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আলোচিত এই মামলার রায়ের দিন ধার্য‍্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এই মামলায় বিচারের জন‍্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। বিচার চলাকালে মোট ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ‍্যগ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি গণমাধ‍্যমে জুলাই-আগস্ট হত‍্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত অডিও, ভিডিও ও অন‍্যান‍্য প্রমাণ আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তবে মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী (অ‍্যাপ্রুভার) হয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে অন‍্য আসামিদের সব অপরাধের বর্ণনা দেন।

এ মামলায় সাক্ষীরা হলেন জুলাই অভ‍্যুত্থানে মারাত্মক আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, পুলিশের গুলিতে আহত আব্দুল্লাহ আল ইমরান, পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো দিনমজুর পারভীন, রংপুরের এনটিভির সাংবাদিক এ কে এম মঈনুল হক, রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু, শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের বড় ভাই রবিউল হাসান, ইবনে সিনা হাসপাতালের ডা. হাসানুল বান্না, শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের নিউরোট্রমা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান, রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম, রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা, জুলাই আন্দোলনে শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা মো. ইদ্রিস, সাংবাদিক মোহিদ হোসেন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, জুলাই আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দি দিয়েছেন প্রসিকিউর তানভীর হাসান জোহা, সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, আহত শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার, শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী মো. গিয়াস উদ্দিন, কুষ্টিয়ার সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ধার্য‍ ছিল। ওই দিনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স‍্যোশাল মিডিয়ার মাধ‍্যমে লকডাউন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। নিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়। গত কয়েকদিনে সারা দেশে অর্ধশত গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপি প্রতিরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রায়কে কেন্দ্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা