• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
উপজেলা ভোটে দুর্গম এলাকা ছাড়া সব কেন্দ্রে ব্যালট যাবে সকালে থাইল্যান্ড সফর দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক উন্নয়নে এক মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আ. লীগের মূল লক্ষ্য: কাদের সংসদ অধবিশেন চলবে ৯ মে র্পযন্ত মাদ্রাসার সভাপতি হতে স্বাক্ষর জালিয়াতি, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বান্দরবানে কেএনএফের আরো ১ নারী আটক: রিমান্ড ফেরত ১৪ জন আসামি কারাগারে অফিস সময়ে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে গেলে ব্যবস্থা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৪৬ কিলোমিটার বাড়ছে ঢাকা আউটার রিং রোডের দৈর্ঘ্য, ব্যয় বাড়ছে তিনগুণ বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে: শিক্ষামন্ত্রী জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির

নিজের নামে কালেমা বানানো সেই ভন্ডপীর গ্রেপ্তার

Reporter Name / ৪০৯ Time View
Update : শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
ঢাকঢোল বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করে এক কিশোরের লাশ দাফন এবং পবিত্র কালেমা বিকৃত করে সেখানে নিজের নাম যুক্ত করার ঘটনায় আলোচনায় আসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ভ-পীর আবদুর রহমান ওরফে শামীম (৬৫)। তার নামে ধর্ম অবমাননাসহ আরো কয়েকটি অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়। মামলার পরেরদিন গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভ-পীর আবদুর রহমান শামীমকে তার আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত চার মাস আগে এই ভ-পীরের আস্তানায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের পরপর দুটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে দেশজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করার পরেও অজ্ঞাত কারণে এতদিন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ ও প্রশাসন।
গত বুধবার রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে খালিদ হাসান সিপাই বাদী হয়ে ভ-পীর আব্দুর রহমান শামীমকে একমাত্র আসামি করে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার পর দৌলতপুর থানার পুৃলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামে ভ-পীর আবদুর রহমান শামীমের আস্তানায় অভিযান চালান। এ সময় আস্তানার একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন শামীম। আস্তানাটি তল্লাশির পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেয়। এ সময় আরো কয়েকজন ব্যক্তি আস্তানাটির ভেতরে অপর কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
জানা যায়, উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মহসিন আলীর কিশোর ছেলে আঁখি (১৭) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে গত ১৬ মে রাতে ওই গ্রামের ভ-পীর আবদুর রহমান শামীম ও তার ভক্তরা ঢাকঢোল বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করে তাকে দাফন করেন। দাফনের আগে ধর্মীয় রীতি অনুসারে আঁখির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ জানাজায় অংশ নিলেও অসুস্থতাজনিত কারণে দাফনের আগেই বাড়ি ফিরে যান। এমপি বাদশাহ্ চলে যাওয়ার পরে ইসলাম ধর্মের প্রথা ভেঙে নিজের গড়া তরিকা মোতাবেক ঢাকঢোল বাজিয়ে উৎসবমুখর আনুষ্ঠানিকতায় আস্তানা প্রাঙ্গণে আঁখির লাশ দাফন করা হয়। যেখানে শামীমের অন্তত দুই শতাধিক ভক্ত-অনুসারী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শামীমের অনুসারী ছাড়া জানাজায় অংশ নেয়া অন্য লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়। প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ধর্মপ্রাণ মানুষজন। এর কয়েকদিনের মধ্যে আরেকটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এতে ভ-পীর আবদুর রহমান শামীমের ভক্তদের দুধ দিয়ে তার দুই পা ধুয়ে পায়ে চুমু খেতে এবং পায়ে মাথা ঠুকে সিজদা করতে দেখা যায়। এ ছাড়া ভাইরাল হওয়া দুটি ভিডিওতেই অনেকটা হিন্দু ধর্মের রীতিতে সুরে সুর মিলিয়ে ভক্তদের ‘হরে শামীম, হরে শামীম, হরে হরে হরে শামীম’ বলতে শোনা যায়। শামীম নিজ গ্রামে আস্তানা গড়ে তুলে সেখানে মাদকের আখড়া বসিয়ে অসামাজিক কর্মকা- চালিয়ে আসছিলেন। সেখানে উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের আনাগোনাই বেশি। তাদের মাদকের নেশায় বুদ করে অসামাজিক কাজের আসর বসিয়ে ব্রেন ওয়াশ করে নিজের গড়া তরিকায় বিশ্বাসী করে তোলেন শামীম।
এছাড়া ভ-পীর আবদুর রহমান শামীম নিজেকে বাংলার নবী দাবি করে পবিত্র কালেমা বিকৃত করেন। কালেমার সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ‘শামীম বাবা’ রাসুলুল্লাহ) এটাকেই সঠিক বলে প্রচার করেন। তার নির্বোধ ভক্তরাও বিশ্বাস করে তা জপতে থাকেন। নিজের আস্তানাতেই ভবিষ্যতে হজ অনুষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য করেন এই ভ-পীর। এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দফায় দফায় খবর বের হওয়ার পাশাপাশি তার ভ-ামির ভিডিও ক্লিপ দুটি ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। গত ৩০ মে স্থানীয় ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল হকের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি প্রতিনিধি দল কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলামের কাছে ভ-পীর আবদুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূূতিতে আঘাতসহ নিজের আস্তানায় মাদক ও অসামাজিক কর্মকা-ের বিষয়ে শামীমের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে এতদিন প্রশাসন ও পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, শামীমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজিসহ মামলায় আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার পরপরই তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিজের আস্তানা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার দুপুরে তাকে কুষ্টিয়ার জেল হাজতে পাঠানো হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category