• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
শ্রমিকদের জন্য কর্মবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে: স্পিকার ‘মাদক নিয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স’ আইনগত সহায়তা দরিদ্র-অসহায় নাগরিকের অধিকার: আইনমন্ত্রী রোগীর প্রতি চিকিৎসকের অবহেলা সহ্য করা হবে না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী নৌকা-জাল মেরামতে ব্যস্ত, নদীতে নামার অপেক্ষায় জেলেরা বান্দরবানে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হয়েছে সাংবাদিকবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কৃত্রিম বৃষ্টিতে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ভিজলেন মেয়র আতিক বিএনপির ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই: কাদের

আশা ও নিরাশার দোলাচলে দুলছে আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার

Reporter Name / ১১৫ Time View
Update : বুধবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারে বিরাজ করছে কঠিন পরিস্থিতি। উত্থান ও পথন, আশা ও নিরাশার দোলাচলে দুলছে যেন গোটা বিশ্ব। একদিকে যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আরো জোরদার হওয়ার আশা, ঠিক তেমনি কভিড-১৯ মহামারীর নতুন ঢেউ জন্ম দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার। বাজার পরিস্থিতি যখন সম্ভাবনা ও আশঙ্কার মাঝামাঝি পর্যায়ে আটকে আছে, তখন নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ভিন্ন পথে এগোচ্ছে। বছরের প্রথম কয়েক দিনের বাণিজ্যে এসব পণ্যের একটির ওপর অন্যটির ব্যাপক নির্ভরশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বলতে গেলে আনর্জাতিক বাজারে চলছে এখন তীব্র অস্থিতিশীলতা। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পলিসি ও সরবরাহ চক্রে বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা এই প্রকট অস্থিতিশীলতার পেছনে দায়ী। যে পণ্যটির দাম বিশ্ববাজারে সর্বাধিক বেড়েছে তা হলো কৃষিপণ্য। এতে বিদায়ী বছরের প্রথমার্ধে এলডিসির মুনাফাও বেড়েছিল লক্ষণীয় মাত্রায়। যদিও এটি এক দশক আগের রেকর্ড মুনাফার নিচে অবস্থান করছে। ২০১০-১১ সালের আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার ও বর্তমান পণ্যবাজারের মধ্যে আমূল পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এখন দৃশ্যপট ধারাবাহিক অস্থিতিশীলতার দিকে মোড় নিচ্ছে।
তবে স্বর্ণের দাম অন্যান্য পণ্যের চেয়ে স্থিতিশীল পর্যায়ে ছিল। জানা যায়, ২০২১ সালে স্বর্ণের দাম ছিল আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কম। তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পণ্যটির বাজার ছিল নিম্নমুখী। বিনিয়োগ চাহিদা কমে যাওয়া এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। নতুন বছরেও ধাতুটির বাজারে প্রতিকূলতা অব্যাহত থাকবে। প্রতি ট্রয় আউন্সের দাম ১ হাজার ৮০০ ডলারের গ-ি ছুঁতে পারবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগ চাহিদা বাড়ার আগ পর্যন্ত অব্যাহত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে খাতসংশ্লিষ্টদের।
নবাগত ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এ ব্যাপারে কন সন্দেহ নেই। তথ্য বলছে, জ¦ালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের মিত্র জোট ওপেক প্লাস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক চার লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর পরও অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট ৮০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ওপেক প্লাসের উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকার ঘোষণায় জ¦ালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ঘটছে তার উল্টো ঘটনা। কারণ সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধির হার বেশি। তার ওপর জোটভুক্ত অনেক দেশ বেঁধে দেয়া কোটা অনুযায়ী জ¦ালানি তেল উত্তোলনে ব্যর্থ হচ্ছে। এটিও মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
এতে কন সন্দেহ নেই যে, নতুন বছরে জ¦ালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি উদ্বৃত্তের পথে হাঁটছে। কিন্তু এখানেও একটি ‘কিন্তু’ থেকে যায়। কিন্তুটা হলো, চাহিদা প্রত্যাশা কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে, অথবা ওমিক্রন এ প্রত্যাশায় নতুন করে বাধার সৃষ্টি করবে কিনা। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ওপেক প্লাসের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে আসন্ন মাসগুলোয় উত্তোলন বাড়বে নাকি কমবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর জ¦ালানি পণ্যের বাজার ওঠানামা নির্ভর করছে।
এসবের পরেও রয়েছে অনবরত বিশ্ব বাজারের সংকোচন-প্রসারণ। সংকুচিত সরবরাহ ও ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা ধাতব পণ্যের বাজারে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে দস্তার দাম ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ ডলারে। এ ছাড়া একই সময় অ্যালুমিনিয়ামের দাম ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি টনের দাম ২ হাজার ৮৪০ ডলারে পৌঁছেছে।
জানা যায়, জ¦ালানি পণ্যের ঊর্ধ্বমুখীতার কারণে বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন বৈদেশিক কোম্পানি। কারণ, জ¦ালানি পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে ইউরোপের নীতিনির্ধারকরা অ্যালুমিনিয়াম ও দস্তা উৎপাদন কমিয়ে আনতে কোম্পানিগুলোকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। ফলে এসব পণ্য সরবরাহ নতুন করে বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জের (এলএমই) মজুদাগারগুলোয়ও এসব পণ্যের মজুদ কমছে। সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতায় বছরের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে তামা ও ইস্পাতের বাজারও।
বিশ্ব পণ্যবাজারের এই নাজেহাল অবস্থার পেছনে মূলত করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রন প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে। করোনাভাইরাসের একের পর এক ধাক্কা পণ্যবাজারকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রা সহায়তা কমে যাওয়ার প্রশ্নে বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। কার্গো জট, কনটেইনার সংকট, উচ্চ মাত্রার পরিবহন ব্যয়সহ নানা প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে সহসাই স্বাভাবিক হচ্ছে না পণ্যের সরবরাহ চক্র। এ বছর জ¦ালানিসহ সব ধরনের পণ্যেরই অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বর্তমানে বিশ্বের নিম্ন কার্বন অর্থনীতিতে স্থানান্তরের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্ব পণ্যবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সার্বিকভাবে দেশের আমদানি খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তাব্যয়েও ব্যাপক উল্লম্ফনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ উদ্বেগকে আরো জোরালো করে তুলেছে বৈশ্বিক জ¦ালানি পণ্যের বর্তমান বাজার অস্থিতিশীলতা। এরইমধ্যে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে শিল্পোৎপাদন, পরিবহন ও গৃহস্থালি পর্যন্ত অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতেই বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে জ¦ালানি পণ্যের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি।
দেশে বর্তমানে রপ্তানি আয় যেমন কমেছে, তেমন বেড়েছে আমদানি ব্যয়। দেশের আমদানি প্রবৃদ্ধিতে যে উল্লম্ফন চলছে, সেটি পণ্য আমদানির পরিমাণের প্রবৃদ্ধি নয়। বরং বিশ্ববাজার থেকে উচ্চমূল্যে ভোগ্যসহ অন্যসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়েই দেশের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির তুলনায় ভোগ্য ও জ¦ালানি পণ্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিই ভূমিকা রাখছে বেশি। বাজারের এ অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এটি স্পষ্ট যে, ভোগ্যপণ্যের বিশ্ববাজারের তুলনায় আমরা খুবই ছোট একটি দেশ। বেশির ভাগ পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবস্থান এখনো দিনে এনে দিনে খাওয়ার পর্যায়ে। জ¦ালানি ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের সামর্থ্য আমাদের এখনো হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ভবিষ্যতের স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা ভাবতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাকের কাঁচামাল নিয়েও নতুন করে দুশ্চিন্তার শুরু হয়েছে। জানা যায়, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল তুলার আন্তর্জাতিক বাজার এখন উর্ধ্বমুখি। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে তুলার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাউন্ডপ্রতি ১ ডলার ১০ সেন্টের কিছু বেশিতে। করোনার আগেও তা ছিল প্রায় ৬৫ সেন্ট।
তবে এটিও ঠিক মেঘ একসময় কেটে যাবে, এবং ঝলমল করে উঠবে সুর্য। বিশ্ব পণ্যবাজারের এই কঠিন পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার জন্য সরকারকে চাতুর্যের সাথে এগোতে হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঠিক কর্মপন্থা ও কৌশল অবলম্বন করার কোন বিকল্প নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category