• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনা প্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনে আগুন : নেভানোর চেষ্টা চলছে, তবে সময় লাগবে গাছ কাটা বন্ধে রিট আবেদন অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ মামলা, দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং: ট্রাফিক পুলিশ এবার মানবপাচার মামলায় রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী মুসলিমদের একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকার পরিচালনাকারী সবাই ফেরেশতা নয়: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা ঋণ, গ্রেপ্তার ৮ বিচারকাজ পরিচালনায় আপিল বিভাগে দুই বেঞ্চ

তেলের সাম্রাজ্য হারাচ্ছে রাশিয়া

Reporter Name / ১৫২ Time View
Update : বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বিশ্ব জ্বালানি বাজারে মোড়লের অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটি কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে। এ ছাড়া জার্মানি, ইতালি ও অস্ট্রিয়ার অর্থনীতির জন্য রাশিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার বৈশ্বিক শক্তি মূলত তেল নিয়ে। বিশ্বে অপরিশোধিত তেল (ক্রুয়েড) রপ্তানিতে দ্বিতীয় রাশিয়া। সৌদি আরবের পরেই এর অবস্থান। দেশটি প্রতিদিন গড়ে পাঁচ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করে। এ ছাড়া প্রায় তিন মিলিয়ন ব্যারেল পরিশোধিত পণ্য (ডিজেল ও বিমান জ্বালানি) রপ্তানি করে। অর্থনৈতিক এই শক্তি ও সামর্থ্যরে জেরে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণ ও অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বিশ্বাস করেছিলেন, জ¦ালানি শক্তির বাজারে তিনি যে নগ্নশক্তি প্রয়োগ করবেন তার বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াবে না। পুতিন ভেবেছিলেন, ইউরোপীয়রা খুব বেশি প্রতিরোধ করলে তিনি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। যদি বাকি বিশ্ব প্রতিরোধস্বরূপ তেল কেনা বন্ধ করে দেয় তাহলে তেলের দাম বাড়বে এবং সর্বত্রই অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেখা দেবে। কিন্তু বাস্তবে পুতিনের ভাবনার উল্টো হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ রুশ অভিযানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও তাদের মিত্ররা নিজে থেকেই রাশিয়া জ¦ালানি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সারা বিশ্বই রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানি করা থেকে বিরত থাকছে। অবশ্য ইউরোপ আর কখনো রাশিয়ার ওপর আমদানিনির্ভর থেকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে না। ফলস্বরূপ, রাশিয়া শিগগিরই বিশ্ব জ¦ালানি বাজারের খিলাড়ি হিসেবে বিলুপ্ত হবে।পুতিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক কোটিরও বেশি মানুষ। যার মধ্যে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। রুশ বাহিনী বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করছে। এ ছাড়া এক কোটি ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় বোমা হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। মারিউপোল ও অন্যান্য স্থানে বেসামরিক লোকের আশ্রয়স্থল টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ব মানবতার দৃষ্টিতে যা একেবারই যুদ্ধপরাধ। ইউক্রেনের এই ক্ষত ইউরোপ বেশ তীব্রভাবে অনুভব করেছে। এ ঘটনা সমগ্র ইউরোপকে আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। ইউরোপের দেশগুলো লাখ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী গ্রহণ করেছে। যতটা সম্ভব যে কোনো উপায়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিটি নৃশংসতা ইউরোপীয় নেতা ও জনসাধারণের মধ্যে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বাড়াচ্ছে। বেশ কিছু ইইউ দেশ ইতোমধ্যে রাশিয়ার তেল বয়কট করেছে। ট্যাংকারট্রেকারস ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে ডেনমার্ক রাশিয়া থেকে মাত্র ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ক্রুড আমদানি করেছে। কিন্তু গত মার্চে দেশটি ডেনমার্ক থেকে কোনো ক্রুড আমদানি করেনি। সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও অন্য দেশগুলো রাশিয়ার ক্রড আমদানির পতনের খবর দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপে রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার নেতৃত্ব দিতে জার্মানি ও অন্য দেশগুলোকে পদক্ষেপ নিতে দেখা যেতে পারে। রাশিয়ার গ্যাস ও পাইপলাইন তেলের জন্য এসক্রো অ্যাকাউন্টে (থার্ড পার্টি) অর্থ প্রদান ও ইউরো দিয়ে রাশিয়ার কোনো অস্ত্র কেনা যাবে না বলে আলোচনা হয়েছে। পুতিন গ্যাসের দাম কেবল রুবলে পরিশোধ করার চেষ্টা করছেন। অবশ্য এটিকে ইইউ চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।পুতিন ও কিছু জ্বালানি ব্যবসায়ী মনে করছেন, ইউরোপে রাশিয়ার তেলের বাজার বন্ধ হলে এশিয়ার বাজার ধরা সহজ হবে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, এর আগে ইরানের ওপরও তেল নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে যদি রাশিয়ার তেল ও ক্রুয়েড ট্যাংকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সামুদ্রিক বিমা বন্ধ করে, তাহলে বিশ্বের বেশিরভাগ ট্যাংকার বহর রাশিয়ার বাজার থেকে ফিরে যাবে। রাশিয়ার নিজস্ব কিছু ট্যাংকার আছে। কিন্তু তাদের ট্যাংক বহর প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেল স্থানান্তর করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ অনেক ক্রুড মুরমানস্ক, বাল্টিক সাগর বা কৃষ্ণসাগর থেকে আনার প্রয়োজন হবে। কেউ কেউ হয়তো রাশিয়ার বাজারে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে পারে। এমন দেশ, জাহাজ মালিক, চার্টারার, ক্যাপ্টেনদের নজরদারি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। এমনকি তাদের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে। ইউক্রেন এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের অর্থায়নে জড়িত যে কারো বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি বিশ্ব একবার রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তবে তারা আর রাশিয়ার কাছে ফিরবে না। কোনো ইউরোপীয় স্বজ্ঞানে চায় না যে পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত রাশিয়া ‘ফ্রি ক্যাশফ্লোতে’ হাইড্রোকার্বন রপ্তানি করুক। কারণ সেই অর্থ পুতিনকে আরও অস্ত্রসজ্জিত ও আক্রমণাত্মক করবে ও ন্যাটোর ওপর সম্ভাব্য হামলা করবে। রাশিয়ার কাছে তেল ও গ্যাস ছাড়া তেমন আর কিছু নেই। রাশিয়ার এই জ্বালানির পেছনে ভয়ংকর যুদ্ধের অর্থায়ন রয়েছে। এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। বিশ্বকে অবশ্যই রাশিয়ার জ্বালানি পণ্য ছাড়া বাঁচতে শিখতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category