ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে চুরি-দস্যুতা

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:২২:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০২২
  • / ১৫৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি চুরি-দস্যুতায় ক্ষুণœ হচ্ছে। চলতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় হঠাৎ করেই বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি-দস্যুতার ঘটনা বেড়েছে। চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত রিক্যাপ ৩টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করেছে। অথচ বিগত ২০২১ সালেও চট্টগ্রাম বন্দর দস্যুতামুক্ত ছিল। ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীরাও বেশ স্বস্তিতে ছিলো। আর বন্দর জলসীমা দস্যুতামুক্ত থাকায় বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছিল। কিন্তু মার্চ মাস থেকেই ঘটনা বাড়ায় ওই সাফল্য হোঁচট খেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্দর জলসীমায় বাণিজ্যিক হাজাজে কোনো দস্যুতা-চুরির ঘটনা ছিল না। মার্চ মাসে একটি ঘটনা ঘটেছে, আর এপ্রিলে ঘটেছে দুটি ঘটনা। তিনটি ঘটনাই কুতুবদিয়া এলাকার সাগরে ঘটেছে। আর ট্যাংকার জাহাজেই তিনটি ঘটনা ঘটেছে। বাণিজ্যিক জাহাজে সংগঠিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপ প্রকাশিত রিপোর্টে জানুয়ারি-এপ্রিল- ওই চার মাসে তিনটি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। সংগঠনটি চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি-এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে ৩১টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করেছে। তার মধ্যে সিঙ্গাপুর-মালাক্কা স্ট্রেইটে সবচেয়ে বেশি ২১টি ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে তিনটি, ভারতে তিনটি, ইন্দোনেশিয়ায় তিনটি ও ফিলিপাইনে তিনটি ঘটনা ঘটেছে। তবে জাহাজে দস্যুতা ঘটার ২০ মিনিটের মধ্যেই এদেশের কোস্ট গার্ড টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া এবং তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া পণ্য উদ্ধারের জন্য কৃতিত্বও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিদেশি একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় পৌঁছার পর ছোট হোক বা বড় হোক যে কোনো পাইরেসির শিকার হলে চট্টগ্রাম বন্দরকেই বিপাকে পড়তে হয়। বন্দর জলসীমার কুতুবদিয়া এলাকার সাগরে গত ১৫ মার্চ ‘ওয়াসান টোপাজ’ ট্যাংকার জাহাজ, ১৬ এপ্রিল ‘বিএলপিজি সোফিয়া’ এলপিজি ট্যাংকার জাহাজ এবং ২৬ এপ্রিল ‘এসটিআই ম্যাজিস্টার’ ট্যাংকার জাহাজে পাইরেসির ঘটনা ঘটে। তিনটি ঘটনায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। শুধু চুরির উদ্দেশ্যেই ঘটেছে। তিনটি ঘটনায় রশি, রং ও তার চুরি হয়েছে। কোস্ট গার্ড টিম দ্রুত সেগুলো উদ্ধার করেছে। আর ওসব ঘটনায় জাহাজের কোনো ক্যাপ্টেন-ক্রু আহত হয়নি, জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) ২০০৬ সালের এক প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দরকে জলদস্যু আক্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বন্দর ঘোষণা করা হয়। ওই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৭টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল। একের পর এক দস্যুতার ঘটনায় ওই সময়ে পৃথিবীজুড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে অনিরাপদ মনে করে বিদেশি জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে অস্বীকৃতি জানাত। আর যেসব জাহাজ পণ্য নিয়ে বন্দর জলসীমায় পৌঁছাত, তারাও সারচার্জ বা বাড়তি মাসুল আরোপ করতো। ফলে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে খরচ বেশি লাগতো। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড যৌথ প্রচেষ্টায় বন্দরের জলসীমা দস্যুতামুক্ত হতে শুরু করে।
এদিকে বন্দর জলসীমায় দস্যুতা-চুরি বাড়ার কারণ বন্দরসচিব ওমর জানান, এসব চুরির ঘটনা খুবই ছোট্ট এবং বিচ্ছিন্ন। তারপরও বিষয়টিকে ছোট বলে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। বন্দরের জলসীমা বেড়েছে এবং নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। ছোট ঘটনাও যাতে না ঘটে সেজন্য চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড জলসীমা পাইরেসিমুক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে চুরি-দস্যুতা

আপডেট সময়ঃ ০৮:২২:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি চুরি-দস্যুতায় ক্ষুণœ হচ্ছে। চলতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় হঠাৎ করেই বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি-দস্যুতার ঘটনা বেড়েছে। চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত রিক্যাপ ৩টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করেছে। অথচ বিগত ২০২১ সালেও চট্টগ্রাম বন্দর দস্যুতামুক্ত ছিল। ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীরাও বেশ স্বস্তিতে ছিলো। আর বন্দর জলসীমা দস্যুতামুক্ত থাকায় বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছিল। কিন্তু মার্চ মাস থেকেই ঘটনা বাড়ায় ওই সাফল্য হোঁচট খেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্দর জলসীমায় বাণিজ্যিক হাজাজে কোনো দস্যুতা-চুরির ঘটনা ছিল না। মার্চ মাসে একটি ঘটনা ঘটেছে, আর এপ্রিলে ঘটেছে দুটি ঘটনা। তিনটি ঘটনাই কুতুবদিয়া এলাকার সাগরে ঘটেছে। আর ট্যাংকার জাহাজেই তিনটি ঘটনা ঘটেছে। বাণিজ্যিক জাহাজে সংগঠিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপ প্রকাশিত রিপোর্টে জানুয়ারি-এপ্রিল- ওই চার মাসে তিনটি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। সংগঠনটি চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি-এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে ৩১টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করেছে। তার মধ্যে সিঙ্গাপুর-মালাক্কা স্ট্রেইটে সবচেয়ে বেশি ২১টি ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে তিনটি, ভারতে তিনটি, ইন্দোনেশিয়ায় তিনটি ও ফিলিপাইনে তিনটি ঘটনা ঘটেছে। তবে জাহাজে দস্যুতা ঘটার ২০ মিনিটের মধ্যেই এদেশের কোস্ট গার্ড টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া এবং তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া পণ্য উদ্ধারের জন্য কৃতিত্বও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিদেশি একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় পৌঁছার পর ছোট হোক বা বড় হোক যে কোনো পাইরেসির শিকার হলে চট্টগ্রাম বন্দরকেই বিপাকে পড়তে হয়। বন্দর জলসীমার কুতুবদিয়া এলাকার সাগরে গত ১৫ মার্চ ‘ওয়াসান টোপাজ’ ট্যাংকার জাহাজ, ১৬ এপ্রিল ‘বিএলপিজি সোফিয়া’ এলপিজি ট্যাংকার জাহাজ এবং ২৬ এপ্রিল ‘এসটিআই ম্যাজিস্টার’ ট্যাংকার জাহাজে পাইরেসির ঘটনা ঘটে। তিনটি ঘটনায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। শুধু চুরির উদ্দেশ্যেই ঘটেছে। তিনটি ঘটনায় রশি, রং ও তার চুরি হয়েছে। কোস্ট গার্ড টিম দ্রুত সেগুলো উদ্ধার করেছে। আর ওসব ঘটনায় জাহাজের কোনো ক্যাপ্টেন-ক্রু আহত হয়নি, জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) ২০০৬ সালের এক প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দরকে জলদস্যু আক্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বন্দর ঘোষণা করা হয়। ওই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৭টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল। একের পর এক দস্যুতার ঘটনায় ওই সময়ে পৃথিবীজুড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে অনিরাপদ মনে করে বিদেশি জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে অস্বীকৃতি জানাত। আর যেসব জাহাজ পণ্য নিয়ে বন্দর জলসীমায় পৌঁছাত, তারাও সারচার্জ বা বাড়তি মাসুল আরোপ করতো। ফলে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে খরচ বেশি লাগতো। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড যৌথ প্রচেষ্টায় বন্দরের জলসীমা দস্যুতামুক্ত হতে শুরু করে।
এদিকে বন্দর জলসীমায় দস্যুতা-চুরি বাড়ার কারণ বন্দরসচিব ওমর জানান, এসব চুরির ঘটনা খুবই ছোট্ট এবং বিচ্ছিন্ন। তারপরও বিষয়টিকে ছোট বলে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। বন্দরের জলসীমা বেড়েছে এবং নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। ছোট ঘটনাও যাতে না ঘটে সেজন্য চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড জলসীমা পাইরেসিমুক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।