ঢাকা, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

বেসরকারি খাতে বিপুল বিদেশী ঋণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ বাড়তে পারে

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:৪০:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের বেসরকারি খাতে দ্রুত বাড়ছে বিদেশী ঋণের পরিমাণ। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। আর গত বছরের মার্চে বিদেশি ঋণ ছিল ১ হাজার ৬২২ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বেড়েছে ৮৭৬ কোটি ডলার বা ৫৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। একই সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বেড়েছে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর সরকারি-বেসরকারি খাত মিলে গত মার্চ শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩২৩ কোটি ডলার। তার মধ্যে সরকারি খাতে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার এখন আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স কমাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাপক চাপে রয়েছে। ফলে এক বছরে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারে ৮ টাকার বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ আরো বাড়বে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতে গত মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময় শেষে যা ছিল ১১ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারের তুলনায় কম সুদের কারণে উদ্যোক্তারা বিদেশি ঋণে ঝুঁকছে। বর্তমানে সব ধরনের খরচসহ ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে বিদেশি ঋণ পাওয়া যায়। আর দেশের বাজারে সুদহার কমার পরও গত মে শেষে গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। দেশের বাজারে গড় সুদহার ৭ শতাংশের কাছাকাছি মানে সবাই এরকম সুদে ঋণ পাচ্ছে তেমন না। অনেক ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে। ওই কারণে উদ্যোক্তাদের বিদেশি ঋণে আগ্রহ বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ স্থিতির মধ্যে ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার বা ৬৮ দশমিক ৩১ শতাংশ স্বল্পমেয়াদি। বাকি ৭৯১ কোটি ডলার বা ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত তৈরি পোশাক, খাদ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিমেন্ট, টোব্যাকোসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে ওসব অর্থ এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এক বছরের কম সময়ের জন্য ঋণ নিচ্ছে। সেজন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে না। তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কমিটির অনুমোদন নিতে হয়।
এদিকে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতির প্রয়োজনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বিদেশি ঋণ নেয়ার সুযোগ দিলেও সেক্ষেত্রে ঝুঁকি পর্যালোচনা করা জরুরি। বিশেষ করে যারা বিদেশি ঋণ নিয়ে অভ্যন্তরীণ খাতে বিনিয়োগ করেছে তাদের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কারা কী কাজে ঋণ নিচ্ছে, তা তদারকিতে রাখতে হবে। তা নাহলে কেউ ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে কান্ট্রি রেটিংয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বেসরকারি খাতে বিপুল বিদেশী ঋণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ বাড়তে পারে

আপডেট সময়ঃ ০৮:৪০:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের বেসরকারি খাতে দ্রুত বাড়ছে বিদেশী ঋণের পরিমাণ। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। আর গত বছরের মার্চে বিদেশি ঋণ ছিল ১ হাজার ৬২২ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বেড়েছে ৮৭৬ কোটি ডলার বা ৫৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। একই সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বেড়েছে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর সরকারি-বেসরকারি খাত মিলে গত মার্চ শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩২৩ কোটি ডলার। তার মধ্যে সরকারি খাতে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার এখন আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স কমাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাপক চাপে রয়েছে। ফলে এক বছরে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারে ৮ টাকার বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ আরো বাড়বে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতে গত মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময় শেষে যা ছিল ১১ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারের তুলনায় কম সুদের কারণে উদ্যোক্তারা বিদেশি ঋণে ঝুঁকছে। বর্তমানে সব ধরনের খরচসহ ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে বিদেশি ঋণ পাওয়া যায়। আর দেশের বাজারে সুদহার কমার পরও গত মে শেষে গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। দেশের বাজারে গড় সুদহার ৭ শতাংশের কাছাকাছি মানে সবাই এরকম সুদে ঋণ পাচ্ছে তেমন না। অনেক ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে। ওই কারণে উদ্যোক্তাদের বিদেশি ঋণে আগ্রহ বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ স্থিতির মধ্যে ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার বা ৬৮ দশমিক ৩১ শতাংশ স্বল্পমেয়াদি। বাকি ৭৯১ কোটি ডলার বা ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত তৈরি পোশাক, খাদ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিমেন্ট, টোব্যাকোসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে ওসব অর্থ এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এক বছরের কম সময়ের জন্য ঋণ নিচ্ছে। সেজন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে না। তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কমিটির অনুমোদন নিতে হয়।
এদিকে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতির প্রয়োজনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বিদেশি ঋণ নেয়ার সুযোগ দিলেও সেক্ষেত্রে ঝুঁকি পর্যালোচনা করা জরুরি। বিশেষ করে যারা বিদেশি ঋণ নিয়ে অভ্যন্তরীণ খাতে বিনিয়োগ করেছে তাদের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কারা কী কাজে ঋণ নিচ্ছে, তা তদারকিতে রাখতে হবে। তা নাহলে কেউ ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে কান্ট্রি রেটিংয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।