নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালন করবো: সিইসি

- আপডেট সময়ঃ ০৭:৫৮:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২
- / ১৫৬ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ডিগবাজি খাবো না, নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো। আজ মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সঙ্গে সংলাপে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। সংলাপে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার পক্ষে মত দেয়। এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে ব্যালট পেপারে যে অসুবিধা, ব্যালট পেপারটা ছিঁড়ে সিল মেরে দেয়। বাংলাদেশে যে নির্বাচনগুলো অতীতে হয়েছে, ’৭৩ সালে নির্বাচন হয়েছে, এরপর সামরিক শাসনের সময় নির্বাচন হয়েছে। হ্যাঁ-না ভোট হয়েছে। এসময় ইভিএমের সুবিধা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইভিএম লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে ভেঙে ফেললেও ভোট নষ্ট হবে না। সিইসি আরও বলেন, কেন্দ্র দখল ও ভোটারপ্রতি পাঁচশ ভোট পড়লে এর হার বেড়ে যাওয়া সম্পর্কেও আলোচনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে, এসবের সমাধান করে অর্থবহ ও নিরপেক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। ইসির ওপর আস্থা রাখার কথা জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। আস্থা রাখতে গিয়ে চোখ বন্ধ রাখলে হবে না। নজদারিতে রাখতে হবে, যে আমরা কি আসলেই সাধু, নাকি ভেতরে ভেতরে অসাধু। সেটা যদি আপনারা নজর না রাখেন, তবে আপনাদের দায়িত্ব পালন হবে না। অর্থশক্তিকে কীভাবে সামাল দেবো, একটা বুদ্ধি দেন। এ অর্থ নিয়ন্ত্রণ করবো কীভাবে? কাগজে-কলমে পাঁচ লাখ টাকা করা হলেও যদি প্রকৃত খরচ পাঁচ কোটি টাকা হয় কীভাবে আমি আপনাকে ধরবো, আপনি আমাকে কীভাবে ধরবেন। এটা সম্ভব। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সিইসি আরও বলেন, আমাদের চর্চাটা অপসংস্কৃতি হয়ে গেছে। পয়সা ঢালছে, মাস্তান ভাড়া করছে। একজন প্রফেশনাল কিলারকে হায়ার করতে খুব বেশি পয়সা লাগে না, আজকাল যেটা হয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবাইকে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। মাঠে আপনাদের থাকতে হবে। আমাদের তথ্য দিলে আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এই প্রতিশ্রুতির কিছু মূল্য থাকা উচিত। একেবারে যে আমরা ডিগবাজি খেয়ে যাবো তা তো নয়। সেটা হওয়ার কথা নয়। আমরা আমাদের দায়িত্ব সর্বশক্তি দিয়ে পালনের চেষ্টা করবো। আপনারাও কিছু দায়িত্ব নেবেন। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি মোকাবিলা ও ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বেশি দায়িত্ব নেবেন। আমরা শেয়ার করবো দায়িত্বটা। সংলাপে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেই যে ভোটচুরি হবে না, তা নয়। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক হলে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। সিইসি বলেন, নির্বাচন সহজ কাজ নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কঠিন একটি কাজ। এজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা লাগবে। আমরা বারবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছি। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে মানুষের পারসেপশনের একটা পরিবর্তন হয়। তবে অংশগ্রহণ হলেই যে অবিচার বা ভোটচুরি হবে না তা নয়। কিন্তু অংশগ্রহণ হলে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, প্রতিটা কেন্দ্রে বড় বড় দলগুলোর কর্মী-সমর্থকরা থাকলে, তারাই আমার কাজটা সহজ করে দেয়। আমি চাই অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্যই আমরা এমনটাই চাইব। সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে দায়িত্ব পালন করবে এর ওপর আপনাদের নজরদারি রাখতে হবে। আমাদের কোনটা উচিত হয়নি বা অপকর্ম হয়ে গেছে, আমরা আন্তরিকভাবে আশা করব আপনারা নির্দ্বিধায় সঙ্গে সঙ্গে সেটা ফাইন্ড আউট করবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকে যদি বাঁচিয়ে রাখা না যায় রাজনীতি উধাও হয়ে যাবে। রাজনীতি থাকবে না। রাজনীতি বলা যাবে না, গণতন্ত্রও বলা যাবে না। তখন আপনারা যদি অন্য কোনো পন্থায় চলে যান ভিন্ন কথা। আপনাদের বক্তব্য আমরা অবশ্যই বিবেচনা করব। নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ লাগবে। সবার সহযোগিতা ও সমর্থন আমরা চাইব। সংলাপে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এতে ইসির পক্ষে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।