• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন

অধিদফতরের ধার্য করা জরিমানা মন্ত্রণালয় মওকুফ করায় কমছে না পরিবেশ দূষণ

Reporter Name / ৩৮৮ Time View
Update : বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পরিবেশ দূষণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিবেশ অধিদফতরের ধার্যকৃত জরিমানা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় মওকুফ করে দিচ্ছে। ফলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিগত ১০ বছরে পরিবেশ অধিদফতরের ধার্য করা জরিমানার ৩৮৫ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১৮৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। কারণ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই জরিমানা করার পর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত আপিল আদালতে মামলা করে জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে নেয়। তাছাড়া দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেও অনেক সময় জরিমানা মওকুফ করিয়ে নেয়। ফলে জরিমানার বেশির ভাগ অর্থই অনাদায়ী থেকে যায়। পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিবেশ দূষণকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ অধিদফতরের জরিমানা নিয়ে মাথাই ঘামায় না। কারণ পরিবেশ অধিদফতর ৪/৫ বছরে একবার পরিদর্শনে যায়। ওই সময় যদি অধিদফতরের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকাও জরিমানা করা হয় তাতেও কিছু যায়-আসে না। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতোই সচল থাকে ও পরিবেশ দূষণ অব্যাহত রাখে। ওই জরিমানা লোক দেখানো। যেহেতু তা আদায়ই করা যায় না, তাই অনেক সময় সেটি পরিবেশ দূষণে শিল্পমালিকদের উৎসাহিতও করছে। সূত্র জানায়, পরিবেশ দূষণের দায়ে রাজধানী শ্যামপুরের একটি ডায়িং ও একটি টেক্সটাইল কারখানাকে এখন পর্যন্ত তিনবার জরিমানা করা হয়েছে। অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকা, নির্গত তরল বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা দূষিত করাসহ নানা কারণে সর্বশেষ ২০১৯ সালেও পরিবেশ অধিদফতরের এনফোর্সসেন্ট শাখা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছিল। কিন্তু তারপরও বন্ধ হয়নি দূষণ। এমনকি প্রতিষ্ঠান দুটিও বহাল-তবিয়তে চলছে। এর কারণ হিসাবে জানা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রথমবার ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে তা বিশেষ বিবেচনায় মওকুফ করা হয়। তার পরের দু’বার আপিল করে ৮০ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। আর এভাবেই পরিবেশ দূষণকারী কারখানা চালু রাখা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা ধার্য করেও পরিবেশ দূষণ থামানো যাচ্ছে না। এর কারণ হলো জরিমানার পরিমাণ কম ও তার মওকুফের সুযোগ থাকা। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের একাধিকবার জরিমানা করা হলেও তারা দূষণ থামাচ্ছে না। এমনকি বারবার ক্ষতিপূরণ দিয়েও মালিকরা কারখানা সচল রাখছে। আর পরিবেশ অধিদফতরেরও সব সময় কারো পেছনে গোয়েন্দার মতো লেগে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ওই পরিমাণ জনবল অধিদফতরের নেই। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো জরিমানার টাকা আলাদা করে রেখেই পরিবেশ দূষণ কার্যক্রমসহ কারখানা সচল রাখে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, পরিবেশ অধিদফতর যে ক্যাটাগরিতে জরিমানা করে তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তারা ১০ বছরে ৩৮৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে। অথচ বহির্বিশ্বে পরিবেশ দূষণের দায়ে একটি কোম্পানিকেই তার চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা ধার্যের নজির রয়েছে। অবশ্যই পরিবেশ অধিদফতরের দুর্বল এনফোর্সমেন্ট পদ্ধতি পরিবেশ দূষণ বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে। কারণ এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমই কম। পাশাপাশি তারা যা করে তার চেয়ে সংখ্যায় বাড়িয়ে দেখানো হয়। একজন কারখানা মালিক যখন দেখবে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছে এবং থেকেও কমানোর জন্য আপিল ও মওকুফের ব্যবস্থা রয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে পরিবেশ দূষণে উৎসাহিত হবে।অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের এনফোর্সমেন্ট শাখার পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী জানান, ক্ষতিপূরণ ধার্যেন একটি নীতিমালা আছে। কী কারণে পরিবেশ দূষণ করলে কত টাকা ক্ষতিপূরণ করা হবে, তা বিশেষজ্ঞ প্যানেল ঠিক করে দিয়েছে। অধিদফতরের এনফোর্সমেন্ট শাখা শুধু ওই নির্দেশনা অনুসরণ করে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো-কমানোর যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতা বিশেষজ্ঞ প্যানেল, পরিবেশবিদ ও গবেষকরা ভাববেন। তাছাড়া আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে সেজন্য যে, যে ক্ষতিপূরণ দেবে তার কোনো কথা থাকলে তা যেন উপস্থাপন করতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category