নিজস্ব প্রতিবেদক :
অনলাইন জুয়ায় দেশ থেকে পাচার হচ্ছে বিপুল টাকা। সবার চোখের সামনে অনলাইন জুয়া অবাধে চললেও খুব বেশি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ওই জুয়ার সাইটগুলো ফেসবুক আইডি, পেজ, গ্রুপ, ওয়েবসাইট ও মোবাইলভিত্তিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপ দিয়ে চলছে। এতোদিন বিদেশি আয়োজনে ওসব জুয়ার সাইট চললেও এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান। দেশজুড়েই তরুণ-তরুণীরা ওসব জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং বিপুল পরিমাণ টাকা খোয়াচ্ছে। তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি ৩৩১টি জুয়ার সাইট বন্ধ করছে। সিআইডির অনুসন্ধানে বিগো লাইভ নামে অনলাইন জুয়ায় গত ২০ মাসে ১০৯ কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। মূলত ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই অনলাইন জুয়ায় ঝুঁকে পড়েছে। আর ওই সুযোগে অপরাধী চক্র কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। সিআইডি এবং বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরেও দেশী ও বিদেশী জুয়ার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে মূলত ২০১৬ সাল থেকে ক্রিকেটকে ঘিরে অনলাইনে জুয়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তখন ওয়েবসাইট খুলে মানুষকে যুক্ত করে বেটিংয়ে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হতো। পরবর্তীকালে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাইট থেকে ব্যবহারকারীদের অ্যাপে শিফট করা হয়। অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী খেলার চিপস কিনতে নগদ অর্থ, ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড প্রয়োজন পড়ে। সেগুলোর মাধ্যমেই অপরাধী চক্র দেশ থেকে টাকা পাচার করে থাকে। মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ডোমেইনের মাধ্যমেও সরাসরি অনলাইন গেইম বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। সেজন্য দেশে এবং বিদেশে হোস্টকৃত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য কার্ড বা অন্য কোনো মাধ্যমে জমা দিয়ে জুয়ায় অংশ নিতে হয়। অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা নেয়। প্রকাশ্যে এর হার কমলেও অনলাইনে ওই খেলার প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং তাতে তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হচ্ছে। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বেটিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত যে কোনো ধরনের ইলেকট্রোনিক লেনদেন কেউ করলে তা অর্থ পাচারের মধ্যে পড়ে।
সূত্র জানায়, বিটিআরসি অনলাইন জুয়ার ৩৩১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে এবং গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত আরো ১৫০টি গুগল অ্যাপ বন্ধের জন্য রিপোর্ট করেছে। ইতোমধ্যে গুগল কর্তৃপক্ষ প্লে-স্টোর থেকে ১৪টি অ্যাপ বন্ধ করেছে এবং অবশিষ্ট অ্যাপ বন্ধ করার জন্য যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট ও গুগল অ্যাপের প্রচার এবং অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়ায় ওই ধরনের ২৭টি ফেসবুক লিংক এবং ৬৯টি ইউটিউব লিংক বন্ধের জন্যও রিপোর্ট করা হয়েছে। তার অংশ হিসেবে ১৭টি ফেসবুক ও ১৭টি ইউটিউব লিংক বন্ধ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট লিংকগুলোর বন্ধ করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে একটি চক্র বিগো লাইভ নামে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেনট ছড়িয়ে ২ কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারীর কাছে থেকে ২০ মাসে ১০৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। হাতিয়ে নেয়া ওই টাকার বেশির ভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিগো লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িতদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া অসাধু উপায়ে আয় করা টাকা পাচারের পাশাপাশি অন্য কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির পকেটে ঢুকেছে কিনা তাও তদন্ত করছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। বিগো লাইভ অ্যাপের বিষয়ে সিআইডি তিন-চার মাস ধরে তদন্ত চালায়। পরে গত সেপ্টেম্বর সিআইডি সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের এক তদন্ত কর্মকর্তা ওই বিষয়ে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে। ২০ মাসে প্রতিষ্ঠানটি ১০৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার মধ্যে ৭৯ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে তোলা হয়েছে আরো ১৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের দুইটি ব্যাংকে থাকা প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। ওই দুটি অ্যাকাউন্টে বর্তমানে ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা রয়েছে। ওসব টাকার বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দেবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।