• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ

অবৈধ বাল্কহেড চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল

Reporter Name / ৯৬ Time View
Update : শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে বর্তমানে লাইটার জাহাজের বিকল্প হিসাবে ভলগেট দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। বর্তমানে তিন শতাধিক অবৈধ বাল্কহেড বহির্নোঙরে থাকা মাদার ভেসেল থেকে দিনরাত পণ্য খালাস করছে। আর ওসব বাল্কহেড চট্টগ্রাম বন্দরর চ্যানেলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। দিনে অসংখ্য বাল্কহেড কর্ণফুলী নদীতেই নোঙর অবস্থায় থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে সামান্য জরিমানা করে তাদের দায় সারে। অথচ একটি বাল্কহেড ডুবলেই বন্দরের অপারেশন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নৌপথে পণ্য বহনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাহনের নাম বাল্কহেড। কর্ণফুলী নদীতে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল দিয়েই বাল্কহেড প্রবেশ করে। বর্তমানে লাইটার জাহাজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত পণ্যবাহী ওই ধরনের তিন শতাধিক অবৈধ বাল্কহেড বন্দর চ্যানেলকে ঝুঁকিতে ফেলছে। বাল্কহেডগুলো এমনভাবে তৈরি যে পণ্যবোঝাই করলেই নৌযানটি পানিতে প্রায় ডুবে যায়। বিশেষ করে বালুভর্তি বাল্কহেড চলাচল করলে সামান্য দূর থেকেও দেখা যায় না। একইভাবে বহির্নোঙর থেকে মাদার ভ্যাসেল থেকে কয়লা কিংবা পাথরবাহী বাল্কহেড সমুদ্রপথেই দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছে। বিশেষ করে পাথর নিয়ে রাজবাড়ি, মীরসরাই, কুতুবদিয়া, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। আবার বন্দরের মধ্য দিয়ে সদরঘাট, জুট র‌্যালি, গ্যাস র‌্যালি ঘাটেও পাথর খালাস করছে। মহেশখালী পাওয়ার হাব, কুতুবদিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের উন্নয়ন কাজের নির্মাণসামগ্র বহনে বেশিরভাগই বাল্কহেড ব্যবহার করা হচ্ছে। রাতে বহির্নোঙর অবস্থান করা মাদার ভ্যাসেল থেকে বাল্কহেডে পণ্য লোড করা হয়।
সূত্র জানায়, শিপ হ্যান্ডলিংয়ে জড়িত থাকা একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অবৈধ বাল্কহেড দিয়েই বহির্নোঙর থেকে মাদার ভ্যাসেল থেকে কয়লা, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস নিচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ অবৈধ বাল্কহেডের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে শুধু জরিমানা করেই দায় সারছে। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের মতে, বাল্কহেডকে লাইটারেজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বন্দর চ্যানেলকে নিরাপদ করতে ওসব বাল্কহেডের চলাচলরোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা জরুরি। বর্তমানে কর্ণফুলী নদী ঘিরে বালু ব্যবসায়ীরা মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে অবৈধ বাল্কহেড সংগ্রহ করে বালুবোঝাই ও পরিবহন করে আসছে। কর্ণফুলী নদী থেকে বালুবোঝাই করে ওসব বাল্কহেড শিকলবাহা খাল, ভেল্লাপাড়া, মুরালী খাল, সাঙ্গু নদী, চানখালী খাল, মিলিটারিপুল এলাকায় বালু বহন করে। আবার কয়েক বছর ধরে আমদানিকৃত কয়লা, পাথর, সারের মতো বাল্ক পণ্য লাইটারিংয়ের কাজেও ওসব বাল্কহেড ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজি শিপিং (নৌপরিবহন অধিদপ্তর) বে-ক্রসিংয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেয়। নিষেধাজ্ঞাও দিয়ে থাকে ওই সংস্থাই। তবে বন্দর চ্যানেলের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ বাল্কহেড চলাচল।
এদিকে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্টদের মতে, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের কারিগরি নকশা ছাড়াই মিস্ত্রি ও ওয়েল্ডারের পরিকল্পনায় বাল্কহেড নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা ওই নৌযান তৈরির সঙ্গে জড়িত তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই। নির্মাণকারী ডকইয়ার্ডগুলোরও কোনো বৈধ অনুমতির কাগজপত্র নেই। এমনকি ওসব নৌযানের কোনো হুইল থাকে না। অথচ ওসব ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানই শিপ হ্যান্ডলিংয়ে জড়িত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য লাইটারিংয়ের জন্য অবৈধভাবে ব্যবহার করে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে ওসব বাল্কহেড ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও বাল্কহেডের ব্যবহার রোধ করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০২১ সালের শুরুতে বেশ কয়েকটি বাল্কহেড দুর্ঘটনার পর সমালোচনা ওঠায় জাহাজ মালিক, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর, শিপিং এজেন্ট, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) ও লাইটার জাহাজ ঠিকাদারদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর বৈঠক করে বাল্কহেড চলাচলে বন্ধে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গত এক বছরেও সরকারি সংস্থাগুলোর তা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন জহিরুল ইসলাম জানান, বাল্কহেড চলাচলে চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে সি ক্লাস (কোস্টাল) জাহাজ চলাচল করতে পারে। আর নির্ধারিত কিছু সময়ের জন্য এম ক্লাস (মাদার ভ্যাসেল) জাহাজ চলাচল করতে পারে। কিন্তু কোনো অনুমতি ছাড়াই বাল্কহেডগুলো বন্দর দিয়ে চলাচল করে। তাছাড়া ওসব বাল্কহেডে কোনো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। সেগুলো যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়লে বন্দর চ্যানেলের জন্য ক্ষতিকর। ওই ধরনের দুর্ঘটনা যদি চ্যানেলের মধ্যখানে হয় সেক্ষেত্রে বন্দরের জাহাজ অপারেশন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, বে-ক্রসিংয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেয় ডিজি শিপিং (নৌ পরিবহন অধিদপ্তর)। নিষেধাজ্ঞাও দেয় তারা। তবে অবৈধ বাল্কহেড চলাচল বন্দর চ্যানেলের জন্য বড় ঝুঁকি। সেজন্য বন্দরের পক্ষ থেকে ডিজি শিপিংকে এ ধরনের নৌযানের অনুমোদন না দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আর অনুমোদনহীন নৌযান কিংবা বাল্কহেড বন্দর চ্যানেল দিয়ে চলাচল করলে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category