• শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

অবৈধ বিয়ে, নাসির-তামিমার বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ ও আইনী বাস্তবতা!

Reporter Name / ৪৩২ Time View
Update : শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
ডিভোর্স না দিয়ে অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগের ধোঁয়া তুলে নাসির-তামিমাকে নিয়ে এর পূর্বেও পক্ষে বিপক্ষে আবেগ, উত্তাপ, আলোচনা সমালোচনার ঢেউ উঠেছিল। অবশেষে আদালতের মামলায় ক্রিকেটার নাসির হোসাইন, তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মি এবং তাম্মির মা সুমি আক্তারের বিরুদ্ধে সমন জারি হওয়ায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনা সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। চায়ের দোকান থেকে টেলিভিশনের টক শো পর্যন্ত চলছে ধর্ম ও আইনী ব্যাখ্যা। আরও কিছুদিন চলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে লেখার শুরুতে মূল ঘটনা জেনে নিই। মামলাটি তদন্ত করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীম তিনজনকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তামিমা রাকিবকে তালাক দেননি। আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোনো নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেওয়ার ফলে তামিমা তাম্মী এখনও রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মীর বিয়ে অবৈধ। স্বামী থাকা অবস্থায় অবৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক দেখিয়ে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তারা দন্ডবিধির ৪৬৮/৪৭১/৪৯৪/৪৯৭/৫০০/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ বিয়েটিতে তামিমার মা সুমি আক্তারকেও দোষী বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মির স্বামী দাবি করে রাকিব হাসান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়েছে ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে জানেন। মামলায় আরও বলা হয়েছে, তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার শিশু কন্যা মানসিক বিপর্যস্ত। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে।
এবার আসি বৈধ আর অবৈধ বিয়ে নিয়ে। আইনগত অবস্থার ভিত্তিতে তিন ধরনের বিয়ে দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলো হলো-বৈধ বিয়ে, অনিয়মিত বিয়ে, অবৈধ বিয়ে। যে বিবাহ মূলতঃ বেআইনী নয়, কিন্তু যাতে কোনও নিয়ম বা বিধান লংঘন করা হয়েছে, তাকে ফাসিদ বিয়ে বা অনিয়মিত বিয়ে বলা হয়। যেমন কোন মুসলমান নারী ইদ্দত পালন করছেন, এরকম সময় তাকে বিবাহ করা হলে তা ফাসিদ বিবাহ বলে গণ্য হবে। ফাসিদ বিবাহের ফলে যে সন্তান জন্মলাভ করবে, তা বৈধ সন্তান বলে গন্য হবে। নাসির-তামিমের মধ্যে যদি অনিয়মিত বিয়ে হয়ে থাকে, তাহলে এ বিয়েটা মোটেই বেআইনী নয়।
এবার আসি দ-বিধির ৪৯৭ ধারা সম্পর্কে। এখানে বলা হয়েছে যে, কোনও ব্যক্তি কোনও মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে এবং ওই মহিলার স্বামীর অনুমতি না থাকলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। কোনো স্ত্রী পরকীয়া করলে যার সঙ্গে পরকীয়া করবে শুধু সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। অথচ স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর কিছুই করার নেই। একইভাবে স্বামী পরকীয়া করলে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে বা যার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত হবে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার পাবেন না। সেকারণ ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের উচ্চ আদালত এ ধারাটি কেন অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন এই আইন স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। মহিলাদের স্বাতন্ত্র্য খর্ব করে। স্বামী কখনই স্ত্রীর প্রভু বা মালিক হতে পারেন না। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে বলে মত দিয়েছেন। মহামান্য লাহোর হাইকোর্ট একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যা পাকিস্তান লিগ্যাল ডিসিশন, ১৯৭৪ সন্নিবেশিত রয়েছে। মহিলা আসামী হতে পারে না। তবে ওই পুরুষটির সাজা দিতে হলে অভিযোগকারীকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, ওই মহিলার সাথে যৌন সঙ্গম করার সময় আসামী জানত অথবা জানার যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল যে, যৌণ সঙ্গমকারী মহিলা অপর কোন ব্যক্তির স্ত্রী।
উল্লেখ থাকে যে, কোন মহিলাকে তার পূর্বের স্বামী তালাক দিয়েছেন এই সরল বিশ্বাসে আসামী বিবাহ করলে তাকে এ ধারার অধীন দোষী সাব্যস্থ করা যায় না। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে মহিলার সাথে যৌণ সঙ্গম করা হয় সে মহিলা ওই সময় বিবাহিত না হলে এই ধারার অধীনে কোন অপরাধ আমলে আনা যায় না। এ ধারা অধীন শাস্তি দিতে হলে বিবাহের বিষয়টি যথাযথভাবে প্রমাণ করতে হয়। তবে মহামান্য লাহোর হাইকোর্ট বলেছেন, অবিবাহিত পুরুষ ও স্ত্রীলোক যদি দীর্ঘদিন ধরে একত্রে বসবাস করে তাহলে বলা যাবে না যে, তারা ব্যাভিচারের অপরাধ করেছে। (পিএলডি ১৯৬২, ৫৫৮)। যেহেতু সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারামতে কোন ঘটনা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর। গোপাল চন্দ্র বনাম লাসমত দাসী মামলা যা ৩৪ ডিএলআর, ১৪৫ পৃষ্টায় উল্লেখ রয়েছে যে, বিচার্য বিষয় সম্পর্কে যে পক্ষ কোন ঘটনার অস্তিত্বের দাবী করে সে পক্ষই তা প্রমাণ করবে।
এবার আসি তালাক বিষয়ে। যেকোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, আপনি তালাক দিতে চাইলে, তালাকের নোটিশ নিজেই তৈরী করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাকে তালাক দিচ্ছেন তিনি যদি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাস করেন, তাহলে সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে উক্ত তালাকের নোটিশ দিতে হবে। আর তিনি যদি পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। ওই একই নোটিশের কপি যাকে তালাক দিচ্ছেন অর্থাৎ তালাক গ্রহীতাকে পাঠাতে হবে। অনেকেই মনে করেন তালাকের নোটিশ কাজির মাধ্যমে না পাঠালে তা কার্যকর হয় না। এটি ভুল ধারনা। তালাকের নোটিশ স্বামী বা স্ত্রী নিজে লিখিত আকারে পাঠিয়ে দিলেই হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে তালাকের নোটিশ পাঠাতে কাজীর কাছে যেতে হবে-এমন কোন কথা লেখা নেই। আবার ১৯৬১ এর ৭(১) নং ধারা অনুযায়ী স্বামী যদি চেয়ারম্যান এবং স্ত্রীকে নোটিশ প্রদান না করে তাহলে ৭ (২) ধারা অনুযায়ী স্বামী শাস্তি পাবে ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। উক্ত তালাক কার্যকর হবে। আবার তালাক রেজিস্ট্রি আইনে বাধ্যতামূলক নয়। বিয়ে রেজিস্ট্রি যেমন বাধ্যতামূলক এবং বিয়ে রেজিষ্ট্রি না করলে আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তালাক রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে এরকম বাধ্যবাধকতা কিংবা কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। আমি এতক্ষণ যা কিছু উপস্থাপন করেছি, তা আইনের কথা মাত্র। তাহলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কিভাবে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করলেন যে, তালাক না দিয়েই তামিমা সুলতানা তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নাসির-তামিমার বিয়ে বৈধ, না অবৈধ বিজ্ঞ পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category